চন্দ্র রাজবংশের উত্থান সম্পর্কে আলোচনা কর
চন্দ্র রাজবংশের উত্থান সম্পর্কে আলোচনা কর |
চন্দ্র রাজবংশের উত্থান সম্পর্কে আলোচনা কর
- অথবা, চন্দ্রবংশের প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে যা জান লেখ।
উত্তর : ভূমিকা : নবম শতাব্দীর শেষভাগ হতে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলা পূর্ব বাংলায় চন্দ্রবংশ নামে একটি শক্তিশালী রাজবংশের উল্লেখ পাওয়া যায়। দীর্ঘদিন যাবৎ এ রাজবংশের ইতিহাস অজ্ঞাত ছিল।
কিন্তু সম্প্রতি ময়নামতিতে তিন খানি ঢাকায় একখানি ও সিলেটের পশ্চিমভাগে প্রাপ্ত একখানি তাম্রশাসন থেকে এ বংশের শাসন সম্বন্ধে বিস্তারিত জানা যায়।
→ চন্দ্র রাজবংশের উত্থান : কান্তিদেবের পর প্রবল পরাক্রান্ত চন্দ্র বংশ পূর্ব ও দক্ষিণ বঙ্গে রাজত্ব করতেন। চন্দ্রবংশের প্রথম ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন পূর্ণচন্দ্র।
তিনি বা তাঁর পুত্র সুবর্ণচন্দ্র কোনো সার্বভৌম রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে মনে হয় না। লিপি প্রমাণ অনুযায়ী তারা উভয়েই বোহিতাগিরির ভূস্বামী ছিলেন।
রোহিতাগিরির অবস্থান নিয়ে যথেষ্ট মত পার্থক্য রয়েছে। কেউ কেউ রোহিতাগিরিকে বিহারের রোহতাসগড় বলে উল্লেখ করেছেন।
কিন্তু এক্ষেত্রে ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালীর মত যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হয় তিনি রোহিতাগিরি কুমিল্লা লালমাই বলে মত পোষণ করেন।
খুব সম্ভবত কুমিল্লার লালমাই অঞ্চলেই চন্দ্রবংশীয় রাজার প্রাথমিক পর্যায়ে ভূস্বামী ছিলেন। ক্রমান্বয়ে তাদের ক্ষমতার উন্নতি হয় এবং সুবর্ণচন্দ্রের পুত্র ত্রৈলোক্য চন্দ্র হরিকেল রাজার শক্তির প্রধান উৎস হিসেবে পরিগণিত হন।
খুব সম্ভবত কান্তিদেব বা তার পরবর্তী কোনো হরিকেল রাজার অধীনে কুমিল্লা অঞ্চলের চন্দ্রদেবের উত্থান শুরু হয়।
চন্দ্র রাজবংশের রাজাগণ : চন্দ্র রাজবংশের যে সকল রাজার নাম পাওয়া যায় তারা হলেন :
১. পূর্ণচন্দ্র;
২. সূবর্ণচন্দ্র;
৩. ত্রৈলোক্য চন্দ্ৰ;
৪. শ্রী চন্দ্ৰ;
৫. কল্যাণ চন্দ্র;
৬. লডহ চন্দ্র ও
৭. গোবিন্দ চন্দ্ৰ ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলার দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে প্রায় দেড় শতাব্দীকাল চন্দ্রবংশের শাসন বিরাজমান ছিল। ত্রৈলোক্যচন্দ্র ছিলেন এ বংশের ক্ষমতায় আরোহণের নায়ক।
শ্রী চন্দ্রের রাজত্বকালে তাদের ক্ষমতা উন্নতির চরম শিখরে উপনীত হয় কিন্তু গোবিন্দচন্দ্রের রাজত্বকালে বৈদেশিক আক্রমণের ফলে তারা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তাদের শাসনের অবনতি তথা অবলুপ্তি হয়।