মধ্যযুগে বাংলার ইতিহাসের উৎস হিসেবে সুফি সাহিত্যের অবদান কি ছিল

মধ্যযুগে বাংলার ইতিহাসের উৎস হিসেবে সুফি সাহিত্যের অবদান কি ছিল
মধ্যযুগে বাংলার ইতিহাসের উৎস হিসেবে সুফি সাহিত্যের অবদান কি ছিল

মধ্যযুগে বাংলার ইতিহাসের উৎস হিসেবে সুফি সাহিত্যের অবদান কি ছিল

  • অথবা, মধ্যযুগে বাংলার ইতিহাসের উৎস হিসেবে সুফি সাহিত্যের অবদান উল্লেখ কর।
  • অথবা, মধ্যযুগে বাংলার ইতিহাসের উৎস হিসেবে সুফি সাহিত্যের ভূমিকা কি?

উত্তর : ভূমিকা : ইতিহাস রচনার জন্য প্রতিটি উৎসই সমান গুরুত্বপূর্ণ। সুফি সাহিত্য এর ব্যতিক্রম নয়। সুফি সাধকগণ বিশেষভাবে সুলতানি আমলে অধিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। 

সুফিরা মূলত এদেশে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে নিয়ে এদেশে আসেন। বাংলায় সুফিদের বেশ জনপ্রিয়তা ছিল। 

সুফি-সাধকরা সময়ের বিবর্তনে অনেকসময় রাজনৈতিক বিষয়েও জড়িয়ে পড়েন। তাদের উপদেশ, চিঠিপত্র প্রভৃতি ইতিহাসের মূল্যবান উৎস । 

মধ্যযুগে বাংলায় ইতিহাসের উৎস হিসেবে সুফি সাহিত্য : সুফি সম্পর্কিত আলোচনা গ্রন্থ, সুফিদের জীবনী ও সুফিদের লেখা চিঠি-পত্র সংকলন তৎকালীন সময়ের আর্থসামাজিক অনেক বিষয় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়। 

বাংলার সুফি শায়খ আখি সিরাজউদ্দিন উসমানের জীবনী নিয়ে আমীর খারপ নামে সুপরিচিত মুহম্মদ মোবারক আলভী কিয়ামানী 'সিয়র-উল- আউলিয়া' গ্রন্থটি রচনা করেন। 

বাংলায় বেশ কয়েকজন সুফির জীবনী নিয়ে শায়খ আব্দুল হক দেহলভী 'আখবার-উল- আখইয়ার' রচনা করেন। আব্দুর রহমান চিশতী রচনা করেন ‘মীরাত-উল-আসরার'। 

সুফিদের জীবনী নিয়ে আর একটি গ্রন্থ রচিত হয় যার নাম 'খাজিনাতুল আসাফায়া' সুফিবিষয়ক অন্য একটি গ্রন্থ হচ্ছে গওসী রচিত 'গুলজার-ই-আরবারে'।

উল্লিখিত গ্রন্থগুলো বাংলার সুফিদের নিয়ে রচনা করা হলেও রচনা স্থান ছিল বাইরে। বাংলার অভ্যন্তরে রচিত সুফি জীবনীবিষয়ক গ্রন্থের মধ্যে 'শেক-শুভোদয়ার' নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। 

এ গ্রন্থে শায়খ জালাল উদ্দিন তাব্রিজীর জীবনী আলোচিত হয়েছে। পীর মোহাম্মদ সাত্তারী রচিত 'রিসালাত-উস-সুহাদা' গ্রন্থে শাহ্ ইসমাইল গাজীর জীবনী আলোচিত হয়েছে। 

সিলেটের সাধক হযরত শাহজালাল মুজারদের জীবনভিত্তিক গ্রন্থ 'সুহেল-ই-য়মন' রচনা করেছিলেন। নাসিরউদ্দিন হায়দার। 

সুফিদের আধ্যাত্মিক আলোচনামূলক গ্রন্থ হচ্ছে 'ফওয়ায়েদ-উল-ফওয়াদ'। নিজামউদ্দিন আউলিয়ার আলোচনাসমূহ এখানে সংকলিত হয়েছে।

রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক প্রয়োজনে সুফিগণ বেশ কিছু চিঠি রচনা করেছিলেন। শয়খ কুতুব আলমের আটটি চিঠি পাওয়া গেছে। 

একটি চিঠিতে বাংলার সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা আছে। সুতরাং সুফি সাহিত্যেও ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানরূপে কাজ করে ।

উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিশেষে আমরা একথা বলতে পারি যে, ইতিহাসের উৎস হিসেবে সুফি সাহিত্য কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। 

এমন অনেক তথ্য আছে এ সাহিত্যে যা অন্য কোনো সাহিত্যিক বা প্রত্নতাত্ত্বিক উপকরণ হতে পাওয়া সম্ভব হয়নি। সুলতানি আমল ও মুঘল আমলে সুফি সাহিত্যিকদের প্রভাব ছিল ব্যাপক। 

এসময় সুফিদের সম্মান ও মর্যাদা ছিল। প্রায় প্রত্যেক শাসকই তাদের মূল্য দিতেন। মুসলিম-অমুসলিম উভয়ের কাছেই তারা সমাদৃত ছিল। সুফিসাহিত্য ইতিহাস রচনার গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎস ছিল।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ