হিউয়েন সাং সম্পর্কে টীকা লেখ । বিখ্যাত চৈনিক পর্যটক হিউয়েন সাং সম্পর্কে আলোচনা কর
হিউয়েন সাং সম্পর্কে টীকা লেখ । বিখ্যাত চৈনিক পর্যটক হিউয়েন সাং সম্পর্কে আলোচনা কর |
হিউয়েন সাং সম্পর্কে টীকা লেখ । বিখ্যাত চৈনিক পর্যটক হিউয়েন সাং সম্পর্কে আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : প্রাচীন বাংলার রূপ ও সৌন্দর্য পরিদর্শক যে কয়জন বিদেশি পর্যটক আগমন করেন তাদের অন্যতম। তিনি ভারতবর্ষে ১৪ বছর অবস্থান এদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন এবং তার ভ্রমণ অভিজ্ঞতার উপর গ্রন্থ রচনা করেন।
এ কারণে চৈনিকদের রচনায় প্রাচীন বাংলায় ইতিহাসের অনেক উপাদান খুঁজে পাওয়া যায়। ভারতবর্ষে আগমনের জন্য তাকে সুদূর পথ পাড়ি ও অনেকগুলো রাষ্ট্র অতিক্রম করতে হয়েছে। তার রচিত কাব্য অনুযায়ী বাংলার প্রাচীন অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়।
১. হিউয়েন সাঙের পরিচয় : হিউয়েন সাত খ্রিষ্টীয় সাত শতাব্দীতে চীন থেকে ভারতবর্ষে আসেন। তিনি বাংলার পুরবর্ধন, কর্ণসুবর্ণ, কজঙ্গল, সমতট ও তাম্রলিপ্তি ভ্রমণ করেন দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে । তার আপয়নকাল (৬৩০-৬৪৪) খ্রিষ্টাব্দ।
২. জন্ম ও বংশ পরিচয় : হিউয়েন সাঙ চিনের লুহু প্রদেশের (বর্তমান হিনান প্রদেশ) পৌসি শহরের চিনহি গ্রামে ৬০২ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।
তার পূর্বপুরুষ চেনশি ছিলেন হান সাম্রাজ্যের একজন মন্ত্রী। তার পাপার বাবা পূর্ব ওযেই সাম্রাজ্যের শেনডোং প্রদেশের একজন বড় কর্মকর্তা ছিলেন।
তার দাদা 'চেন কাং উত্তর কি সাম্রাজ্যের রাজকীয় একাডেমির অধ্যাপক ছিলেন এবং তার বাবা বেন হুই, এই সাম্রাজের একজন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি পরবর্তীতে চাকরি ছেড়ে দেন।
৩. শিক্ষাজীবন : হিউয়েন সাগু তার বাবার কাছে প্রাথমিক শিক্ষালাভ করেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই কনফুসিয়াসের গতানুগতিক তত্ত্বের উপর ব্যাপক আল্লাহ ও পারদর্শিতা প্রদর্শন করতে থাকে।
তার পরিবারও কনফুসিয়াস তত্ত্বের উপর বিশ্বাসী ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে হিউয়েন সাত তার বড় ভাই কেন সু এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে বৌদ্ধ ভিক্ষু হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন এবং ভাইয়ের সাথে 'বুদ্ধ আশ্রমে পাঁচ বছর কাটান।
৬১৮ সালে সুই সাম্রাজ্যের পতন হলে তিনি তার ভাইয়ের সাথে পালিয়ে যান এবং তাং সাম্রাজ্যের রাজধানী চ্যাংগানে একটি বুদ্ধ আশ্রমে আরো দুই বছর কাটান সেখানে তিনি অভিধর্মকথা শাস্ত্র সম্পর্কে ধারণা এবং জ্ঞানলাভ করেন।
৪. উচ্চ শিক্ষা : হিউয়েন সাঙ ২০ বছর বয়সে একজন পূর্ণ বৌদ্ধ ভিক্ষু হয়ে উঠেন। তিনি বৌদ্ধধর্মের উপর অনেক পড়াশোনা করেন এবং ভারতবর্ষে আনার্জনের জন্য যাওয়ার আগ্রহ পোষণ করেন। আর এজন্য তিনি রাজধানীতে চলে যান। এবং সংস্কৃত ভাষা সম্পর্কে পড়াশোনা শুরু করেন।হন।
হিউয়েন সাঙের ভারত যাত্রার কাহিনি : হিউয়েন সাপ্ত ৬২৯ সালে একটি স্বপ্ন দেখে ভারত যাত্রার প্রতি আকৃষ্ট এজন্য তাকে অনেক রাষ্ট্র ও অঞ্চল অতিক্রম করতে হয়েছে।
নিম্নে তার ভারতবর্ষে আগমনের ইতিহাস উল্লেখ করা হলো :
১. হিউয়েন সাঙ : ৬২৯ সালে সৃষ্ট খি প্রদেশ হয়ে গোরী মরুভূমি পার হয়ে ৬০০ সালে পৌঁছান। সেখানে তিনি বৌদ্ধ রাজার সাথে দেখা করেন। ভূপান থেকে কিরগিজস্তান পৌঁছান। কিরগিজস্তান থেকে তিনি উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখলে যান।
২. আফগানিস্তানে প্রবেশ : তাসখন্দ থেকে হিউয়েন পশ্চিমে সমরখন্দে পৌঁছান। সমরখন্দ থেকে আরো পশ্চিমে আমুদরিয়া এবং [তিরমিজে গমন করেন।
সেখানে তিনি প্রায় ১,০০০ বৌদ্ধ ভিক্ষুর সাথে সাক্ষাৎ করেন। এর আরো পশ্চিমে তিনি হুন্দুজ শহরের প্রিন্সের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া দেখার জন্য কিছু দিন অবস্থান করেন।
সেখান থেকে পশ্চিমে নব বিহার পরিদর্শন করেন, বর্তমানে যার নাম আফগানিস্তান। সেখানে তিনি অনেক বৌদ্ধ মঠ এবং তিন হাজারের মতো বৌদ্ধ ভিক্ষু দেখেন। সেখানে কিছু দিন অবস্থান করে ৬৩০ সালে দিকে তিনি আমিনপুর (বর্তমান জালালাবাদ) যান।
৩. কাশ্মীর গমন : জালালাবাদ থেকে হিউয়েন পেশোয়ারের দিকে রওনা হন। যাওয়ার পথে তিনি অনেক বৌদ্ধ মঠ দেখেন কিন্তু সেগুলোতে সে তুলনায় বৌদ্ধ ভিক্ষু ছিল না।
পেশোয়ার থেকে তিনি সোয়াত উপত্যকায় যান। সোয়াত উপত্যকা দিয়ে তিনি সিন্ধু নদ পার হন এবং কাশ্মীরের দিকে ধাবিত হন। কাশ্মীরে হিউয়েন সাঙের সাথে বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘাসের দেখা হয়।
হিউয়েন সাঙ কাশ্মীরে ৬৩২ থেকে ৬০০ পর্যন্ত অনেক জ্ঞানী ভিক্ষুদের সাথে মহায়ন অধ্যয়ন করে কাটান। এরপর তিনি লাহোর ও মন্তিপুরে যান।
৪. হিগুয়েন সাঙের রচনাবলি : হিউয়েন সাত তার ভ্রমণ অভিজ্ঞতার উপর গ্রন্থ রচনা করেছেন যার বাংলা অনুবাদের নামক হিউয়েন সাঙ ভ্রমণ কাহিনি।
ইংরেজি অনুবাদ Si-yu-ki: Buddhist records of the western world. ইংরেজি অনুবাদ করেছেন স্যামুয়েল বিল।
এটি ১৮৮৪ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয় এবং ১৯৬৯ সালে দিল্লি থেকে পুনর্মুদ্রণ হয়। বাংলায় অনুবাদ করেছেন খুররম হোসাইন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, হিউয়েন সাপ্ত মূলত ভারতবর্ষে আগমন করেছিলেন বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে এবং তার দীর্ঘ ১৪ বছরের সময়ে তিনি অঞ্চলের শুধু ধৰ্মই চর্চা করেননি, বরং এখানকার রাজনৈতিক, আর্থসামাজিক অবস্থাও পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং সেই জ্ঞানের আলোকেই তিনি গ্রন্থ রচনা করেছেন।
যেখানে এ অঞ্চলের তৎকালীন ইতিহাস সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়। এজন্য তার লিখিত তথ্যের ভিত্তিতে গবেষণা করে পরবর্তীতে নতুন নতুন ইতিহাস রচিত হয়েছে।