রামপালকে পাল বংশের শেষ মুকুটমণি বলা হয় কেন
রামপালকে পালবংশের শেষ মুকুটমণি বলা হয় কেন |
রামপালকে পালবংশের শেষ মুকুটমণি বলা হয় কেন
- অথবা, রামপালকে পালবংশের শেষ গৌৱৰ বলা হয় কেন?
- অথবা, রামপালকে পালবংশের শেষ মুকুটমণি' বলার কারণ কি?
উত্তর : ভূমিকা : খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতকের মধ্যভাগে পালবংশের প্রতিষ্ঠা বাংলর ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করে। পাল রাজবংশের চারশ বছরের শাসন ইতিহাসের ক্রমধারায় যে কজন শাসক স্বমহিমায় ভাস্বর হয়ে আছেন রামপাল তাদের মধ্যে অন্যতম। রামপালের শাসন আমলেই পালবংশের গৌরব শিখা শেষবারের মতো জ্বলে উঠে।
→ রামপালকে পালবংশের শেষ মুকুটমণি/ শেষ গৌরব বলার কারণ : রামপালকে পালবংশের শেষ মুকুটমণি বা শেষ গৌরব বলার কারণ নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
১. জনকভূ বা পিতৃভূমি (বরেন্দ্র) পুনরুদ্ধার : রামপালের রাজত্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে পালদের জনকভূ বা পিতৃভূমি বরেন্দ্রের পুণরুদ্ধার। বরেন্দ্র উদ্ধারকে রামপালের জীবনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য বললেও বেশি বলা হবে না।
সিংহাসনে আরোহণের পর তার প্রথম ও প্রধান কাজ ছিল বরেন্দ্র পুনরুদ্ধার। রামপাল যখন বরেন্দ্র পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট হন তখন বরেন্দ্রের রাজা ছিল দিব্যের পুত্র ভীম।
বরেন্দ্র পুনরুদ্ধারের যুদ্ধের কাহিনী বর্ণিত রয়েছে রামচরিত কাব্যের নয়টি শ্লোকে। খুব সম্ভবত রামপাল দক্ষিণবঙ্গ থেকে বরেন্দ্র আক্রমণ করেন। আর এভাবেই ভীমের জীবনাবসানের মধ্য দিয়ে বরেন্দ্র পুনরায় পাল সাম্রাজ্যভুক্ত হয়।
২. কামরূপ জয় : বরেন্দ্র পুনরুদ্ধার করে রামপাল নিকটবর্তী রাজ্যসমূহ জয় করে পাল সাম্রাজ্যের লুপ্ত গৌরব পুণরুদ্ধার করতে সচেষ্ট হন।
আর এরই ধারাবাহিকতায় কামরূপেও পাল শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। কামরূপ বা কামরূপ রাজ্যের অংশবিশেষ যে পাল সাম্রাজ্যভুক্ত হয়েছিল তার প্রমাণ বৈদ্যবের কমৌলি তাম্রশাসনে পাওয়া যায়।
৩. রাজ্যে শাস্তিশৃঙ্খলা পুনঃস্থাপন : বহুদিন কৈবর্ত শাসনে থাকার ফলে পালদের পিতৃভূমিতে বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি বিরাজ করছিল। কৈবর্তদের অত্যাচারে উত্তর বাংলার জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল।
তাই বরেন্দ্র উদ্ধারের পরেই সেখানে শান্তিশৃঙ্খলা পুনঃস্থাপনের জন্য তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তার গৃহীত পদক্ষেপের ফলে রাজ্যে অত্যন্ত দ্রুত শান্তিশৃঙ্খলা ফিরে আসে।"
৪. নতুন রাজধানী স্থাপন : রামপাল তার রাজত্বকালে যেসব কৃতিত্বপূর্ণ কাজ করেছিলেন, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নতুন রাজধানী স্থাপন ৷ রাজ্যের শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পর তিনি রামাবতী নামক নতুন একটি রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন।
৫. বাংলার গৌরব বৃদ্ধি : রামপাল তার উদ্যম ও অধ্যবসায়ের দ্বারা বরেন্দ্র পুনরাধিকার করেন এবং এরপরে তিনি সমগ্র বাংলায় তার প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা করেন তিনি কামরূপ ও উৎকল জয় করে বাংলার গৌরব আরও বৃদ্ধি করেন।
তার বাহুবলেই খণ্ডবিখণ্ড বাংলায় আবার একতা ফিরে আসে ও সুদৃঢ় রাজশক্তিতে বাঙালি আবার সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা স্বপ্ন দেখে।
৬. পালবংশের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার : পালদের পিতৃভূমি (বরেন্দ্র) বেদখল হওয়াটা যে পালদের জন্য কতটা অপমানকর তা উপলব্ধি করেছিলেন বলেই রামপাল তার সর্বশক্তি ঢেলে দিয়েছিলেন পালবংশের হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য। তার শাসনামলেই শেষবারের মতো পাল রাজবংশের গৌরব শিখা জ্বলে উঠেছিল ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, নিভে যাওয়ার আগে প্রদীপ যেমন উজ্জ্বল হয়ে উঠে, রামপালের রাজত্বকালে পাল রাজ্যের কীর্তি শিখাও তেমনি শেষবারের মতো জ্বলে উঠে।
পালবংশের শেষ শ্রেষ্ঠ রাজা হিসেবে রামপালকেই গণ্য করা হয়। রামপালের রাজত্বকাল নিঃসন্দেহে সাফল্যপূর্ণ ছিল। উত্তর বাংলা পুনরায় পাল সাম্রাজ্যভুক্ত করে রামপাল শৌর্যবীর্য ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন।
এ কৃতিত্বপূর্ণ কার্যের জন্যই তিনি পালবংশের ইতিহাসে বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছেন। তাই রামপালকে পালবংশের শেষ মুকুটমণি বলা হয়।