বল্লাল সেনের রাজ্য জয়গুলোর বর্ণনা কর
বল্লাল সেনের রাজ্য জয়গুলোর বর্ণনা কর |
বল্লাল সেনের রাজ্য জয়গুলোর বর্ণনা কর
- অথবা, বল্লাল সেনের রাজ্য বিজয়সমূহ বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : পাল সাম্রাজ্যের ধ্বংসস্তূপের উপর প্রতিষ্ঠিত সেন শাসনামলের ইতিহাসে বল্লাল সেন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছেন ।
প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে যে, কয়জন শাসক তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য ইতিহাস অমর হয়ে আছেন তাদের মধ্যে বল্লাল সেনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বল্লাল সেন বিদ্যান ও বিদ্যাৎসাহী শাসক ছিলেন। তিনি পিতৃরাজ্য অক্ষুণ্ণ রাখেন এবং মগধে রাজ্য সম্প্রসারণের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখেন ।
→ বল্লাল সেন সম্পর্কে জানার উৎস : বল্লাল সেন সম্পর্কে জানা উৎসসমূহ নিম্নরূপ :
১. নৈহাটি তাম্রশাসন থেকে জানা যায় ।
২. ভাগলপুর প্রাপ্ত মূর্তিলিপি থেকে জানা যায় ৷
৩. বল্লাল সেন রচিত দানসাগর ও অদ্ভুতসাগর নামক গ্রন্থ থেকে।
৪. আনন্দভট্ট রচিত “বল্লাল চরিত' গ্রন্থ থেকে জানা যায় ৷বল্লাল সেনের পরিচয় ও সিংহাসন লাভ: বল্লাল সেনের পিতার নাম বিজয় সেন এবং তার মাতার নাম বিলাসদেবী।
তিনি তার পিতার মৃত্যুর পর আনুমানিক ১১৬০ খ্রিষ্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি তার সময়ে সমগ্র বাংলায় একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন।
বল্লাল সেনের রাজ্য জয় : বল্লাল সেন কর্তৃক রাজ্য জয় সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. মগধ জয় : মনোখের গ্রামে প্রাপ্ত মূর্তিলিপি হতে জানা যায় যে, বল্লাল সেন মগধে তার রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। গৌবিন্দপাল গৌড়ে রাজত্ব করার জন্য গৌড়েশ্বর উপাধি ধারণ করেছিলেন। তিনি মগধেও রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
১১৬২ খ্রিষ্টাব্দে তার রাজ্য বিনষ্ট হয়ে যায়। বল্লাল চরিত্রে যেহেতু বল্লাল সেন কর্তৃক মগধ জয়ের কথা উল্লেখ করে তাই অনুমান করা হয়। গৌবিন্দ বল্লাল সেনের নিকট পরাজিত ও ক্ষমতাচ্যুত হন।
২. মিথিলা জয় : বল্লাল চরিত থেকে জানা যায় যে, বল্লাল সেন তার পিতার রাজত্বকালে মিথিলা জয় করেন। ড. আর. সি. মজুমদার এ সম্পর্কে কারণের কথা উল্লেখ করেন। যথা-
নান্যদেবের মৃত্যুর পরবর্তী যুগে মিথলার কোনো বিশ্বাসযোগ্য বিবরণ ঐদেশীয় ইতিহাসে লিপিবদ্ধ নেই।প্রচলিত ও সুপ্রসিদ্ধ জনপ্রবাদ অনুসারে বল্লাল সেন স্বীয় রাজ্য রাঢ়, বরেন্দ্র, বাগড়ী, বঙ্গ ও মিথিলা এ পাঁচভাগে বিভক্ত করেন ।
বল্লাল সেনের পুত্র লক্ষ্মণ সেনের প্রচলিত সংবৎ মিথিলায় অদ্যাবধি প্রচলিত আছে। সুতরাং বলা যায় যে, বল্লাল সেন মিথিলা জয় করেছিলেন।
৩. বিহার জয় : বিহার জয় সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায় না তবে মনোসার মূর্তিলিপি থেকে জানা যায় যে, বল্লাল সেনের রাজত্বকালে বিহার তাঁর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বল্লাল সেন হয়তো তার পিতার মতো রাজ্য বিস্তার করতে পারেন নি কিন্তু তিনি তার পিতার মতো যে বীরযোদ্ধা ছিলেন এটা তার রাজ্য শাসন থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়।
কেননা তিনি তার রাজ্যের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বিধান করে পিতৃরাজ্য রক্ষায় যথেষ্ট কৃতিত্বের পরিচয় দেন। পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন রাজ্য জয় করেন। এছাড়া তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক।