সম্রাট আকবরের বাংলা বিজয় বর্ণনা কর
সম্রাট আকবরের বাংলা বিজয়ের ফলাফল আলোচনা কর |
সম্রাট আকবরের বাংলা বিজয়ের ফলাফল আলোচনা কর - সম্রাট আকবরের বাংলা বিজয় বর্ণনা কর
- অথবা, সম্রাট আকবরের বাংলা বিজয়ের ফলাফল সংক্ষেপে লিখ।
উত্তর : ভূমিকা : ভারতবর্ষের ইতিহাসে সম্রাট আকবর ছিলেন রাজ্য বিস্তারে অপ্রতিদ্বন্দ্বী সম্রাট। সাম্রাজ্যবাদী শাসক আকবর উপলব্ধি করেন যে, ভারতবর্ষের একচ্ছত্র অধিপতি হতে হলে সমরাভিযানের বিকল্প নেই।
তাই তিনি তার রাজত্বকালের চল্লিশ ছর সাম্রাজ্য বিস্তারে ব্যয় করেন। ঐতিহাসিক আবুল ফজল বলেন, মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে বাংলা বিজয় এক অবিস্মরণীয় ঘটনা।
১৫৫৬ সালে সিংহাসনে আরোহণ করে তিনি সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করেন। এক পর্যায়ে ১৫৭৬ সালে বাংলা জয় করে মুঘল সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।
নিম্নে সম্রাট আকবরের বাংলা বিজয়ের ফলাফল তুলে ধরা হলো :
→ সম্রাট আকবরের বাংলা বিজয়ের ফলাফল : নিম্নে সম্রাট আকবরের বাংলা বিজয়ের ফলাফল আলোচনা করা হলো :
১. উত্তর ভারতের সাথে বাংলার সম্পর্ক পুনঃস্থাপন : সম্রাট আকবর কর্তৃক বাংলা বিজয়ের ফলে উত্তর ভারতের সাথে বাংলার সম্পর্ক পুনঃস্থাপিত হয়।
এ সম্পর্ক স্থাপনের ফলে উত্তর ভারতের মাধ্যমে মধ্য এশিয়া ও বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে বাংলার যোগাযোগ স্থাপিত হয়। এর ফলে বাইরের জগতের সাথে বাংলার পরিচয় ঘটতে থাকে।
২. সামাজিক কুসংস্কার দূরীভূত : সম্রাট আকবরের বাংলা বিজয়ের ফলে বহু সামাজিক কুসংস্কার দূর হয়। যেমন- বিধবা বিবাহ প্রচলন, সতীদাহ প্রথার বিলোপ সাধন এবং বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধকরণ প্রভৃতি । যার ফলে সমাজে স্থিতিশীলতা ফিরে আসে ।
৩. বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন : সম্রাট আকবরের বাংলা বিজয়ের ফলে মুঘল ও বাঙালিদের মধ্যে একের পর এক বৈবাহিক ক্ষেত্রে নতুন সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এর ফলে বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে মুঘলদের রীতি-নীতির প্রচলন ঘটতে থাকে।
৪. সাংস্কৃতিক পরিবর্তন : আকবরের বাংলা বিজয়ের ফলে ভারতে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। বহিঃশত্রুর আক্রমণ ও অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা দূরীভূত করে বাংলায় নিজ শিল্প ও সংস্কৃতি গড়ে তুলতে মনোনিবেশ করে।
অনেক মুঘল সেনাপতি ও কর্মচারী স্থায়ীভাবে বাংলায় বসবাস শুরু করায় মুঘলদের সাথে বাঙালিদের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক নতুন আকার ধারণ করে ।
৫. ব্যবসায়-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ : মুঘলদের বাংলা বিজয়ের ফলে ব্যবসায়-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটতে থাকে। ফলে বহিঃশক্তির আক্রমণের আশঙ্কা দূরীভূত হয় এবং অভ্যন্তরীণ শান্তি -শৃঙ্খলা নিশ্চিত হয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হয়।
৬. অর্থনৈতিক পরিবর্তন : সম্রাট আকবরের বাংলা বিজয়ের ফলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করে। উত্তর ভারত, মধ্য এশিয়া ও পশ্চিম এশিয়ার সাথে বাংলার ব্যাপক বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
পর্তুগিজ ছাড়াও বাংলায় এ সময় অন্য ইউরোপীয় বণিকগণ আগমন করে বাংলার ব্যবসা-বাণিজ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ফলে বাংলা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির চরম শীর্ষে আরোহণ করে ।
৭. নতুন অধ্যায়ের সূচনা : মুঘলদের বাংলা বিজয়ের ফলে বাংলায় মুঘল স্থাপত্য, শিল্পনীতি, আদব-কায়দা, ফারসি ভাষা ও শিক্ষা-দীক্ষা প্রভৃতির ব্যাপক প্রচলন ঘটে। যা বাংলাকে নতুন পরিচয়ে পরিচিত হতে সাহায্য করে।
৮. বাংলার রাজধানী হিসেবে ঢাকার গুরুত্ব : সম্রাট আকবরের বাংলা বিজয়ের গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল হলো ঢাকায় রাজধানী স্থানান্তর। এর ফলে বাংলার রাজধানী হিসেবে ঢাকার গুরুত্ব বহুগুণে বৃদ্ধি পায় এবং শতকালব্যাপি একটি সমৃদ্ধ শহর হিসেবে পরিচিত লাভ করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সম্রাট আকবর কর্তৃক বাংলা বিজয় বাংলার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় সংযোজন করে। এর মাধ্যমে বাংলার স্বাধীনতা বিলুপ্ত হয়।
বাংলার মুঘল শাসন শুরু হয় এবং এদেশে মুঘল সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। এভাবে বাংলার মতো আরো অনেক রাজ্য নিজ রাজ্যভুক্ত করেন। স্টানলি লেনপুল বলেন, “সাম্রাজ্যবাদী শাসকদের মধ্যে আকবর ছিলেন সর্বাপেক্ষা মহান।”