লক্ষ্মণ সেনের আমলে মুসলিম অভিযান বর্ণনা কর
লক্ষ্মণ সেনের আমলে মুসলিম অভিযান বর্ণনা কর |
লক্ষ্মণ সেনের আমলে মুসলিম অভিযান বর্ণনা কর
- অথবা, লক্ষ্মণ সেনের শাসনামলে বখতিয়ার এলজির বাংলা অভিযান সম্পর্কে লিখ।
উত্তর : ভূমিকা : পাল সাম্রাজ্যের ধ্বংসস্তূপের উপর প্রতিষ্ঠিত একাদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে একটি স্বাধীন রাজতন্ত্রের সূচনা করে সেন রাজবংশ।
সেন রাজবংশের শাসনামল বাংলায় ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। সেন বংশের প্রথম শাসক হলেন হেমন্ত সেন এবং শেষ শাসক হলেন লক্ষ্মণ সেন।
লক্ষ্মণ সেন আনুমানিক ১১৭৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলার সিংহাসনে আরোহণ করেন। তার সময় সংঘটিত হয় বাংলায় মুসলিম অভিযান। এতে লক্ষণ সেন পরাজিত হন এবং প্রাণ নিয়ে পালিয়ে যান।
→ মুসলিম অভিযান : ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ-বিন- বখতিয়ার খলজি কর্তৃক বাংলা অভিযান ছিল লক্ষ্মণ সেনের রাজত্বকালের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা।
লক্ষণ সেন পরিণত বয়সে অর্থাৎ ৬০ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি তাঁর শাসনামলের প্রথম দিকে বেশ ভালোই কৃতিত্বের পরিচয় দেন।
কিন্তু তার রাজত্বের শেষের দিকে তিনি বার্ধক্য হন এবং তিনি শাসনকার্য থেকে মনোযোগ উঠিয়ে নিয়ে ধর্মকর্মে মনোযোগী হন।
তার এ দুর্বলতার সুযোগে তুর্কি বীর মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি বাংলা আক্রমণের অনুমতি লাভ করেন দিল্লির সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেকের নিকট থেকে।
বখতিয়ার খলজি প্রায় ১২০৩ অথবা ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলা আক্রমণ করেন হঠাৎ করে। আকস্মিক আক্রমণ করায় লক্ষ্মণ সেন কোনো প্রতিরোধমূলক কিছু না করতে পারায় প্রাণ বাঁচিয়ে বাংলা ছেড়ে পালিয়ে যান।
কথিত আছে যে, বখতিয়ার খলজি ছিলেন একজন তেজস্বী, সমরকুশলী। তিনি বিহার জয় করার পর মাত্র ১৮ জন সৈন্য নিয়ে আকস্মিকভাবে নদীয়া আক্রমণ করেন।
এ সময় লক্ষণ সেন বাংলার উপ রাজধানী নদীয়ায় অবস্থান করছিলেন। বখতিয়ার খলজি মূল পথ দিয়ে না গিয়ে তিনি কাড়খণ্ডের অরণ্য অঞ্চল দিয়ে ঘোড়া ব্যবসায়ীর পরিচয় দিয়ে একেবারে রাজ প্রাসাদের ভিতরে প্রবেশ করে অতর্কিত হামলা শুরু করে।
এদিকে তার মূল বাহিনী পৌঁছে যায়। লক্ষ্মণ সেন কোনো উপায় করতে না পেরে রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে যান। ফলে বাংলা হতে চিরদিনের মতো সেন শাসনের অবসান হয় এবং বাংলায় প্রথম বারের মতো মুসলিম শাসনের ভিত্তি স্থাপিত হয়।
উপংসহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বখতিয়ার খলজির বাংলা আক্রমণের মাধ্যমে বাংলায় সেন শাসনের প্রায় একশত বছরের শাসনব্যবস্থার পতন হয়। লক্ষ্মণ সেনের শাসন আমলে বাংলার চরম উন্নতি ও অবনতি হয়।
লক্ষ্মণ সেনের শাসন আমলে সেন বংশের পতনের কারণে তিনি বাংলার ইতিহাসে ব্যাপকভাবে সামলোচিত হয়েছেন এবং কৃতিত্বপূর্ণ কাজের জন্য আবার বিশেষভাবে আলোচিতও হয়েছেন।