পালদের সাংস্কৃতিক অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর
পালদের সাংস্কৃতিক অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর |
পালদের সাংস্কৃতিক অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর
- অথবা, পালদের সাংস্কৃতিক অবস্থা কেমন ছিল?
উত্তর : ভূমিকা : পাল যুগের চারশত বছরের প্রাচীন বাংলার সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রগতি ঘটে। ড.মজুমদারের মতে "বাংলায় পাল সাম্রাজ্য বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গেই বাঙলির নতুন জাতীয় জীবনের সূত্রপাত হয়।
পালবংশের বহুমুখী কৃতিত্বও অনস্বীকার্য। পাল শাসনামলে সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য, আসি বাংলা ভাষার বিকাশ, বাংলায় বৌদ্ধ ধর্মের বিস্তারসহ নানান ক্ষেত্রে ব্যাপক বিবর্তন দেখা দেয়।
[] পালদের সাংস্কৃতিক অবস্থা : বাংলায় পালযুগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে ব্যাপক এক অরাজকতা বিরাজ করছিল। পাল শাসকেরা তার অবসান ঘটান। সাম্রাজ্যে সংহতি স্থাপনের পরেই তারা দেশ গঠন ও সাংস্কৃতিক শ্রীবৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দেন।
ধর্মপালের রাজত্বকালে শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিশেষ বিকাশ ঘটে। নিম্নে পাল আমলে বাংলার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যে শ্রীবৃদ্ধি হয়েছিল তা তুলে ধরা হলো :
১. বাংলা ভাষার উদ্ভব ও বিকাশ : পাল যুগে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের নবজনা হয়। এর আগে লোকের মুখের ভাষা ছিল মাগধি ভাষা। অনেকের মতে প্রকৃতির সঙ্গে অপভ্রংশ ভাষার মিশ্রণে বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়। সুতরাং পাল যুগে বাঙ্গলি সংস্কৃতির নবযুগের শুরু হয়।
২. বৌদ্ধ সংস্কৃত ভাষা : পাল যুগে বাংলা তার রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে নিজস্ব সংস্কৃত প্রচলন করে। সংস্কৃত সাহিত্যে বাংলায় অলংকার বহুল গৌড় রীতির উদ্ভব হয়। পাল যুগে বৌদ্ধরা বিশুদ্ধ সংস্কৃতের হলে প্রাকৃত ভাষা বহুল সংস্কৃত ব্যবহার করতেন।
৩. পাল যুগের বিশ্ববিদ্যালয় : পাল যুগের সাংস্কৃতিক বিকাশের অঙ্গবিধায় বাংলা তথা প্রাচীন ভারতে অনেক উচ্চশিক্ষা কেন্দ্র অর্থাৎ বৌদ্ধধর্ম কেন্দ্রিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়।
পাল রাজারা ভুবন বিখ্যাত নালন্দা বিহারের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। বুদ্ধজ্ঞান পান অতীশ দীপঙ্কর প্রমুখ ছিলেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।
৪. পাল যুগের চিত্রকলা : পাল যুগের চিত্র কলার নিদর্শন রুরাল এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বেঙ্গল, কেমীজ সংগ্রহ শালায় দেখতে পাওয়া যায়।
বজ্রযান ও ভদ্রযানের ধর্মমতকে বিষয়বস্তু করে অধিকাংশ চিত্র আঁকা হয়েছিল। অনেকের মধ্যে এগুলো বাংলাদেশে অঙ্কিত হয় নি বরং সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে তা চিত্রিত হয়েছেল।
৫. গণ সংস্কৃতি : পাশা, দাবা খেলা, নাচ প্রভৃতির মাধ্যমে তৎকালীন বাঙালি চিত্তবিনোদন করতো। লোকে পায়ে হেঁটে, পালকি বা ঘোড়া বা হাতিতে চড়ে যাতায়াত করতো।
তারা সোনা ও কুসুরে মধ্যে পার্থক্য করতে জানত না। তবে পাল আমলে সাধারণ লোকেরা এতই গরিব ছিল যে, তাদের পক্ষে বিলাসিতা ও ইন্দ্রিয়শক্তির জন্য ব্যয়বহুল সাধ্যের অতীত ব্যাপার ছিল।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পাল যুগের পূর্বে প্রাচীন বাংলার যে আবহমান হিন্দুধর্মের পটভূমি ছিল তার উপরই গুপ্ত যুগের জীবন সংস্কৃতি প্রবহমান ছিল।
সবশেষে, পাল আমলে প্রাচীন বাংলার সংস্কৃতি তথা শিল্প সাহিত্য ও জীবনাচরণে এক প্রবৃদ্ধিমূলক সংবৃদ্ধি ঘটেছিল, ইতিহাসে যা ইতিবাচক অর্থে অমর হয়ে আছে।