বিজয় সেনের কৃতিত্ব আলোচনা কর । শাসক হিসেবে বিজয় সেনের কৃতিত্ব লিখ
বিজয় সেনের কৃতিত্ব আলোচনা কর । শাসক হিসেবে বিজয় সেনের কৃতিত্ব লিখ |
বিজয় সেনের কৃতিত্ব আলোচনা কর । শাসক হিসেবে বিজয় সেনের কৃতিত্ব লিখ
- অথবা, বিজয় সেনের শাসনব্যবস্থা সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
- অথবা, সেন রাজবংশ প্রতিষ্ঠায় বিজয় সেনের অবদান উল্লেখ কর ।
- অথবা, বাংলায় সেন শাসন প্রতিষ্ঠায় বিজয় সেনের কৃতিত্ব নিরূপণ কর।
উত্তর : ভূমিকা : প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে বিজয় সেনের নাম বিশেষভাবে স্মরণীয়। বিজয় সেন ছিলেন সর্বপ্রথম স্বাধীন ও শক্তিশালী রাজা।
তার শাসনকালেই সেন বংশের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি ১০৯৮ থেকে ১১৬০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন।
পালবংশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শেষ রাজা রামপালের অযোগ্যতা ও অদূরদর্শিতার ফলে বাংলায় যে অরাজকতা দেখা দেয় সেন বংশের রাজা বিজয় সেনের আবির্ভাবে তা দূরীভূত হয়ে দেশে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরে আসে।
একজন সামন্তরাজার পদ হতে নিজ বুদ্ধি ও বাহুবলে বিজয় সেন বাংলার সার্বভৌম ক্ষমতা অধিকার করেছিলেন। বিজয় সেন স্বীয় চাতুর্য, নৈপুণ্য, কূটকৌশল ও বুদ্ধিমত্তার গুণে সমগ্র বাংলা জয় করেছিলেন।
→ বিজয় সেনের কৃতিত্ব : নিয়ে বিজয় সেনের চারিত্রিক গুণাবলি ও কৃতিত্বসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. বাংলায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা : প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে একাদশ শতাব্দীর অন্তিমকালে পাল রাজবংশের অবসান ঘটিয়ে সেনদের উত্থান একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
বাংলার পালবংশের রাজা দ্বিতীয় মহিপালের রাজত্বকালে বরেন্দ্র ও সামন্ত চক্রের বিদ্রোহের সুযোগ নিয়ে সেন রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বিজয়সেন পশ্চিমবঙ্গে ক্রমশ স্বীয় আধিপত্য বিস্তার করেন এবং অবশেষে বাংলার পাল রাজবংশের রাজা মদনপালের রাজত্বকালে স্বাধীন সত্তার বিকাশ ঘটান।
২. উপাধি গ্রহণ : অসামান্য কর্মদক্ষতা, যোগ্যতা, কর্মনিষ্ঠা, বীরত্বে বিজয় সেনের মত রাজা আর দ্বিতীয় কেউ নেই। তার বিজয় গাধা সাফল্য ইতিহাসের পাতায় সোনার অক্ষরে লিখা রয়েছে।
যে জন্য এ সেন রাজার ছিল অনেক রকমের উপাধি । তার অনেকগুলো উপাধির মধ্যে পরমেশ্বর, মহারাজাধিরাজ, পরম মহেশ্বর, পরমভট্টারক উল্লেখযোগ্য।
৩. সেন বংশের গৌরব : অত্যন্ত সুদক্ষ, কর্মতৎপর, শিষ্টাচার সম্পূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন রাজা বিজয় সেন। তিনি তাঁর অসামান্য প্রতিভা দ্বারা বাংলায় পালবংশের উৎখাত করে সেখানে নিজেদের সেন শাসনের সূচনা করেন।
সেন বংশে তার মতো গৌরবান্বিত সেন শাসক দেখা যায় না। তার যোগ্যতা, প্রতিভা, চতুরতা তাকে সেন বংশের শীর্ষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে।
৪. সুদক্ষ যোদ্ধা : শুধুমাত্র একজন শাসক নয় একজন দুর্ধর্ষ বীর যোদ্ধা এবং একজন সুযোগ্য যোদ্ধা হিসেবে বিজয় সেনের ছিল খ্যাতি। একজন যোদ্ধা হিসেবে তার ছিল অসাধারণ প্রতিভা।
তার এ অসাধারণ দক্ষতা দ্বারা তিনি কোনো কোনো দিক দিয়ে একজন শাসকের চেয়েও একজন সুযোগ্য যোদ্ধা হিসেবে সুখ্যাতি লাভ করেন।
৫. সুযোগ্য শাসক : জীবনের প্রথম পর্যায়ে বিজয় সেন ছিলেন শুধুমাত্র একজন সাধারণ সামন্তরাজ। কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানে তিনি নিজ কর্মদক্ষতা, যোগ্যতা, চতুরতায় তিনি একজন শাসক হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছেন ৷
তিনি তার কর্মদক্ষতায়, যোগ্যতায় বাংলায় শান্তি পুনরায় ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। একজন সুযোগ্য শাসক হিসেবে তার ছিল গৌরবময় সুখ্যাতি।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বাংলার ইতিহাসে বিজয় সেনের নাম অবিস্মরণীয়। পাল আমলের অবসানের পর তিনি বাংলায় একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন।
বিজয় সেন ছিলেন সেন বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক। তিনি তার কর্মের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেন। তাই প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে বিজয় সেনের অবদান অপরিসীম ।