বাংলায় হাবশি শাসনামলের বিবরণ দাও

বাংলায় হাবশি শাসনামলের বিবরণ দাও
বাংলায় হাবশি শাসনামলের বিবরণ দাও

বাংলায় হাবশি শাসনামলের বিবরণ দাও

উত্তর : ভূমিকা : সুলতান জালালউদ্দিন মাহমুদ শাহ ১৪৮৪ সালে বরবক শাহ নামক জৈনিক হাবশি ক্রীতদাসের হাতে নিহত হন। এরপর গৌড়ের সিংহাসন হাবশিদের দখলে চলে যায়। 

রুকন উদ্দিন বরবক শাহ সর্বপ্রথম আফ্রিকার আবিসিনিয়া থেকে হাবশিদের ক্রীতদাস হিসেবে আনায়ন করেন। 

অতঃপর তারা ইলিয়াস শাহী বংশের বিশৃঙ্খলাপূর্ণ শাসনব্যবস্থার সুযোগ গ্রহণ করে হাবশি নেতা শাহজাদা সুলতান ফতেহ শাহকে হত্যা করে গৌড়ের সিংহাসনে বসেন। 

বাংলায় হাবশি শাসন মাত্র ছয় বছর (১৪৮৭- ১৪৯৩ খ্রি.) স্থায়ী ছিল । সর্বমোট ৪ জন হাবশি শাসক ছিলেন ।

বাংলায় হাবশি শাসনামলের বিবরণ : ১৪৮৭ সাল থেকে ১৪৯৩ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হাবশি শান ইতিহাসে ৪ জন শাসক তাদের শাসনকার্য পরিচালনা করেন। 

নিম্নে তাদের সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

১. সুলতান শাহজাদা : জালালউদ্দিন ফতেহ শাহকে হত্যা করে ১৪৮৭ সালে বরবক শাহ সুলতান শাহজাদা উপাধি ধারণ করে গৌড়ের মনসলে বলেন। 

তিনি প্রজাদের উপর অপরিনাম নির্যাতন ও অত্যাচার চালাতে থাকেন। সুলতান শাহজাদা রাষ্ট্রের গুরুত্ব পদে নিকট আত্মীয়স্বজনদেরকে নিযুক্ত করেন। 

কিন্তু প্রধান অমাত্য ও সেনাপতি হাবশি মালিক আন্দিল তার বিরুদ্ধচারণ করেন। এর সুলতান শাহজানা হত্যা করে নিজেই ক্ষমতা দখল করেন। সুলতান শাহজালার শাসনকাল মাত্র কয়েক মাস ছিল।

২. মালিক আন্দিল : ১৪৮৭ সালে সুলতান শাহজাদাকে হত্যা করে মালিক আদিল সাইফউদ্দিন ফীরুজ শাহ উপাধি ধারণ করে সিংহাসনে আরোহণ করেন। 

তিনি তিন বছর রাজত্বকাল করেন। তার শাসনামল কিছুটা গৌরবময় ছিল। তিনি একাধারে বিচক্ষণ, উদার ও ন্যায়পরায়ণ ছিলেন। 

প্রজাদের সুখ শান্তির প্রতি তিনি সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখতেন। তিনি যুক্ত হস্তে দান করতেন। মালিক আন্দিল শিক্ষা সাহিত্যে ও শিল্পের প্রতি অনুরাগী ছিলেন। 

গৌড় ও ফিরোজা মিনার তার অসামান্য স্থাপত্য কীর্তির পরিচয় বহন করে। কোনো বর্ণনায় জানা যায় তিনি অসুস্থ হয়ে মারা যান। রিয়াজ-উস-সালাতীনের বর্ণনানুসারে প্রাসাদরক্ষী সেনাদলের হস্তে মালিক আদিল নিহত হয়েছিলেন।

৩. মাহমুদ শাহ (দ্বিতীয়) : মালিক আন্দিলের মৃত্যুর পর ১৪৯০ সালে মাহমুদ শাহ (২য়) গৌড়ের সিংহাসনে বসেন। মুদ্রা ও লিপি থেকে মালিক আন্দিলের পর সুলতান নাসির উদ্দিন মাহমুদ শাহের পরিচয় পাওয়া যায়। 

এই নামে আরও একজন সুলতান ছিল বলে তাকে দ্বিতীয় নাসির উদ্দিন শাহ বলা হয়ে থাকে। তাকত-ই- আকরী, তারিক-ই ফিরিশতা ও রিয়াজ-উস-সালাতীনের মতে তিনি সাইফউদ্দিন ফিরুজ শাহের জ্যেষ্ঠ পুত্র ছিলেন। 

দ্বিতীয় নাসির উদ্দিন মাহমুদ শাহের রাজত্বকালে হাবণ খান নামক একজন হাবশি ক্রীতদাস রাজকোষ ও শাসনব্যবস্থার সর্বময় কর্তা হয়ে উঠেন। 

মাহমুদ শাহ তার হাতের পুতুলে পরিণত হয়। সদর বদর নামে অন্য একজন হাবশী হাবশ খানের ঈর্ষাণিত হয়ে তাকে হত্যা করে রাজ্যের সর্বময় কর্তা হন। 

তার কিছুদিন পর পাইকদের সাথে ষড়যন্ত্র করে নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহকে হত্যা করেন। নাসির উদ্দিন মাহমুদের শাসনকাল মাত্র কয়েক মাস ছিল।

৪. শামসুদ্দিন মুজাফফর শাহ : নাসির উদ্দিন মাহমুদ শাহকে হত্যা করে বদর শামসুদ্দিন উপাধি ধারণ করে সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি প্রায় দুই বছর (১৪৯১ - ১৪৯৩ খ্রি.) রাজত্ব করেন । 

তিনি উদ্ধত, নৃশংস ও রক্তপিপাসু প্রকৃতির শাসক ছিলেন। সুলতান হয়ে শামসুদ্দিন মুজাফফর শাহ বহু শিক্ষিত,ধার্মিক ও সম্ভ্রান্ত লোককে হত্যা করেন। 

রাজস্ব সংগ্রহের ব্যাপারে প্রজাগণের উপর অমানবিক চাপ প্রয়োগ করতেন। এর ফলে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। 

সৈয়দ আলাউদ্দিন হোসেন শাহ নামে একজন বিচক্ষণ ব্যক্তি তার উজির ছিলেন। অবশেষে অমাত্যদের বিদ্রোহে সুলতান মুজাফফর শাহ নিহত হন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলায় হাবশি শাসনকাল ছিল অন্যায় অবিচার, বিদ্রোহ, ষড়যন্ত্র আর হতাশায় পরিপূর্ণ ।

হাবশি শাসনকাল ছিল বাংলার ইতিহাসে এক কলঙ্কময় অধ্যায়। প্রত্যেক হাবশি শাসকই অন্তর্দ্বন্দ্বে লিপ্ত ছিল। এজন্য তাদের কেউ স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেনি। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ