বাংলার হিন্দু সমাজে কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তন ও প্রসার আলোচনা কর
বাংলার হিন্দু সমাজে কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তন ও প্রসার আলোচনা কর |
বাংলার হিন্দু সমাজে কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তন ও প্রসার আলোচনা কর
- অথবা, বল্লাল সেনের আমলে কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তন ও প্রসার বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : বল্লাল সেনের শাসনকাল বাংলার ইতিহাসে একবিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। তিনি তার পিতার মৃত্যুর পর বাংলার সেন সিংহাসনে আরোহণ করেন।
তিনি সিংহাসনে আরোহণ করে পিতৃরাজ্য রক্ষা এবং এর সীমানা বৃদ্ধিতে যথেষ্ট কৃতিত্বের পরিচয় সেন। তাছাড়া তিনি সিংহাসনে আরোহণ করে হিন্দু সমাজে কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তক হিসেবেও খ্যাতি লাভ করেছিলেন।
→ বাংলার হিন্দু সমাজে কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তন ও প্রসার : নিম্নে বাংলার হিন্দু সমাজে কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তন ও প্রসার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তন : বল্লাল সেন তান্ত্রিক হিন্দুধর্মের প্রতি অনুসারী ছিলেন। তাঁর প্রচেষ্টায় বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে ব্রাহ্মণ্য ধর্ম প্রচার ও প্রসার লাভ করে।
বঙ্গীয় কুলজি সাহিত্যসমূহে কৌলিন্য প্রথার উৎপত্তির সাথে বল্লাল সেনের নাম অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। বিভিন্ন ধরনের ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায় যে, বল্লাল সেন ব্রাহ্মণ, বৈশ্য ও কায়স্থ এ তিন শ্রেণির হিন্দুদের মধ্যে কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তন করেন।
ঐতিহাসিক ড. নীহাররঞ্জন রায়ের মতে, বল্লাল সেন ছিলেন ঘোর রক্ষণশীল। তিনি সমাজের উচ্চশ্রেণির মধ্যে কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তন করে জাতিভেদ প্রথাকে তীব্রতর করেন।
২. কৌলিন্য প্রথার প্রসার : বল্লাল সেন কৌলিন্য প্রথা প্রবর্তনের পাশাপাশি এ প্রথার প্রসার এর জন্য বহু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। অনেক ঐতিহাসিক বলেন, তিনি আরাকান, উড়িষ্যা এবং নেপালে বহু ধর্ম প্রচারক নিয়োগ করেছিলেন।
তার ধর্ম প্রচার শুধু গৌড় রাজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। তার প্রচেষ্টায় সমগ্র বাংলা, মিথিলা, ম্যাধ, কলিঙ্ক প্রভৃতি অঞ্চলে কৌলিন্য প্রথা প্রসারতা লাভ করে। আঠার ও উনিশ শতকে বাংলায় কৌলিন্য প্রথার বিস্তৃতি ঘটে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বল্লাল সেন ছিলেন তাঁর পিতার মতোই শৈব এবং ধর্ম প্রচার ও প্রসার করার জন্য যথেষ্ট আগ্রহী। এরই ধারাবাহিকতা স্বরূপ তিনি হিন্দু সমাজের মধ্যে কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তন ও প্রসার ঘটান।
বল্লাল সেন তার সমাজ সংস্কারকমূলক কাজের জন্য ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন । বিশেষ করে কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তন করে।