বরেন্দ্র বিদ্রোহ কি । কৈবর্ত শাসনের ইতিহাস সংক্ষেপে পর্যালোচনা কর
বরেন্দ্র বিদ্রোহ কি । কৈবর্ত শাসনের ইতিহাস সংক্ষেপে পর্যালোচনা কর |
বরেন্দ্র বিদ্রোহ কি । কৈবর্ত শাসনের ইতিহাস সংক্ষেপে পর্যালোচনা কর
- অথবা, বরেন্দ্র ভূমি বিদ্রোহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
- অথবা, বরেন্দ্র বিদ্রোহ বলতে কি বুঝ?
- অথবা, কৈবর্ত/সমাপ্ত/ বরেন্দ্র বিদ্রোহ কাকে বলে?
উত্তর : ভূমিকা : তৃতীয় বিগ্রহপালের পুত্র দ্বিতীয় মহীপাল আনুমানিক ৭৭৫ খ্রিষ্টাব্দে এ পাল সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসেন। তার রাজত্বকালে উত্তর বাংলার কৈবর্ত বিদ্রোহ বা সামন্ত বিদ্রোহ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
এ বিদ্রোহের ফলে পাল সাম্রাজ্যের সাময়িক অবসান ঘটে এবং কৈবর্তদের নায়ক দিন্যের নেতৃত্বে সেখানে কৈবর্ত শাসন প্রতি হয়।
বরেন্দ্র কৈবর্ত বিদ্রোহ : দ্বিতীয় মহীপাল রাজা হিসেবে ছিলেন অত্যাচারী, স্বেচ্ছাচারী এবং অদূরদর্শী। এ সুযোগে উত্তর বাংলার তথা বরেন্দ্র অঞ্চলের সামন্তরা পাল শাসন ও দ্বিতীয় মহীপালের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। ইতিহাসে এ বিদ্রোহ কৈবর্ত বিদ্রোহ বা বরেন্দ্র বিদ্রোহ নামে পরিচিত।
→ বরেন্দ্র কৈবর্ত বিদ্রোহের কারণ : বরেন্দ্র বিদ্রোহের কারণ, উৎপত্তি ও প্রকৃতি নির্ণয় করা কঠিন। কারো কারো মতে, দ্বিতীয় মহীপাল অত্যাচারী রাজা ছিলেন।
তার এ অত্যাচারমূলক শাসনব্যবস্থার কারণে কৈবর্ত বিদ্রোহের সূত্রপাত। আবার কেউ কেউ বলেন, দ্বিতীয় মহীপাল সিংহাসনে আরোহণ করার পর অহেতুক সন্দেহের ফলে তার ভ্রাতৃদ্বয় রামপাল ও গুরপালকে কারা বন্দি করেন।
এ থেকে কৈবর্ত বিদ্রোহ এর উৎপত্তি। আবার অনেকে বলেছেন যে, পাল রাজারা মৎসজীবী কৈবর্তদেরকে নানাভাবে নির্যাতন করতেন।
কারণ কৈবর্তনের জীবিকা বৌদ্ধধর্মের বিরোধী ছিল। তাই কৈবর্তদের নেতা দিব্য দেশে বিরাজমান অসন্তোষের সুযোগে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
দিব্যক বিদ্রোহের ফলাফল : নিম্নে দিব্যক বিদ্রোহের ফলাফল উল্লেখপূর্বক আলোচনা করা হলো :
১. রাজ্যনৈতিক বিপ্লব সংঘটিত : দিব্যক বিদ্রোহের ফলে এক বিরাট রাজনৈতিক বিপ্লব সংঘটিত হয়। পালবংশের রাজত্বকালে সিংহাসনে কৈবর্ত নায়ক দিবাক এর বরেন্দ্র ভূমির সিংহাসনে আরোহণ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এক বিপ্লব সূচিত করে।
২. রাজবংশের পরিবর্তন : নির্বাক বিদ্রোহের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল হলো এ বিদ্রোহের ফলে বরেন্দ্র ভূমিতে রাজবংশের পরিবর্তন সাধিত হয়। পালবংশের স্থলে আসে কৈবর্ত বংশের শাসন।
৩. দ্বিতীয় মহীপালের পতন : দিব্যক বিদ্রোহের অন্যতম এক ফল হলো অত্যাচারী পাল শাসক দ্বিতীয় মহীপালের পতন। দ্বিতীয় মহীপালের পতন হলে তদস্থলে ক্ষমতায় আসে কৈবর্ত রাজা দিব্যক।
৪. সামস্তদের ইচ্ছা পূরণ : দিব্যক বিদ্রোহ ছিল মূলত একটি সামন্ত বিদ্রোহের প্রতিফল। দ্বিতীয় মহীপাল সিংহাসনে আরোহণ করে বিভিন্ন কাজকর্মের জন্য সামন্তদের মন রক্ষা করতে ব্যর্থ হলো দিবাক বিদ্রোহ সংঘটিত হলে এতে দ্বিতীয় মহীপালের পতনের মধ্যে দিয়ে সামন্তদের ইচ্ছা পূরণ হয় ।
৫. জনগণের মুক্তি লাভ : দিব্যক বিদ্রোহের অন্যতম একটি ফলাফল হলো জনগণের মুক্তিলাভ। দিব্যক বিদ্রোহের পূর্বে জনগণ ছিল অতিষ্ঠ অত্যাচারী শাসক দ্বিতীয় মহীপালের কাজ কর্মের জন্য। এ বিদ্রোহের মাধ্যমে জনগণ মুক্তি লাভ করে অত্যাচারের হাত থেকে
৬. দিব্যকের মর্যাদা বৃদ্ধি : এ বিদ্রোহের ফলে কৈবর্ত নেতা দিব্যকের মর্যাদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং তিনি জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন লাভসহ সামন্ত রাজদেরও মন জয় করে পাল শাসনের অবসান ঘটিয়ে বরেন্দ্র ভূমির সিংহাসনে আরোহণ করে।
মূলত অত্যাচারী শাসক দ্বিতীয় মহীপালের হাত থেকে জনগণ ও সামাপ্তদের রক্ষা করার কারণে তার মর্যাদা এত পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছিল যে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা ।
→ রামপাল কর্তৃক বরেন্দ্র অধিকার ও কৈবর্ত বিদ্রোহের অবসান : আনুমানিক ১০৭৭ খ্রিষ্টাব্দে রামপাল সিংহাসনে আরোহণ করে পিতৃভূমি বরেন্দ্র পুনরুদ্ধারের জন্য সচেষ্ট হন।
তিনি বিভিন্ন অঞ্চলের সামন্তদের সম্পত্তির লোভ দেখিয়ে হাত করেন। এদিকে দিব্য মৃত্যুবরণ করলে তার ভ্রাতা রুদ্দোক বা রুদ্র এবং তার পুত্র ভীম বরেন্দ্রীয় সিংহাসনে আরোহণ করেন।
রামপাল ভীমের বিরুদ্ধে প্রথমে শিবরাজ্যের নেতৃত্বে একদল সৈন্য পাঠান এবং তাদের ভীম বরেন্দ্রী বন্দি হন। এভাবে রামপাল পিতৃরাজ্যে পুনরায় তার রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, কৈবর্ত নায়ক দিব্য কর্তৃক সংঘটিত বিদ্রোহ হচ্ছে দিব্যক বিদ্রোহ।
এ বিদ্রোহের মাধ্যমে দিব্যক নানাভাবে জনসমর্থন লাভ করে পাল শাসন আমলে কৈবর্ত শাসন প্রতিষ্ঠা করে যে কৃতিত্বের পরিচয় বহন করে তার পরবর্তী তিন পুরুষ কেননা তিনি মারা যাওয়ার পরও তার প্রতিষ্ঠিত কৈবর্ত বংশের শাসন বাংলায় বহুদিন পর্যন্ত টিকেছিল।
দিব্যক বিদ্রোহ ছিল সামন্ত বিদ্রোহ যার নেতৃত্ব দিয়ে কৈবর্ত নেতা দিব্যক বরেন্দ্র ভূমিতে নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করে ইতিহাসে চির অমর হয়ে আছেন।