বাংলার মুঘলদের সঙ্গে ঈসা খানের সংঘর্ষের বিবরণ দাও
বাংলার মুঘলদের সঙ্গে ঈসা খানের সংঘর্ষের বিবরণ দাও |
বাংলার মুঘলদের সঙ্গে ঈসা খানের সংঘর্ষের বিবরণ দাও
উত্তর : ভূমিকা : বাংলার বারো ভূঁইয়াদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিলেন সোনারগাঁও-এর ঈসা খান। বারো ভূঁইয়া বলতে সাধারণত মুঘল আমলে বাংলায় স্বাধীনভাবে রাজত্বকারী বারোজন জমিদারকে বোঝায়।
ঈসা খান ছিলেন সে যুগের শ্রেষ্ঠ জমিদার। যিনি প্রতাপশালী মুঘল সম্রাট আকবরের দুর্ধর্ষ বীর সেনাপতি মানসিংহকে যুদ্ধে পরাজিত করেন ।
→ মুঘলদের সাথে ঈসা খানের সংঘর্ষের বিবরণ : নিম্নে ঈসা খান সম্পর্কে তুলে ধরা হলো :
১. ঈসা খাঁর পরিচয় : ঈসা খানের দাদা ভগীরথ বাইস গোত্রের রাজপুত্র সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি অযোধ্যা থেকে বাংলায় আসেন এবং বাংলার সুলতান গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহ-এর অধীনে দেওয়ানের চাকরি গ্রহণ করেন।
তাঁর পুত্র কালিদাস গজদানী তাঁর মৃত্যুর পরে এই পদটি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন। তিনি সুলতান গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহের মেয়ে সৈয়দা মোমেনা খাতুনকে বিয়ে করে ব্রাহ্মনবাড়িয়ার সরাইল পরগণা ও পূর্ব মোমেনশাহী অঞ্চলের জায়গীরদারী লাভ করেন। পরে ঈসা খান পিতার জায়গীরদারীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
২. ঈসা খাঁর রাজ্য : ঐতিহাসিক আবুল ফজল ঈসা খাঁকে সর্বদা ভাটি অঞ্চলের অধিপতিরূপে উল্লেখ করেছেন। ঈসা খাঁর রাজ্য ছিল ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলার পূর্বভাগ, কুমিল্লা ও সিলেট জেলার পশ্চিমাংশ এবং গঙ্গা ও মেঘনা নদীবিধৌত অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। তার রাজধানী ছিল সোনারগাঁও।
৩. মুঘলদের সাথে সংঘর্ষ : ঈসা খাঁ স্বীয় স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আজীবন মুঘলদের সাথে যুদ্ধ করেন। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মুঘলদের বশ্যতা স্বীকার করেননি।
মুঘল নৌবাহিনী যখন বারো ভূঁইয়াদের বিরুদ্ধে প্রেরিত হয়ে পূর্ব বাংলায় অবস্থান করছিল, ভাটির জমিদার ঈসা খাঁ সাথে সাথে নিজ নৌ-বহরসহ মুঘলদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। এ যুদ্ধে মুঘল সুবাদার মুনিম খান পরাজিত হন।
৪. মানসিংহের সাথে যুদ্ধ : ১৫৯৪ সালে মানসিংহ বাংলার সুবাদার নিযুক্ত হয়ে পরের বছর ঈসা খাঁর বিরুদ্ধে আক্রমণ করেন। মানসিংহের নৌবাহিনী অপর্যাপ্ত হওয়ায় মুঘল বাহিনী ঈসা খাঁর বিরুদ্ধে টিকে থাকতে পারেনি।
ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে সন্ধি হয়। শেষ জীবনে তিনি সম্রাট আকবরের বশ্যতা স্বীকার করলে। সম্রাট তাকে “মসনদ-ই-আলা” উপাধিতে ভূষিত করেন।
উপসংহার : ঈসা খানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের নিকট মুঘল বাহিনী হার মানলেও তিনি মুঘলদের সাথে সদ্ভাব বজায় রেখে শান্তিপূর্ণভাবে রাজ্য শাসন করতে চেয়েছিলেন। তাই মুঘলদের সাথে সন্ধি স্থাপনে আগ্রহী হলেও তিনি তাদের নিকট কখনো মাথা নত করেননি ।