চন্দ্রবংশের শেষ রাজা হিসেবে গোবিন্দচন্দ্ৰকে মূল্যায়ন কর
চন্দ্রবংশের শেষ রাজা হিসেবে গোবিন্দচন্দ্ৰকে মূল্যায়ন কর |
চন্দ্রবংশের শেষ রাজা হিসেবে গোবিন্দচন্দ্ৰকে মূল্যায়ন কর
- অথবা, গোবিন্দচন্দ্রের শাসনকাল আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : প্রায় দেড় শতাব্দীকাল বাংলার দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে চন্দ্রবংশের শাসন বিরাজমান ছিল। ত্রৈলোক্যচন্দ্র ছিলেন। এ বংশের ক্ষমতায় আরোহণের নায়ক।
শ্রী চন্দ্রের রাজত্বকালে এ বংশের ক্ষমতা সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়ায় উন্নীত হয়। কল্যাণচন্দ্র ও লডহচন্দের রাজত্বকালে তাঁদের গৌরব বজায় ছিল।
কিন্তু গোবিন্দচন্দ্রের রাজত্বকালে তাদের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তাদের শাসনের অবনতি তথা অবলুপ্তি ঘটে।
→ গোবিন্দ চন্দ্রের পরিচয় : গোবিন্দ চন্দ্র ছিলে লড়হচন্দ্রের পুত্র। গোবিন্দচন্দ্র চন্দ্রবংশের শেষ রাজা। পিতার ন্যায় তারও অন্যধর্মের প্রতি উদার মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায় ৷
অনেকে চন্দ্রবংশীয় রাজা গোবিন্দচন্দ্র ও বাংলায় বহুল প্রচলিত লোকগাঁথায় গোপীচন্দ্র বা গোবিন্দচন্দ্রকে অভিন্ন বলে। মনে করতেন। তবে কেবলমাত্র নামের উপর নির্ভর করেই উভয়কে এক ব্যক্তি বলে নির্ণয় যুক্তিযুক্ত নয়।
→ গোবিন্দচন্দের রাজত্বকাল : দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় গোবিন্দচন্দ্র ২৫ বছর রাজত্ব করেন। তাঁর সময়ে চন্দ্র সাম্রাজ্যের উপর রাজেন্দ্রচোল ও কলুচরিরাজ কর্ণের আক্রমণ সংঘটিত হয়।
চোলরাজের তাম্রশাসনে বলা হয়েছে যে, চোল সেনাপতির সাথে যুদ্ধে গোবিন্দ চন্দ্র পরাজিত হন এবং হাতির পিঠ থেকে নেমে পালিয়ে যান।
চোল রাজের তাম্রশাসনে গোবিন্দচন্দ্রের রাজাকে অবিরাম বর্ষা বারিসিক্ত বঙ্গাল দেশ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। বঙ্গালদেশ বলতে সাধারণত পূর্ব ও দক্ষিণ বঙ্গকে বুঝায়।
কচুরিরাজ কর্ণ ১০৪৮ -৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে বাংলা আক্রমণ করেন এ দুই শক্তির আক্রমণে গোবিন্দচন্দ্র চুর্বল হয়ে পড়েন এবং সেই সাথে চন্দ্রবংশের পতন ঘটে। গোবিন্দ চন্দ্রই ছিলেন চন্দ্রবংশের শেষ রাজা ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রায় ১৫০ বছর যাবৎ যে সাম্রাজ্য দক্ষিণ-পূর্ব বাংলা শৌর্যবীর্যের সাথে তাদের শাসন পরিচালনা করে আসছিলেন তা একাদশ শতাব্দীর শেষভাগে উত্তর বাংলায় সমাপ্ত বিদ্রোহের দরুন পরিসমাপ্তি ঘটে। আর এ সুযোগে এখানে বর্ষরাজবংশের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।