বাংলার বার ভূঁইয়াদের মধ্যে ঈসা খান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর

বাংলার বার ভূঁইয়াদের মধ্যে ঈসা খান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর
বাংলার বার ভূঁইয়াদের মধ্যে ঈসা খান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর

বাংলার বার ভূঁইয়াদের মধ্যে ঈসা খান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর

  • অথবা, বাংলার বার ভূঁইয়াদের মধ্যে ঈসা খান সম্পর্কে বিবরণ দাও ।
  • অথবা, বার ভূঁইয়া কারা? বার ভূইয়া নেতা ঈসা খার সংগ্রামের ইতিহাস বর্ণনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যবর্তী কাল হতে সপ্তদশ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে বার ভূঁইয়াদের আবির্ভাব বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য ঘটনা। 

১৫৭৬ সালে রাজমহলের যুদ্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নরপতি দাউদের পতনের পর থেকে বার ভূঁইয়াগণই বিভিন্ন সময়ে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে স্বীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। 

এজন্যে অনেকে সে সময়কার বাংলাদেশকে “বার ভূঁইয়ার দেশ” হিসেবে অভিহিত করেন। বারো ভূঁইয়াদের মধ্যে অন্যতম হলেন ঈসা খাঁন !

→ ঈসা খান সম্পর্কে আলোচনা : নিম্নে ঈসা খান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :

১. ঈসা খানের পরিচয় : ঈসা খান ছিলেন বাংলার বার ভূঁইয়াদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী। তার বংশ পরিচয় সম্বন্ধে তেমন কিছু জানা যায়নি। 

কথিত আছে, ঈসা খানের পিতা কালিদাস জানানী একজন রাজপুত নেতা ছিলেন। তিনি হুসাইন শাহের রাজত্বকালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সুলায়মান খান নাম ধারণ করেন। 

শেরশাহের পুত্র ইসলাম খানের মৃত্যুর পর সুলায়মান বঙ্গদেশের পূর্বাঞ্চলে একটি স্বাধীন রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু তাজখান কর্তৃক সুলায়মান পরাজিত ও নিহত হয়েছিলেন। 

নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে ঈসা খান তার পিতার জমিদারি লাভ করেন এবং এর আয়তন বৃদ্ধি করেন। শৌর্যবীর্যের জন্য ঈসা খানের খুব সুখ্যাতি ছিল। 

শ্রীপুরের জমিদার চাঁদ রায় ও কেদার রায় তাকে সমীহ করতেন। ঈসা খান চাঁদ রায়ের বিধবা কন্যা সোনামনিকে বিয়ে করেছিলেন।

২. ঈসা খানের রাজ্য : অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে, ঈসা খানের রাজা বর্তমান ঢাকা জেলার প্রায় অর্ধাংশ, সমগ্র ময়মনসিংহ জেলা এবং পাবনা, বগুড়া ও রংপুর জেলার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত ছিল।

উত্তরবঙ্গ হতে ত্রিপুরার সরাইল পর্যন্ত তার রাজ্য বিস্তার লাভ করেছিল। এ রাজ্যটিকে "ভাটিরাজ্য" বলা হতো এবং তিনি ভাটিরাজ্যের বাজা হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। 

খিজিরপুর দুর্গ ছিল তার শশঙ্কর প্রধান কেন্দ্র। সোনারগাঁও এর খিজিরপুরের নিকটবর্তী স্থান কাতরায় তার রাজধানী ছিল। দাউদ কররানীর পতনের পর তিনি সোনারগাওয়ে রাজধানী স্থাপন করেন।

৩. মুঘলদের সাথে ঈসা খানের যুদ্ধ : ঈসা খান মুঘল নৌ- সেনাপতি শাহ বরদীর রণতরীগুলো পূর্ববঙ্গের নদী থেকে তাড়িয়ে দেন এবং শাহ বরদীকে তার বশ্যতা স্বীকারে বাধা করেন। 

এরপর এগারসিন্ধুর নিকটে এক যুদ্ধে মুঘলদের হাতে পরাজিত হন, কিন্তু তিনি তাদের বশ্যতা স্বীকার করেননি। তিনি সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। 

মুঘল সৈন্যরা যখন লুটপাটে ব্যস্ত, তখন সে সুযোগে তিনি তাদেরকে আক্রমণ করে নিজ এলাকা থেকে তাড়িয়ে দিলেন। খান-ই-জাহান তানডায় পলায়ন করেন।

৪. ঈসা খানের নিকট শাহবাজ খানের পরাজয় : ১৫৮৩ সালে সম্রাট আকবর শাহবাজ খানকে বঙ্গের সুবাদার করে পাঠান। শাহবাজ খানের বঙ্গে পৌঁছাতে কয়েক মাস বিলম্ব হওয়ায় মাসুম কাবুলী সেখানে মুঘলদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। 

ঈসা খানের সাথে শাহবাজখানের সাত মাস যাবৎ যুদ্ধ চলে। কিন্তু এক সময়ে বর্ষাকাল চলে আসলে ১৫৮৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ভাওয়ালের এক যুদ্ধে শাহবাজ খান ঈসা খানের নিকট পরাজিত হয় এবং তানভায় প্রত্যাবর্তন করে ।

৫. ঈসা খানের নিকট মানসিংহের পরাজয় : মানসিংহ ঈসা খানের বিরুদ্ধে যাত্রা করে ১৫৯৫ সালের ৭ ডিসেম্বর। এতে করে ঈসা খানের জমিদারির কিছু অংশ মুঘলদের হস্তগত হয়। 

ফলে ঈসা খানও বিরাট রণতরী নিয়ে ঘোড়াঘাটে এসে পৌঁছেন। এ সময় মানসিংহ গুরুতর অসুস্থ ছিলেন এবং ঈসা খানের নিকট পরাজিত হন।

৬. মুঘল আনুগত্য স্বীকার : পরবর্তীতে মানসিংহ শক্তি সঞ্চয় করে ঈসা খানকে আক্রমণ করেন। ১৫৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ঈসা খান মুঘল রণতরী ঘিরে ফেলল । মানসিংহের পুত্র দুর্জন সিংহ যুদ্ধে নিহত হন। 

মানসিংহ ঈসা খানের শৌর্যেবীর্যে মুগ্ধ হন । কিন্তু ঈসা খান মুঘলদের সাথে যুদ্ধ করতে রাজি হলেন। না। তিনি মুঘল বন্দিদের মুক্তি দান করলেন এবং আকবরের আনুগত্য স্বীকার করেন।

উপসংহার : বাংলার ইতিহাসে ঈসা খান একটি উল্লেখযোগ্য নাম। তিনি বার ভূঁইয়াদের মধ্যে অন্যতম জমিদার ছিলেন। তার অবিস্মরণীয় কৃতিত্ব আজও বিদ্যমান। ইতিহাসে তাই তিনি বাংলার অমর হয়ে থাকবেন । 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ