একডালা যুদ্ধ সম্পর্কে যা জান লিখ। একডালা যুদ্ধ উল্লেখ কর
একডালা যুদ্ধ সম্পর্কে যা জান লিখ। একডালা যুদ্ধ উল্লেখ কর |
একডালা যুদ্ধ সম্পর্কে যা জান লিখ। একডালা যুদ্ধ উল্লেখ কর
উত্তর : ভূমিকা : ১৩৪২ সালে সুলতান আলাউদ্দিন আলী শাহকে হত্যা করে হাজী ইলিয়াস সুলতান শামসুউদ্দিন ইলিয়াস শাহ উপাধি ধারণ করে ফিরুজাবাদের সিংহাসন দখল করেন।
তিনি সিংহাসনে আরোহণের সাথে সাথে বাংলার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। ইলিয়াস শাহ সমগ্র বাংলায় একছ এ আধিপত্য বিস্তার করতে হন। দিল্লির সুলতানদের সাথে ইলিয়াস শাহের একডালা যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।
@ একডালা যুদ্ধ : বাংলাদেশ তুঘলক সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। মুহাম্মদ বিন তুঘলকের রাজত্বকালে বাংলাদেশ দিল্লির অধীনতা ছিন্ন করে। তাছাড়া ইলিয়াস শাহের ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সাফল্যজনক বিজয় অভিযান ফিরোজ শাহ তুঘলকে বিচলিত করে।
দিল্লির সাম্রাজ্যের পূর্বাঞ্চলে ইলিয়াস শাহের আক্রমণ দিল্লির কর্তৃত্বের উপর সরাসরি হুমকিস্বরূপ ছিল। এজন্য ফিরোজ শাহ তুঘলক ইলিয়াস শাহের ক্ষমতা পর্ব করার উদ্দেশ্যে প্রায় ৯০ হাজার অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে বাংলা অভিযান করেন।
অযোদ্ধা, চম্পারন ও গোরক্ষপুরের ভিতর নিয়ে ফিরোজ শাহ বাংলায় আসেন। ফিরোজ শাহের আগমনের খবর পেয়ে ইলিয়াস শাহ ফিরুজাবাদে দায়িত্ব তার পুত্রের উপর দিয়ে একডালা দুর্গে আশ্রয় নেয়।
ফিরোজ শাহ পাণ্ডুয়া দখল করে ইলিয়াস শাহের পুত্রকে বন্দি অতঃপর ফিরোজ শাহ একডালা দুর্গ আক্রমণ করেন। একডালা দুর্গটি মাটির তৈরি হলেও দুর্ভেদ্য ছিল এবং একদিকে পানি ও অন্যদিকে জঙ্গল দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল।
সুতরাং এখানে প্রবেশ করা খুব কষ্টকর ছিল। ইলিয়াস শাহ একডালা দুর্গের ভিতরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে লাগলেন এবং বর্ষাকাল পর্যন্ত সৈন্যগণ ঢেকিয়ে রাখতে চাইলেন।
প্রবল বৃষ্টিপাত ও মশার কামরে সৈন্যগণ সহ্য করতে না পেরে বাংলার আশা ছেড়ে দিলেন। এদিকে ফিরুজশাহ তার সৈনাগণকে শিবির তুলে নিতে আদেশ দেন।
তার আদেশ পেয়ে | সৈন্যগণ নতুন ঘাঁটির জন্য নির্দিষ্ট স্থানের দিকে অগ্রসর হন। ইলিয়াস শাহের সৈন্যরা মনে করে ফিরুজ শাহের সৈন্যদল পশ্চাদপসরণ করেন।
তাই ইলিয়াস শাহ সৈন্যদল নিয়ে বাহিরে চলে আসেন এবং দিল্লির বাহিনীকে পিছন দিক থেকে আক্রমণের পরিকল্পনা করেন । উভয় বাহিনীর মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ইলিয়াস শাহ বাহিনীর প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়।
ইলিয়াস শাহ পুনরায় একডালা দুর্গে পুনরায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। দিল্লির ঐতিহাসিকদের মতে ফিরুজশাহ দুর্গটি অধিকারের জন্য প্রচণ্ড আক্রমণ পরিচালনা করেন।
কিন্তু দুর্গের মধ্যে অবরোধবাসী সম্রান্ত মহিলাদের করুণ আবেদনের ফলে তার মনে দয়ার উদ্রেক হয়। অতঃপর ইলিয়াস শাহের সাথে সন্ধি স্থাপন করে ফিরুজশাহ দিল্লিতে ফিরে যান।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, স্বাধীন সালতানাতের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ইলিয়াস শাহ বাংলা বা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছেন।
তিনি স্বীয় বাংলাদেশে অধিকার প্রতিষ্ঠা করেই সন্তুষ্ট হননি। বাংলাদেশের বাহিরেও বিভিন্ন অঞ্চল জয় করেন। ইলিয়াস শাহের ১৫ বছরের শাসনকাল তার যোগ্যতার পরিচয় দেয়।