পরবর্তী ইলিয়াস শাহী সুলতান কে । পরবর্তী ইলিয়াস শাহী সুলতানদের পরিচয় দাও
পরবর্তী ইলিয়াস শাহী সুলতান কে । পরবর্তী ইলিয়াস শাহী সুলতানদের পরিচয় দাও |
পরবর্তী ইলিয়াস শাহী সুলতান কে । পরবর্তী ইলিয়াস শাহী সুলতানদের পরিচয় দাও
উত্তর : ভূমিকা : ইলিয়াস শাহী বংশের আবির্ভাব বাংলার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেন। ইলিয়াস শাহী বংশ বাংলা বা বাংলাদেশে প্রায় ১১ বছর শাসন পরিচালনা করেন।
প্রথমে পর্যায়ে ইলিয়াস শাহ থেকে শুরু করে আলাউদ্দিন ফিরুজ শাহ পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহ থেকে জালালউদ্দিন ফতেহ শাহের রাজত্ব পর্যন্ত ইলিয়াস শাহী বংশের শাসন বাংলাদেশের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।
→ পরবর্তী ইলিয়াস শাহী বংশের সুলতানদের পরিচয় : নিম্নে পরবর্তী ইলিয়াস শাহী বংশের সুলতানদের পরিচয় আলোচনা করা হলো-
১. নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহ (১৪৪২-১৪৫৯) : ১৪৪২ সালে শামসুদ্দিন আহম্মদ শাহের মৃত্যুর নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহ বাংলার সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি ন্যায়পরায়ণতা ও উদারতার সাথে রাজ্য শাসন করেছিলেন।
তার সময় প্রজারা সুখে শান্তিতে বসবাস করতো। তিনি স্থাপত্যশিল্পের প্রতি যথেষ্ট অনুরাগী ছিলেন। তার সময়ে বাংলা ভাষা সাহিত্যের ব্যাপক উৎকর্ষ সাধিত হয়েছিল।
২. রুকনউদ্দিন বরবক শাহ (১৪৫৯-১৪৭৪) : নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহের মৃত্যুর পর তার রুকনউদ্দিন ববরক শাহ ১৪৫৯ সালে বাংলার সিংহাসনে আরোহণ করেন।
সিংহাসনে আরোহণের পূর্বে পিতার রাজত্বকালে তিনি সাতগাঁও এর শাসনকর্তা হিসেবে কর্মদক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। সুলতান হিসেবেও তিনি অনুরূপ কৃতিত্বের পরিচয় দেন।
রুকনউদ্দিন বরবক শাহের সুদীর্ঘ রাজত্বকাল বাংলাদেশের মুসলিম শাসনের ইতিহাসে একটি বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছেন।
৩. দ্বিতীয় শামসউদ্দিন ইউসুফ শাহ (১৪৭৪-৮১) : দ্বিতীয় শামসউদ্দিন ইউসুফ শাহ পিতা রুকনউদ্দিন বরবক শাহের মৃত্যুর পর ১৪৭৪ সালে বাংলার সিংহাসনে আরোহণ করেন।
তিনি কয়েক বছর পিতার সাথে যুক্তভাবে রাজত্ব করেছিলেন। ইউসুফ শাহের ১৪৮৫ সাল পর্যন্ত মুদ্রা ও শিলালিপি পাওয়া গিয়েছে।
তিনি মাত্র ৬ বছর শাসন করেছিলেন। শামসউদ্দিন ইউসুফ শাহ একজন উচ্চ শিক্ষিত ও ধর্মপ্রাণ সুলতান ছিলেন।
তারকত-ই আকবরির ভাষায় তিনি ছিলেন ধৈর্যশীল, প্রজাহিতৈষী ও ধর্মনিষ্ঠ বাদশাহ। ফিরিশতা লিখেছেন ইউসুফ শাহ ছিলেন বিদ্বান, ধার্মিক ও কৌশলী নরপতি
৪. দ্বিতীয় সিস্কান্দার শাহ (১৪৮১) : ১৪৮১ সালে ইউসুফ শাহের মৃত্যুর পর তার পুত্র দ্বিতীয় সিকান্দার শাহ বাংলার সিংহাসনে- আরোহণ করেন। তিনি অযোগ্য শাসক ছিলেন। তাছাড়া মস্তিস্ক বিকৃতির জন্য অল্পদিনের মধ্যে ক্ষমতা থেকে অপসারিত হন।
৫. জালালউদ্দিন ফতেহ শাহ (১৪৮১-১৪৮৪) : সিকান্দার শাহের অপসারণের পর ১৪৮১ সালে জালালউদ্দিন ফতেহ বাংলার সিংহাসনে বসেন। তার সময়ে হাবশিরা খুবই শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
জালালউদ্দিন ফতেহ শাহকে হত্যা করে বরবক শাহ হাবশী সিংহাসনে বসেন। ফতেহ শাহ মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে ইলিয়াস শাহী বংশের পতন ঘটে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সমগ্র বাংলাব্যাপী মুসলিম রাজ্য অক্ষুণ্ণ রেখে স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা লাভ করে।
শিল্প সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা করে ইলিয়াস শাহী শাসকগণ বাংলার মুসলিম রাজ্যকে এক নতুন রূপদান করতে সক্ষম হয়েছিল। নিঃসন্দেহ তাদের শাসনকাল বাংলার ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা করেছিল।