মাৎস্যন্যায় কি । মাৎস্যন্যায় বলতে কী বুঝায়
মাৎস্যন্যায় কি । মাৎস্যন্যায় বলতে কী বুঝায় |
মাৎস্যন্যায় কি । মাৎস্যন্যায় বলতে কী বুঝায়
- অথবা, মাৎস্যন্যায় শব্দের অর্থ বিশ্লেষণ কর।
- অথবা, মাৎস্যন্যায়ের উপর একটি টীকা লিখ।
উত্তর : ভূমিকা : প্রাচীন বাংলার আকাশে অন্ধকারের অমানিশা নেমে আসে। শশাঙ্কের মৃত্যুর পর। সে সময় কোনো স্থায়ী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
সবাই অস্থিরতা বিরাজ করতো। সবলরা দুর্বলদের উপর নির্মম অত্যাচার করতো। এসব ছিল নিত্য নৈমিত্যিক ব্যাপার ।
→ মাৎস্যন্যায় : মাৎস্যন্যায় একটি শব্দ যার শাব্দিক অর্থ এখানে ব্যবহার করা হয়েছে। মাৎস্যন্যায় বলতে অরাজকতাকে বুঝানো হয়েছে।
বাংলায় যখন শশাংঙ্কের মৃত্যু হয় তখন বাংলার আকাশে অরাজক অবস্থা চলে আসে। অরাজকতার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় কোনো স্থায়ী শাসন প্রতিষ্ঠা হয়নি।
জোর যার মুল্লুক তার এ নীতিতে চলতে থাকে প্রাচীন বাংলা। সে সময় শুধুমাত্র দেশীয় সংঘর্ষই হয়নি। বহিঃশত্রুরাও বাংলা আক্রমণ করে বারবার সব মিলিয়ে এ সময়টাকে বলা হয় মাৎস্যন্যায় বা অরাজকতার যুগ ।
মাৎস্যন্যায় শব্দের অর্থ বিশ্লেষণ : মাৎস্যন্যায় রাষ্ট্র বিজ্ঞানে ব্যবহৃত একটি প্রতিশব্দ এর অর্থ হচ্ছে আইন বিবর্জিত রাষ্ট্র। কৌটিলের অর্থশাস্ত্রে এর ব্যাখ্যা দেওয়া আছে।
দন্তরের অভাবে যখন সবল দুর্বলকে গ্রাস করে, যেমন মাছের রাজত্ব যেখানে নিয়ন্ত্রণকারী কেউ নেই, সেখানে বড় মাছ ছোট মাছকে ভক্ষণ করে কিন্তু কেউ কিছু বলে না।
তেমনি দেশের অরাজক অবস্থায় সবল দুর্বলের উপর অত্যাচার করে সর্বস্ব গ্রাস করে। নেয়। বাংলার এ বিশৃঙ্খল অবস্থা মাছের আচরণের সাথে তুলনা করে এ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
এ অরাজকতার মধ্য থেকে পালবংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপাল বাংলার রাজা রূপে প্রতিষ্ঠিত হন। পালদের উত্থানের পূর্বে একশ বৎসরের ইতিহাস তথ্য প্রমাণের অভাবে জানা যায় না।
তবে ধর্মপালের ৩২ রাজ্যাংক বা খালিমপুর তাম্রলিপি; লামা-তারানাথের বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস নামক কাহিনীতে গোপালের ক্ষমতা লাভ সম্পর্কে জানা যায় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলায় শশাঙ্কের মৃত্যু হলে পুরো এলাকায় অরাজকতার সৃষ্টি হয়েছিল। প্রায় একশ বছর এ অবস্থা চলছিল তাই এ অবস্থাকে বলা হয় মাৎস্যন্যায়। এ অবস্থার অবসান হয়েছিল গোপাল কর্তৃক পাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।