কৌলিন্য প্রথা সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মতামত কী লিখ
কৌলিন্য প্রথা সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মতামত কী লিখ |
কৌলিন্য প্রথা সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মতামত কী লিখ
- অথবা, কৌলিন্য প্রথা সম্পর্কে ঐতিহাসিক মতগুলো উল্লেখ কর।
উত্তর : ভূমিকা : প্রাচীন বাংলার সেন বংশের ইতিহাসে বল্লাল সেন এক অনবদ্য ব্যক্তিত্ব। আনুমানিক ১১৫৮-১১৭৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বল্লাল সেনের শাসনকাল এক বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে । বল্লাল সেনের শাসনকাল ছিল বৈচিত্র্যময়।
তিনি সিংহাসনে বিভিন্ন ধরনের সংস্কারমূলক কাজ করে। এসব সংস্কারমূলক কাজের মধ্যে অন্যতম একটি হলো তিনি হিন্দু সমাজে কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তন করে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন ।
→ কৌলিন্য প্রথা সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মতামত : বল্লাল সেন কর্তৃক প্রবর্তিত হিন্দু সমাজে কৌলিন্য প্রথা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মতামত ব্যক্ত করেছেন ঐতিহাসিকগণ, নিম্নে তা 'আলোচনা করা হলো :
বল্লাল সেন হিন্দুধর্মের প্রতি অনুরাগী ছিলেন। তাছাড়া তিনি রক্ষণশীলতা ধরে রাখার জন্য প্রচেষ্টা চালান। তিনি সমাজের উচ্চশ্রেণির মধ্যে কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তন করে জাতিভেদ প্রথাকে তীব্রতর করেন।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায় যে, কৌলিন্য প্রথার সাথে বল্লাল সেনের সম্পর্কের তেমন কোনো যুক্তিযুক্ত ভিত্তি নেই।
'কুলজি' নামক গ্রন্থে কৌলিন্য প্রথা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য পাওয়া যায় । কিন্তু ঐতিহাসিকগণ এ গ্রন্থটি নিয়েও দ্বিমত প্রকাশ করেন।
আধুনিককালের ঐতিহাসিকদের মতে, বল্লাল সেন কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তন করেননি। যদি করতেন তবে তা সময়ের সাহিত্য ও লিপিমালায় লিপিবদ্ধ থাকত।
কিন্তু এ সম্পর্কে তেমন কিছুই পাওয়া যায় না এ সময়কার সাহিত্য ও লিপিমালায়। তাই শুধুমাত্র কুলজি গ্রন্থের উপর ভিত্তি করে বল্লালসেনকে এ প্রথার প্রবর্তক বলা যায় না।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইতিহাস হচ্ছে একটি প্রমাণ নির্ভর বিষয়। যথেষ্ট প্রমাণ না থাকলে ইতিহাস তাকে গ্রহণ করে না।
তাই বল্লাল সেন যে কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তক ছিলেন তা যথেষ্ট প্রমাণ না থাকায় অধিকাংশ ঐতিহাসিক মত প্রকাশ করেন যে, বল্লাল সেন কৌলিন্য প্রথা প্রবর্তন করেননি ।
কারণ তার সময় অনেক গ্রন্থ এবং লিপিমালা উৎকীর্ণ হয়, যার কোথাও এ সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না ৷