মৌখরি ও কামরূপের পরিচয় দাও। মৌখরি ও কামরূপ সম্পর্কে কি জান লিখ
মৌখরি ও কামরূপের পরিচয় দাও। মৌখরি ও কামরূপ সম্পর্কে কি জান লিখ
উত্তর : ভূমিকা : প্রাচীন ভারতে শক্তিশালী রাজবংশ ছিল গুপ্ত রাজবংশ। এই রাজবংশের পতনের পর মৌখরি ও কামরূপ নামে শক্তিশালী দুটি রাজ্যের উত্থান হয়। দুই রাজ্যই ছিল শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান ।
(ক) মৌখরি : মৌখরি রাজবংশ প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে সুপ্রাচীন একটি রাজ্য। সর্বপ্রথম পাণিনি এর বর্ণনা থেকে এ বংশ সম্পর্কে জানা যায়। মৌর্য যুগেও এরা খুবই শক্তিশালী ছিলেন।
জেনারেল কানিংহাম এর আবিষ্কৃত একটি মৃতফলক থেকে জানা যায় যে, মৌখরিদের আদি আবাস ছিল দক্ষিণ বিহারে। তারপর তারা উত্তর প্রদেশের কনৌজে চলে আসে। মৌখরি বংশ দুটি শাখায় বিভক্ত ।
১. মৌখরি বংশের প্রতিষ্ঠাতা : মৌখরি বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন হরিবর্মণ। শশাঙ্কের সাথে পরবর্তী গুপ্তদের যুদ্ধ হয় এবং শশাঙ্ক যুদ্ধে জয়ী হন । ফলে গৌড়ে তিনি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।
২. মৌখরিদের সাথে মালবরাজ দেবগুপ্তের সংঘর্ষ : এ দ্বন্দ্বে মৌখরিরাজ গ্রহবর্মণ মালবরাজ দেবগুপ্তের কাছে পরাজিত হন। ফলে কনৌজ সাময়িকভাবে মৌখরিদের হাত ছাড়া হয়।
থানেশ্বর রাজা হর্ষবর্ধন মালবরাজ এবং গৌড়রাজ শশাঙ্কের কাজ থেকে কনৌজ আবার ছিনিয়ে নেন। এ কনৌজে ছিল মৌখরি রাজবংশের অবস্থান ।
(খ) কামরূপ : কামরূপ রাজ্য প্রাচীন বাংলার শক্তিশালী রাজ্য ছিল। গুপ্ত সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সুযোগে কামরূপের রাজা বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং নিজে মহারাজাধিরাজ্য উপাধি গ্রহণ করেন এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্য (ঢাকা) এবং সুরমা উপত্যকা (সিলেট) অধিকার করেন।
কামরূপের এই রাজার নাম ছিল ভূতিবর্মণ। ভূতিবর্ষণের পর তার পুত্র সুস্থিরবর্মণ কামরূপের সিংহাসনে বসেন। মহাসেন গুপ্ত কর্তৃক আক্রমণের স্বীকার হয়েও সুস্থিরবর্মন নিজের সিংহাসন রক্ষা করে।
পরে ভাস্কর হর্ষবর্ধনের সাথে গৌড়াধিপতি শশাঙ্ক ও মালবরাজ দেবগুপ্তের বিরুদ্ধে ঐক্যজোট বাঁধে। ভাস্কর বর্মণ হর্ষবর্ধনের মিত্র হিসেবে বাংলার কিছু অঞ্চল নিজের অধীনে আনেন ৷
উপসংহার : উপরোক্ত আলোচনার শেষে একথা বলা যায় যে, মৌখরি ও কামরূপ রাজ্য ২টি বাংলার অনেক ঘটনা বহুল এলাকা নামে পরিচিত। শশাঙ্কের রাজত্বের পুরোটাই মৌখরি, কামরূপ ও থানেশ্বর রাজ্যকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়।
সুতরাং প্রাচীন বাংলার অনেক ইতিহাস এ অঞ্চলকে ঘিরে রয়েছে। তাই ইতিহাসে এ স্থানগুলোর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম।