বাংলার সুলতান রুকনউদ্দিন বরবক শাহের চরিত্র ও কৃতিত্ব আলোচনা কর
বাংলার সুলতান রুকনউদ্দিন বরবক শাহের চরিত্র ও কৃতিত্ব আলোচনা কর |
বাংলার সুলতান রুকনউদ্দিন বরবক শাহের চরিত্র ও কৃতিত্ব আলোচনা কর
- অথবা, সুলতান রুকনউদ্দিন বরবক শাহের চরিত্র ও কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর।
- অথবা, বাংলার সুলতান রুকনউদ্দিন বরবক শাহের চরিত্র ও কৃতিত্ব সম্পর্কে যা জান লিখ।
উত্তর : ভূমিকা : বাংলার ইতিহাসে সুলতান রুকনউদ্দিন বরবক শাহ এক অন্যতম নাম। বাংলায় তার রাজত্বকাল একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
ফলে শাসক হিসেবে তিনি একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছেন। তিনি ছিলেন সুলতান নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহের পুত্র।
পিতার মৃত্যুর পর তিনি সিংহাসনে আরোহণ করে অসাধারণ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। যুদ্ধ ও শান্তি উভয় ক্ষেত্রেই তার অপূর্ব যোগ্যতা ও দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়।
11সুলতান রুকনউদ্দিন বরবক শাহ কৃতিত্বের সাথে দীর্ঘ ২১ বছর বা এর চেয়ে সামান্য বেশি সময় রাজত্ব করেন। তার রাজত্বকাল বাংলাদেশে মুসলিম শাসনের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করে আছে।
— রুকনউদ্দিন বরবক শাহের সিংহাসনে আরোহণ : বাংলার সুলতান নাসিরউদ্দিন বরবক শাহের মৃত্যুর পর তারই সুযোগ্য পুত্র রুকনউদ্দিন বরবক শাহ নাম ধারণ করে ১৪৫৫ খ্রিষ্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করেন।
সিংহাসনে আরোহণের পূর্বেই তিনি সাতগায়ের প্রাদেশিক শাসনকর্তা ছিলেন। এ সময় সাতগাঁয়ের প্রাদেশিক শাসনকর্তা হিসেবে তিনি যথেষ্ট দক্ষতা ও কৃতিত্বের পরিচয় দেন।
তিনি বিনা রক্তপাতের বিনিময়ে সিংহাসনে আরোহণ করেন। অতঃপর তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে বাংলার শাসনকার্য পরিচালনা করেন।
সুলতান রুকনউদ্দিন বরবক শাহের কৃতিত্ব : রিয়াজ- উস-সালাতিনের বর্ণনা অনুযায়ী সুলতান রুকনউদ্দিন বরবক শাহ বিনয়ী ও ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিলেন।
তার আমলে বাংলার জনগণ সুখে-শান্তিতে বসবাস করতো। তারিখ-ই-ফিরোজ শাহীর বর্ণনা অনুসারে, সুলতান বরবক শাহ সুবিচারক ও সুপণ্ডিত ছিলেন।
নিম্নে তার কৃতিত্ব সম্পর্কে মূল্যায়ন করা হলো :
১. হৃতরাজ্য পুনরুদ্ধার : আরাকানি ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, আরাকান রাজা মের খনি (১৪৩৪-'৫৯ খ্রি.) রামু (বর্তমান চট্টগ্রামের দক্ষিণ প্রান্তে) ও তার দক্ষিণ পার্শ্বস্থ বাংলার সমগ্র অঞ্চল জয় করে এবং তারও উত্তরাধিকারী বসোআহপা (১৪৫৯-১৪৮২ খ্রি.) চট্টগ্রাম অঞ্চল দখল করে নেয়।
সুলতান রুকনউদ্দিন বরবক শাহ ১৪৭৪ খ্রিস্টাব্দে এসব হৃতরাজ্য পুনরুদ্ধার করে বিশেষ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন।
২. রাজ্যাভিযান : সুলতান রুকনউদ্দিন বরবক শাহ ছিলেন একজন শ্রেষ্ঠ বিজেতা। তিনি অনেক নতুন রাজ্যে অভিযান পরিচালনা করেন এবং সেগুলোকে নিজের রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন।
রিসালাত উত্স মুহাनা' আছে বরবক শাহের অনেক বিজয়ের কাহিনি উল্লিখিত রয়েছে। বরবক শাহ দক্ষিণ-পশ্চিম মুসলিম বিদ্বেষী উড়িষ্যা রাজ্যের অভিযান পরিচালনা করেছিলেন।
উত্তর-পূর্ব কামরূপেও তিনি অনেক অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। ইসমাইল গাজী নামে একজন সেনাপত্তির উপর এ দু'টি অভিযানের দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছিল। এসব অভিযানে তিনি | সফলতা অর্জন করেছিলেন বলে জানা যায় ।
৩. ভরত সিংহের বিদ্রোহ দমন : সুলতান বরবক শাহ কেলার রায় নামক একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে ত্রিহুতে রাজস্ব আদায় ও সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন।
এ সময়ে পূর্বোক্ত রাজার পুত্র ভরত সিংহ বিদ্রোহ ঘোষণা করে কেনার রায়কে অপসারিত করেন। বরবক শাহ সময়োচিত শাস্তি প্রদান এবং বিদ্রোহ দমনে উদ্যোগ নিলে ত্রিহতের রাজা তার বশ্যতা স্বীকার করে অনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দেয়।
৪. নিহত রাজ্য জয় : বরবক শাহ ১৪৭০ খ্রিষ্টাব্দে ত্রিহুত রাজ্য অভিযান করেন। এ সময় হাজীপুর ও তৎসন্নিহিত অঞ্চলগুলো অয় | করে তিনি স্বীয় রাজ্যভুক্ত করেন।
উত্তরে বুড়ি পণ্ডক নদী পর্যন্ত তার | প্রভাব বিস্তৃত হয়। বরবক শাহ ব্রিতের রাজাকে তার সামস্ত হিসেবে উত্তর অংশ শাসন পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন।
৫. কামরূপ রাজার বিরুদ্ধে অভিযান : রিসালাত-উস-সুহানা' [ গ্রন্থে বরবক শাহের সময় কামরূপের রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
কামরূপের রাজা কামেশ্বর বারবার বাংলার সৈন্যবাহিনীকে পরাজিত করেন। ফলে বরবক শাহ সেনাপতি ইসমাইল গাজীকে কামরূপের বিরুদ্ধে পাঠান।
ইসমাইল গাজী বীরবিক্রমে যুদ্ধ করেও পরাজিত হন। এ যুদ্ধে ইসমাইল গাজী পরাজিত হলেও তার অলৌকিক কার্যকলাপের জন্য কামরূপের রাজা তার বশ্যতা স্বীকার করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
৬. মান্দারণ দুর্গ পুনরুদ্ধার : বাংলার মুসলিম রাজ্যের সীমান্ত দুর্গ হিসেবে মুসলিম বিজয়ের প্রথম দিক হতে গৌড়ের মান্দারণ দুর্গের গৌরব ছিল। রুকনউদ্দিন বরবক শাহের শাসনামলে এর গুরুত্ব ছিল অনেক বেশি।
রিসালাত-উস- সুহাদা' গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, উড়িষ্যার রাজা গজপতি দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তের মান্দারণ দুর্গ দখল করলে বরবক শাহ তাকে পরাজিত ও নিহত করে মান্দারণ দুর্গ পুনরুদ্ধার করেন।
৭. হাবশি শাসনের দ্বার উন্মোচন : রুকনউদ্দিন বরবক শাহ বাংলায় হারসি শাসনের দ্বার উন্মোচন করেন। তারিখ-ই- ফিরিশতায় উল্লেখ রয়েছে বরবক শাহ বাংলায় ৮০ হাজার হাবশি সৈন্য আনয়ন করেছিলেন এবং হাবশিদের প্রাদেশিক শাসনকর্তা, মন্ত্রী, অমাত্য প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগদান করেছিলেন। হাবশিদের আমদানির মূল কারণ ছিল তাদের শারীরিক শক্তি- সামর্থ্য ও কর্মদক্ষতা।
৮. উনার শাসক : সুলতান রুকনউদ্দিন বরবক শাহ একজন উনার ও ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিলেন। সমসাময়িককালে তার মতো উদার মানসিকতাসম্পন্ন শাসক শুধু বাংলার ইতিহাসেই দর, উপমহাদেশের ইতিহাসেও ছিল বিরল। তার শাসনকान বাংলার জনগণ অত্যন্ত সুখে-শান্তিতে বসবাস করতো।
৯. জ্ঞানী ও পণ্ডিতগণের পৃষ্ঠপোষকতা : বরবক শাহ যে উমার ও অসাম্প্রদায়িক মনোভাবসম্পন্ন মানুষ ছিলেন তার প্রমাণ সৃষ্ট হয় হিন্দু জ্ঞানী-গুণী ও কবি-সাহিত্যিকদের পৃষ্ঠপোষকতা থেকে।
তিনি কেবল পণ্ডিতই ছিলেন না, বিদ্যা ও সাহিত্যের উদার পৃষ্ঠপোষকও ছিলেন, অনেক বিজ্ঞান পণ্ডিতগণ তার পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিলেন। তৎকালীন বিখ্যাত কবি ও পৃথিত ব্যক্তিগণ তার রাজসভাকে অলঙ্কৃত করেছিলেন।
১০. বাংলা সাহিত্যের বিকাশ সাধন : সুলতান বরবক শাহের শাসনামলে বাংলা সাহিত্যের ব্যাপক বিকাশ সাধিত হয়। বিখ্যাত কাৰ্য শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্যের রচয়িতা মালাধর বসু এ সময়ের একজন শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক ছিলেন।
তিনি বরবক শাহ কর্তৃক গুণরাজ খান উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। বাংলা মহাকাব্য রামায়ণের রচয়িতা কৃত্তিবাস ওঝা বরবক শাহের সমসাময়িক ছিলেন ও অনুগ্রহ লাভ করেছিলেন।
১১. স্থাপত্যশিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা : সুলতান বরবক শাহ স্থাপত্যশিল্পেরও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তার প্রাসাদ সম্পর্কে একটি বর্ণনায় পাওয়া যায়, এর প্রথম যারে উদ্যানের মতো একটি শান্ত ও আনন্দদায়ক পরিবেশ বিরাজ করতো।
এ উদ্যানের নিচ দিয়ে রমণীয় জলধারা' প্রবাহিত হতো। প্রাসাদটির মধ্যে 'তোরণ অপূর্ব সুন্দর এক বিশেষ প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
গৌড়ের 'দাখিল দরওয়াজা' নামক সুন্দর তোরণটিও তারই অমরকীর্তি ছিল। এছাড়াও তিনি যে রামপ্রাসাদে বাস করতেন তার স্থাপত্য নকশা এখনো যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংরক্ষিত আছে।
এছাড়া তিনি আরো অনেক সুন্দর সুন্দর স্থাপত্যকর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন যা তাকে ইতিহাসের এক বিশিষ্ট স্থানে অমর করে রেখেছে। এই স্থাপত্যশিয়গুলোই তার শৈল্পিক মননশীলতার পরিচয় মেলে।
১২. প্রাচীন শিলালিপি ও মুদ্রা আবিষ্কার : মুলতান করুনউদ্দিন বরবক শাহের আমলের অনেক শিলালিপি ও মুদ্রা আবিষ্কৃত হয়েছে। এগুলোর গঠন প্রকৃতি ছিল অত্যন্ত মনোরম ও শিল্পমণ্ডিত।
তার শাসনকালের বহু নিদর্শন আলোও বিদ্যমান রয়েছে। এসব নিদর্শন বাংলার স্থাপত্যশিল্পের বিকাশে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে।
১৩, জনকল্যাণমূলক কার্যাবলি : বরবক শাহ ছিলেন একজন জনকল্যাণকামী শাসক। জনকল্যাণকর শাসক হিসেবে তার পরিচিতি ছিল।
তার রাজত্বকালে পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। যা পরবর্তীকালে ইয়ারউদ্দিন ফলিকার মাজার নামে পরিচিতি লাভ করে।
সুলতান রাস্তাঘাট নির্মাণসহ জনগণের নিরাপত্তা বিধানে জোরদার করে পথিমধ্যে নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ করেন।
স্কুল, মাদরাসা, মসজিদ, খানকাহ, চিকিৎসাকেন্দ্র প্রভৃতি নির্মাণেও তিনি খ্যাতি অর্থান করেছিলেন। এছাড়াও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সেচ ব্যবস্থার প্রচলন করেন। এতে করে উৎপাদন ব্যবস্থা বহুগুণে বৃদ্ধি হয়।
রুকনউদ্দিন বরবক শাহের চরিত্র : সুলতান রুকনউদ্দিন বরবক শাহ ছিলেন একজন ধর্মপরায়ণ ও কঠোর প্রকৃতির শাক। তিনি আইন ও বিচার ব্যবস্থার কঠোর ছিলেন।
তার কঠোর আইন থেকে কেউই রেহাই পেত না। তবে তিনি কবি, সাহিত্যিক ও পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গের সমাদার করতেন। তার মধ্যে নিম্নোক্ত চারিত্রিক গুণাবলির সমাবেশ ঘটেছিল।
১. উত্তম চরিত্রের অধিকারী : সুলতান রুকনউদ্দিন বরবক শাহ ছিলেন একজন চরিত্রবান ব্যক্তি। তিনি উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন।
অতুলনীয় চরিত্রগুণের কারণেই তিনি দীর্ঘ ২১ বছরের অধিক সময় রাজত্ব করেন বাংলার শাসনব্যবস্থায়। সততা, সহনশীলতা এবং উদারতা ছিল তার চরিত্রের প্রধান দিক।
২. ধর্মপরায়ণ মানুষ : সুলতান রুকনউদ্দিন বরবক শাহ শাসক হিসেবে যেমন নীতিবান ছিলেন, তেমনি মানুষ হিসেবেও ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক প্রকৃতির।
ধর্মের ব্যাপারে তার মধ্যে কোনো উদাসীনতা পরিলক্ষিত হয়নি। শরীয়তের বিভিন্ন বিষয়গুলো তিনি কখনও উপেক্ষা করতেন না।
৩. ন্যায়বিচারক : বাংলার ইতিহাসে সুলতান রুকনউদ্দিন বরবক শাহ ন্যায়বিচারক হিসেবে সুখ্যাতি লাভ করেন। ন্যায়বিচারক হিসেবে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন।
বিচারকার্যে দিন ছিলেন অত্যন্ত কঠোর প্রকৃতির। অন্যায়, অনাচার ও অবিচারমূলক কোনো কিছুর বিচার তিনি দৃঢ়হপ্তে করতেন। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন একেবারে আপসহীন।
৪. কঠোর ও নিষ্ঠুর : সুলতান বরবক শাহ যেমন একদিকে ছিলেন নম্র, ভদ্র, নীতিবান ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী, তেমনি অন্যদিকে ছিলেন কঠোর ও নিষ্ঠুর প্রকৃতিরও মানুষ।
সেনাপতি ইসমাইল গাজীকে সততা, যোগ্যতা, সাহসিকতা এবং বিচক্ষণতার জন্য তিনি অত্যন্ত ভালোবাসতেন, কিন্তু ঘোড়াঘাটের দুর্গাধ্যক্ষ ভাদসী রায় ইসমাইলের বিরুদ্ধে রাজদ্রোহের অভিযোগ আনলে বরবক শাহ ইসমাইল গাজীকে প্রাণদণ্ডে দয়িত করেন।
৫. প্রজাহিতৈষী : রুকনউদ্দিন বরবক শাহ একজন নিষ্ঠাবান প্রজাহিতৈষী শাসক ছিলেন। প্রজাদের কল্যাণে তিনি সদাতৎপর থাকতেন।
প্রজা সাধারণ যাতে সুখে-শান্তিতে বাস করতে পারেন সেই লক্ষ্যে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যেতেন। প্রজাসাধারণ যাতে কোনো প্রকার ক্ষতি ও সমস্যায় পতিত না হয় সেদিকে তিনি দৃষ্টি রাখতেন।
কোনো নাগরিক খাতে রাষ্ট্রীয় শাসন-শোষণের যাঁতাকলে নিষ্পেশিত না হয় তার যথাযথ ব্যবস্থাও তিনি গ্রহণ করেছিলেন।
→ উদার ও সহনশীলতা : সুলতান রুকনউদ্দিন বরবক শাহ একজন উদার ও সহনশীল শাসক ছিলেন। তার উদারতায় রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক সন্তুষ্ট ছিলেন।
মূলত উদারতা ও সহনশীলতার কারণেই সুদীর্ঘ ২১ বছরেরও অধিক সময় জনগণের খেদমত করার তার সুযোগ হয়েছিল। সকল ধর্ম ও বর্ণের লোক তার উদারতা ও সহনশীলতার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ।
→ সুলতান রুকনউদ্দিন বরবক শাহের মৃত্যু : বাংলা ইতিহাসে সুলতান রুকনউদ্দিন বরবক শাহের রাজত্বকাল এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। তিনি যেমন জনগণকে ভালোবাসতেন তেমনি জনগণও তাকে শ্রদ্ধা ভক্তি করতো।
বাংলার গৌরব বৃদ্ধিতে তিনি ছিলেন সদাসতর্ক। মোটকথা, তার শাসনকালে বাংলার শ্রী যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছিল। এ মহান রাজা ২১ বছর রাজত্বকালের অবসান ঘটিয়ে ১৪৭৪ সালে না ফেরার দেশে গমন করেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুলতান রুকনউদ্দিন বরবক শাহ একজন কীর্তিমান শাসক ছিলেন। তার রাজত্বকাল বিচার বিবেচনা করলে বাংলার সুলতানদের মধ্যে তাকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে অধিষ্ঠিত করা যায়।
তার শাসনামলে বাংলা সুখী ও সমৃদ্ধশালী জনপদে পরিণত হয়েছিল। তিনি প্রজাসাধারণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য তার রাজ্যে বহুসংখ্যক জনহিতকর কার্যাবলি সম্পন্ন করেন।
তার বিভিন্ন স্থাপত্যকীর্তি আজো বাংলার ইতিহাসে তাকে স্মরণীয় করে রেখেছে। তাঁর শাসনকাল ছিল ইতিহাসের এক স্মরণীয় অবোলোকিত অধ্যায়। তিনি জনগণের জন্য আলোকবর্তিতা স্বরূপ উদয় হয়েছিল বাংলার ইতিহাসে।