লক্ষ্মণ সেনের ব্যর্থতাকে ঐতিহাসিকগণ কী বলেছেন
লক্ষ্মণ সেনের ব্যর্থতাকে ঐতিহাসিকগণ কী বলেছেন |
লক্ষ্মণ সেনের ব্যর্থতাকে ঐতিহাসিকগণ কী বলেছেন
- অথবা, লক্ষ্মণসেনের ব্যর্থতাকে ঐতিহাসিকগণ কি দৃষ্টিতে দেখেছেন?
উত্তর : ভূমিকা : বাংলার ইতিহাসে প্রায় ৬০ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহণ করেন লক্ষ্মণ সেন। তিনি সিংহাসনে আরোহণ করে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন।
যদিও তিনি প্রথম দিকে রাজ্য পরিচালনায় যথেষ্ট কৃতিত্বের পরিচয় দেন তবে তার রাজত্বের শেষের দিকে তার দুর্বলতার জন্য তাকে মুসলমান শক্তির কাছে হার মানতে হয়। এ কারণে তিনি অনেক ভাবে ইতিহাসে সমালোচিত হয়েছেন।
লক্ষ্মণ সেনের ব্যর্থতায় ঐতিহাসিক মন্তব্য : মুসলিম বীরদের মধ্যে বখতিয়ার খলজি ছিলেন অন্যতম একজন। বাংলায় লক্ষ্মণ সেনের রাজ্যে মুসলমান আধিপত্য বিস্তার করা তার পক্ষে খুবই সহজ ছিল।
এজন্য তিনি খুব কম সংখ্যক সৈন্য নিয়ে অরণ্য অঞ্চল দিয়ে নদীয়া আক্রমণ করেছিলেন। এ সময় লক্ষ্মণ সেন মধ্যহ্নভোজে ব্যস্ত ছিলেন।
ফলে তিনি কোনো উপায় করতে না পেরে পালিয়ে যান। ফলে খুব সহজেই বখতিয়ার খলজি বাংলা জয় করে। লক্ষ্মণ সেনের এ. ব্যর্থতাকে ঐতিহাসিকগণ নানাভাবে সমালোচিত করেছেন।
ড. আর. সি. মজুমদার-এর মতে, “রাজমহলে লক্ষ্মণ সেন সৈন্য পাঠিয়ে নিয়েছিলেন, কারণ তাঁর ধারণা ছিল তুর্কিরা এ পথেই বাংলা আক্রমণ করবে।”
তিনি আরও বলেন, বখতিয়ার রাজমহল দিয়ে না এসে ঝাড়খণ্ডের অঞ্চল দিয়ে এসেছিল। আর লক্ষ্মণ সেনের তেমন কোনো প্রস্তুতি ছিল না। নদীয়া লক্ষ্মণ সেনের রাজধানী না হওয়ায় সেখানে আত্মরক্ষার কোনো ব্যবস্থা ছিল না।
বিভিন্ন ঐতিহাসিকের মতে, বখতিয়ার খলজি মাত্র ১৮ জন অস্বারোহী নিয়ে অশ্ববিক্রেতার পরিচয় দিয়ে রাজ প্রাসাদের অভান্তরে ঢুকে পড়ে।
অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যে তার মূল বাহিনীও এসে পড়ে। এ সময় লক্ষ্মণ সেন মধ্যাহ্ন ভোজনে ব্যস্ত ছিলেন। অতর্কিত আক্রমণে কোনো উপায় না দেখে।
তিনি আত্মরক্ষার জন্য পিছনের দরজা দিয়ে পূর্ববঙ্গের রাজধানী বিক্রমপুরে পালিয়ে যান। এ কারণে ইতিহাসে লক্ষ্মণ সেন বিবৃত হয়ে আছেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, লক্ষ্মণ সেনকে শুধুমাত্র একা সেন বংশের পতনের জন্য দায়ী করা যায় না। এ পতনের পিছনে তার পূর্ববর্তী সেন শাসকদের দুর্বলতাও ছিল দায়ী।
কারণ নিজ রাজ্য রক্ষার চেষ্টা করার ভিত থাকে তবে এক্ষেত্রে লক্ষ্মণ সেন কিছু বোঝার আগেই অতর্কিত হামলা তাকে পতনের দিকে ধাবিত করে।