সামরিক ক্ষেত্রে হুসেন শাহের কৃতিত্ব সম্পর্কে যা জান লিখ

সামরিক ক্ষেত্রে হুসেন শাহের কৃতিত্ব সম্পর্কে যা জান লিখ

সামরিক ক্ষেত্রে হুসেন শাহের কৃতিত্ব সম্পর্কে যা জান লিখ

• অথবা, সামরিক ক্ষেত্রে হুসেন শাহের কৃতিত্ব বর্ণনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : “নৃপতি হলেন শাহ হলো মহামতি,পঞ্চম গৌড়েত যার পরম সুখ্যাতি।" কবীন্দ্র পরমেশ্বর তার মহাভারতে হুসেন শাহ সম্পর্কে প্রশস্তি রচনা করেছেন। 

কবীন্দ্র পরমেশ্বর হুসেন শাহকে কৃষ্ণের অবতার বলেও আখ্যায়িত করেছেন। হুসেন শাহের শাসনামলে শাসন ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হয়েছিল। শাসন ব্যবস্থায় উদারতার ফলে তিনি সকল ধর্মের মানুষের কাছে সমভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে।

→ হুসেন শাহের সামরিক কৃতিত্ব : হুসেন শাহ তার শাসনকালে অনেকগুলো সামরিক অভিযান করেছিলেন। সুদীর্ঘ রাজত্বকালে তিনি সামরিক ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাফল্য লাভ করেন। 

নিম্নে তার সামরিক কৃতিত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

১. সিকান্দার লোদীর সাথে সংঘর্ষ : ১৪৯৫ খ্রিষ্টাব্দে নিল্পির সুলতান সিকান্দার লোদীর সঙ্গে হুসেন শাহের সংঘর্ষ হয়। বিহারের রাষ্ট্র নামক জায়গায় দুই সুলতানের সৈন্য পরস্পরের সম্মুখীন হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ না করে সন্ধি স্থাপিত হয়।

২. কামতাপুর-কামরূপ অভিযান : সিংহাসনে আরোহণের এক বছরের মধ্যেই আলাউদ্দিন হুসেন শাহ উত্তরবঙ্গের কামতাপুর রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযান করেন। 

কামতাপুর রাজ্য আধুনিক কুচবিহার অঞ্চলে অবস্থিত ছিল। হুসেন শাহ যে এই অভিযানে সাফল্য লাভ করেন, এ সম্বন্ধে নানা সূত্রেই লেখা আছে। 

হুসেন শাহের সময়ে এই রাজ্যের রাজা খুব প্রতিপত্তিশালী হয়ে উঠেছিলেন। উত্তরবঙ্গের এক বিরাট অঞ্চল এবং আসামের কামরূপ অঞ্চলের তিনি একচ্ছত্র অধিপতি ছিলেন।

৩. আসাম অভিযান : কামরূপের পূর্ব ও দক্ষিণে প্রাচীন আসাম বা অহোম রাজ্য অবস্থিত ছিল। এখানকার লোকেরা বাইরের কোন লোককে তাদের দেশে প্রবেশ করতে দিত না। 

হুসেন শাহ আসাম রাজ্য আক্রমণ করে তার সমতল অঞ্চল দখল করেন। ঐ রাজ্যের রাজা পার্বত্য অঞ্চলে আশ্রয় নেন এবং বর্ষাকাল আগত হলে প্রতিআক্রমণ করে হুসেন শাহের লোকদের বিজ্ঞান্ত করে নিজের হত অঞ্চলগুলি পুনরাধিকার করেন।

৪. উড়িষ্যার সাথে যুদ্ধ : উড়িষ্যার রাজা ছিলেন প্রতাপ রুদ্র। বিভিন্ন সূত্রে এ যুদ্ধ সম্পর্কে জানা যায়। হুসেন শাহ দীর্ঘকালব্যাপী উড়িষ্যার সাথে যুদ্ধ করেন। উড়িষ্যার সাথে যুদ্ধ করে তিনি উড়িষ্যাকে কর প্রদানে বাধ্য করেন বলে জানা যায়।

৫. ত্রিপুরার সাথে যুদ্ধ : হুসেন শাহের সাথে ত্রিপুরা রাজ্য ধনমানিক্যের সংঘর্ষ হয়েছিল। 'রাজনামাতে এ যুদ্ধ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। ত্রিপুরার সাথে হুসেন শাহ কয়েকটি পর্যায়ে যুদ্ধ করেছিলেন বলে জানা যায়।

৬. চট্টগ্রামের অধিকার লাভ : চট্টগ্রামের অধিকার নিয়ে হুসেন শাহ আরাকান ও ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিলেন। তবে তিনি তাদের বিরুদ্ধে সফল হয়েছিলেন বলে জানা যায়। আরাকান রাজকে এ যুদ্ধে পরাজিত করে বাংলার রাজ্যে পরিণত করা হয়।

৭. ত্রিহুত ও বিহারে অভিযান : হুসেন শাহ ত্রিহুত ও বিহারে অভিযান প্রেরণ করেছিলেন। তিনি ত্রিহুতের কতকাংশে জয় করেছিলেন। হুসেন শাহ বিহারের অধিকাংশ নিজের রাজ্যভুক্ত করেন। এসব অঞ্চল নিয়ে তিনি সিকান্দার লোদীর সাথে সন্ধি স্থাপন করেছিলেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, হুসেন শাহ তার সুদীর্ঘ রাজত্বকালে সামরিক ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছিলেন। দীর্ঘ সাফল্যজনক রাজত্বের পর আলাউদ্দিন হুসেন শাহের মৃত্যু হয়। ১৪৯৩-১৫১৯ পর্যন্ত দীর্ঘ ২৬ বছর তিনি রাজত্ব করেছিলেন। তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল বলে জানা যায় ।