বর্ম রাজবংশের উত্থান ও পতন আলোচনা কর
বর্ম রাজবংশের উত্থান ও পতন আলোচনা কর |
বর্ম রাজবংশের উত্থান ও পতন আলোচনা কর
- অথবা, বর্ম রাজবংশের উত্থান ও পতন সম্পর্কে যা জান লিখ ।
উত্তর : ভূমিকা : পাল রাজত্বের অবসানের যুগের দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় গড়ে ওঠে একটি স্বতন্ত্র রাজবংশ হলো ধর্ম রাজবংশ। বর্ণ রাজবংশের উত্থান প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে একটি বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে।
জাত বর্মা বর্ম রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। বর্ম বংশের শাসকগণ বেশ কিছুদিন শৌষবীর্যের সাথে শাসনকার্য পরিচালনা করেন ৷
→ বর্মরাজ বংশের উত্থান ও পতন : নিম্নে বর্মরাজ বংশের উত্থান ও পতন আলোচনা করা হলো :
১. জাতবর্মা : জাতবর্মা ছিলেন বর্মরাজ বংশের প্রতিষ্ঠাতা কৈবত বিদ্রোহের সময় তিনি দক্ষিণ পূর্ব বাংলায় স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। বর্মদেব রাজধানী ছিল বিক্রমপুরে। তিনি ছিলেন এ বংশের সার্বভৌম ক্ষমতাধর রাজা।
জাতবর্মার রাজত্বকাল কতদিন ছিল এ সম্পর্কে ঐতিহাসিকরা কোনো তথ্য দিতে পারেনি। তবে তিনি এই রাজবংশটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তা অত্যন্ত গৌরবের ছিল।
২. হরিবর্ম : দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় স্বতন্ত্র রাজবংশের মধ্যে ধর্ম রাজবংশের উৎপত্তি হয়েছিল। তানের আমলের কিছু লিপি পাওয়া গেছে। সেগুলোতে হরিবর্মা সম্পর্কে জানা যায়।
বর্ষ রাজবংশের অন্যতম একজন রাজা হলেন হরিবর্মা। তার রাজধানী ছিল বিক্রমপুরে। হরিবর্মার সময়ে আবিষ্কৃত দুটি বৌদ্ধ পাণ্ডুলিপি থেকে জানা যায় যে, তিনি আনুমানিক ৪৬ বছর রাজত্ব করেন।
রামচরিত্র হতে তার সম্পর্কে বহু তথ্য পাওয়া যায়। এখানে উল্লেখ ছিল যে, হরি নামক একজন সেনানায়ক কৈবর্ত রাজ ভীমের পরাজয়ের পর রামপালের সাথে বন্ধুসূত্রে আবদ্ধ ছিলেন।
পূর্বদেশীয় এক “বর্ম নরপতি" স্বীয় পরিবাগের জন্য বিজয়ী রামপালের নিকট উপঢৌকন পাঠিয়েছিলেন।
ধারণ করা হয় হরি ও ধর্ম নরপতি এবং হরিবর্মা একই ব্যক্তি ছিলেন। হরিবর্মার পর তার পুত্র রাজা হয়েছিলেন। হরিবর্মার সময়ে ভবদেব ভট্ট ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ ব্যক্তি।
৩. সামলবর্মা : দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় স্বতন্ত্র রাজবংশের মধ্যে ধর্ম রাজবংশের উৎপত্তি হয়েছিল। তাদের আমলের কিছু লিপি পাওয়া গেছে। সেগুলোতে সামলবর্মার সম্পর্কে জানা যায়।
সামলবর্মা ছিলেন জাত ধর্মার ছেলে। তিনি ধর্ম রাজবংশের অন্যতম একজন শাসক ছিলেন। সামলবর্মা সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি কারণ তার সামন্তসার তাম্রশাসন খান পুড়ে যায় যতটুকু জানা যায়, তিনি সিংহাসনে আরোহণ করে মহারাজাধিরাজ উপাধি গ্রহণ করেন।
বাংলার বৈদিক ব্রাহ্মণদের কুলজী গ্রন্থের মাধ্যমে জানা যায় যে, ১০০১ অব্দে সামল বর্মা তার পূর্বপুরুষদের বাংলায় আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
কুলজী গ্রন্থের তারিখ ১০০১ অব্দে একেবারে সঠিক না হলেও মোটামুটি বিশ্বাসযোগ্য বলে ধরা যায়। এছাড়া আরও জানা যায় যে, সামল বর্মার দুই ভাই অথবা সে ও তার জন্য এক ভাই একাদশ শতকের শেষে বা দ্বাদশ শতকের প্রথম দিকে বাংলায় রাজত্ব করেন।
৪. ভোজবর্মা : দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় স্বতন্ত্র রাজবংশের মধ্যে | ধর্ম রাজবংশের উৎপত্তি হয়েছিল। তাদের আমলের কিছু লিপি পাওয়া গেছে।
সেগুলোতে ধর্ম রাজবংশের সর্বশেষ রাজা সম্পর্কে জানা যায়। বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায় যে, ধর্ম রাজবংশের শেষ নরপতি হলেন ভোজবর্মা।
সামলবর্মার পর তার পুত্র ভোজবর্মা রাজ ক্ষমতায় আসেন। তার রাজধানী ছিল বিক্রমপুর। এ থেকে তার রাজত্বের পঞ্চম বছরে বেলাৰ তাম্রশাসন প্রকাশিত হয়েছিল।
তিনি পরমবৈষ্ণব, পরমেশ্বর, পর ভট্টারক ও মহারাজাধিরাজ প্রভৃতি উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। সুতরাং তিনি একজন স্বাধীন ও পরাক্রান্ত রাজা ছিলেন, এটা অনুমান করা যায়। তবে ভোজবর্মী সম্পর্কে তথ্যের অভাবে বিস্তারিত জানা যায়নি।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে দক্ষিণ পূর্ব বাংলায় ধর্ম রাজবংশের উত্থান একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
সম্ভবত দ্বাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে সেন বংশীয় রাজা বিজয়সেন দক্ষিণ-পূর্ব বাংলা দখল করলে বর্ম রাজবংশের অবসান ঘটে।