পাল যুগের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থার বর্ণনা দাও
পাল যুগের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থার বর্ণনা দাও |
পাল যুগের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থার বর্ণনা দাও
- অথবা, পাল যুগে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা কেমন ছিল?
উত্তর : ভূমিকা : পাল যুগে বাংলার অবস্থা অনেক ভালো ছিল অর্থনৈতিকভাবে বাংলা অনেকটা এগিয়েছিল। এজন্য বলা হয় পাল রাজাদের ইতিহাস গৌরবের ইতিহাস।
সমগ্র বাংলাকে এক শসনের অধীনে এনে পাল রাজারা রাজনৈতিক ভাবে প্রভাব প্রতিপত্তি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল এবং পাল যুগের সংস্কৃতিক সমৃদ্ধি বাংলাকে উৎকর্ষতা দান করেছিল।
→ পাল যুগের রাজনৈতিক অবস্থা : গোপাল কতৃক প্রতিষ্ঠিত পালবংশের রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো :
১. রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা : পাল যুগের শাসনব্যবস্থায় প্রধান রাজা। রাজার নির্দেশই ছিল আইন। তার ক্ষমতার উপর কারো ক্ষমতা ছিল না। তিনি শাসন ক্ষমতার কর্ণধার ছিলেন তাকে সহায়তা করতো মন্ত্রীরা।
২. সার্বভৌম রাজশক্তি প্রতিষ্ঠা : পাল রাজারা স্বাধীনভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করতো আর পাল যুগেই সব প্রথম সার্বভৌম রাজশক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। পাল রাজাদের পরমেশ্বর পরমভট্টারক, মহারাজাধিরাজ উপাধি ধারণই প্রমাণ করে তাদের সার্বভৌম শক্তির কথা।
৩. কেন্দ্রীয় শাসন : পাল সাম্রাজ্য পরিচালিত হত কেন্দ্রিয়ভাবে। কেন্দ্রিয়ভাবে পরিচালিত পাল সাম্রাজ্যর সম্রাটকে সহায়তা করত রাজ্যর মন্ত্রিরা।
কেন্দ্রিয় শাসনের অধীনে প্রদেশিক শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হতো। পালদের কেন্দ্রী শাসনব্যবস্থা পরবর্তী রাজ বংশরা আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছিল ।
৪. স্বতন্ত্রবোধ জাগ্রত : পাল রাজারা ছিল স্বাধীন তাদের উপর বাধ্যবাধকতা ছিল না। তারা স্বাধীনভাবে রাজ্য পরিচালনা করতে পারত। তাদের ছিল স্বতন্ত্র ভৌগোলিক সীমা রেখা।
৫. অন্তর্জাতিক গৌরব অর্জন : পাল রাজারা আন্তর্জাতিক অবদানে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করে। দেবপাল তার ক্ষমতা ৩ প্রতিপত্তি আন্তর্জাতিক অবদানে ব্যাপক প্রভাব ফেলে ভিন্ন পর্যটক পালরাজাদের প্রশংসা করেছেন।
পাল রাজাদের বৌদ্ধ মঠে দেশ- বিদেশের ছাত্ররা আসত এবং শিক্ষা নিত যা তাদের আন্তর্জাতিক অবদানে পরিচিতি এনে দেয়।
পাল যুগের সাংস্কৃতিক অবস্থা : পাল যুগের সাংস্কৃতি ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছিল নিচে পাল সংস্কৃতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. বাংলা ভাষার শিক্ষা : পাল যুগের আগে লোকের মুখে ছিল | মাগথী প্রকৃতির ভাষা। পাল যুগে এসে বাংলা ভাষার বিকাশ হতে থাকে। পাল যুগ থেকেই বাংলা ভাষা তার নিজস্ব রূপ পেতে থাকে। বাংলা ভাষার নব উদ্ভব ও বিকাশ পাল যুগ থেকেই শুরু হয়।
২. শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিকাশ : পাল যুগে শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশ হয়। পাল সম্রাটরা শিক্ষাকে প্রাধান্য দিত শিক্ষা ও ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র তারা চালু করে।
তারা অনেক মঠ নির্মাণ করে এমনকি তারা বৌদ্ধধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা দান করতো। নিজেরাও শিক্ষিত অন্যকেও শিক্ষার জন্য উৎসাহ দিত।
৩. বৌদ্ধধর্মের প্রসার : পালরা ছিল মূলত বৌদ্ধধর্মের অনুসারী। তারা বৌদ্ধধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা দান করেন। হর্ষবর্ধনের সময় যে বৌদ্ধধর্ম অনেকটা স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। পালরা সে ধর্মকে পৃষ্ঠপোষকতা দান করে এবং প্রকাশের জন্য কাজ করে।
৪. শিল্পকলার বিকাশ : পাল যুগে শিল্প কলার বিকাশ ব্যাপক পর্যায় লাভ করে শিল্প কলার ক্ষেত্রে তাদের ব্যাপক অভিযাত্রার পরিচয় পাওয়া যায় যেমন-
(ক) স্থাপত্যশিল্পের বিকাশ : পাল রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলায় নতুন করে স্থাপত্যশিল্পের নবযাত্রা হয়। তাদের বৌদ্ধ মন্দির ও অট্টালিকাগুলো স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। সে সময় পাহাড়পুরের সোমপুর বিহার স্থাপত্যশিল্পের উৎকর্ষতার পরিচয় দেয়।
(খ) ভাস্কর্যশিল্প : যে সময় পালরা ভাস্কর্যশিল্পের ব্যাপক বিস্তার ঘটান। ভাস্করদের নিপুণ হাতের ছোয়ায় পালযুগের ভাস্কর্য শিল্পের কথা বিদ্যাত হতে থাকে।
(গ) চিত্রশিল্পের বিকাশ : পাল যুগে চিত্রশিল্পের উৎকর্ষতার | পরিচয় পাওয়া যায়। সে সময় লতা-পাতা দ্বারা নকশা করা হতো মন্দিরে, পাতিলে, স্মৃতিতে পালরা চিত্রশিল্পের বিষদ চিত্রকার্যের পচিয় পাওয়া যায়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পাল যুগের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতি নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা সে সময় ছিল। না হলে আরো এগিয়ে যেত পাল যুগ। আর সংস্কৃতিতে তাদের অবদান অনস্বীকার্য।