বাংলার বিভিন্ন সাহিত্য অনুবাদে হুসেন শাহের পৃষ্ঠপোষকতা বর্ণনা কর
বাংলার বিভিন্ন সাহিত্য অনুবাদে হুসেন শাহের পৃষ্ঠপোষকতা বর্ণনা কর |
বাংলার বিভিন্ন সাহিত্য অনুবাদে হুসেন শাহের পৃষ্ঠপোষকতা বর্ণনা কর
- অথবা, সাহিত্য অনুবাদ ও রচনায় হুসেন শাহের উৎসাহ বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : বাংলা সাহিত্য আলাউদ্দিন হুসেন শাহের আমলে প্রস্ফুটিত হয়েছিল। হুসেন শাহ বাংলা সাহিত্য বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
তিনি বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে একটি বিপ্লব ঘটাতে ভূমিকা রেখেছিলেন।1
→ বাংলা সাহিত্য অনুবাদে হুসেন শাহের পৃষ্ঠপোষকতা : আলাউদ্দিন হুসেন শাহের শাসনামলে বাংলা অনুবাদ সাহিত্যের বিকাশ লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন ভাষার গ্রন্থ এসময়ে বাংলায় অনুবাদ হতে থাকে। নিম্নে আলাউদ্দিন হুসেন শাহের বাংলা সাহিত্যে অনুবাদের ক্ষেত্রে কি ভূমিকা রেখেছিলেন তা বর্ণনা করা হলো-
১. সংস্কৃতি ভাষা চর্চা : মুঘলমানদের আগমনের পূর্বে ভারতবর্ষে সাধারণ হিন্দুরা সংস্কৃত ভাষার চর্চা করতে পারত না। শুধুমাত্র ব্রাহ্মণ শ্রেণি সংস্কৃত ভাষা ব্যবহার করতো।
মুঘলমানদের শাসনের ফলে সংস্কৃত ভাষার ব্যবহার সকলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। হুসেন শাহের সময়ে সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য চর্চা বেড়ে যায় ।
২. ধর্মগ্রন্থ অনুবাদ : হুসেন শাহ ধর্মগ্রন্থ অনুবাদের ক্ষেত্রে উৎসাহ প্রদান করে। হুসেন শাহের প্রাদেশিক শাসক পরাগল খানের উৎসাহে মহাভারতের অনুবাদ করেন কবীন্দ্র পরমেশ্বর ও কীর্তিবাস রামায়ণ রচনা করেন ।
৩. হিন্দুদের সাহিত্য রচনায় উৎসাহ প্রদান : হুসেন শাহের সময়ে হিন্দুদের সাহিত্য রচনায় উৎসাহ প্রদান করা হয়। বডুচন্দ্রীদাস এ সময়ে ১৬ খণ্ডে বিভক্ত শ্রীকৃষ্ণকীর্তন রচনা করেন। মলাধর বসু শ্রীকৃষ্ণ বিজয় রচনা করেন।
৪. উদার মনোভাব : হুসেন শাহের উদার মনোভাব সাহিত্য রচনা ও অনুবাদের ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। শ্রীচৈতন্য এসময়ে ধর্মপ্রচার করলেও কোনো বাধা দেয়া হয়নি। ফলে সকল ধর্মের লোক তাদের মেধার বিকাশে উৎসাহিত হয়।
৫. মুঘলমানদের সাহিত্যকর্ম : হুসেন শাহের শাসনকালে মুঘলমানরাও সাহিত্য রচনায় অবদান রাখে। মুঘলমানরা ইসলাম ধর্মের নানা গ্রন্থ অনুবাদ করে।
এসব অনুবাদকে সাহিত্যে রূপদান করা হয়। এসময়কার রচনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ইউসুফ- জোলেখা, লায়লি-মজনু, হোসেন বিজয়, রসুল বিজয় প্রভৃতি গ্রন্থ ।
উপসংহার : আলোচনার পরিশেষে বলা যায়, হুসেন শাহের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা সাহিত্য নবরূপ লাভ করেছিল। বাংলা সাহিত্যের নানা বিষয় এসময়ে বিকাশ লাভ করে। তবে এসময়কার সাহিত্য ছিল পদ্যাকারে।
কেননা, সে সময়ে বাংলা গদ্যের প্রচলন হয়নি। যাহোক, বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে: হুসেন শাহ যে অবদান রাখেন তা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তাকে অমর করে রেখেছে।