উপমহাদেশের বাইরের দেশগুলোর সাথে প্রাচীন বাংলার সম্পর্কের প্রকৃতি আলোচনা কর
উপমহাদেশের বাইরের দেশগুলোর সাথে প্রাচীন বাংলার সম্পর্কের প্রকৃতি আলোচনা কর |
উপমহাদেশের বাইরের দেশগুলোর সাথে প্রাচীন বাংলার সম্পর্কের প্রকৃতি আলোচনা কর
অথবা, প্রাচীন বাংলার সাথে উপমহাদেশের বাইরের দেশগুলোর সম্পর্কের ধরন বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : সম্পর্কের ব্যাপারটি আপেক্ষিক, কারো ক্ষেত্রে যাবার স্বার্থের আবার সময় সময় ভিন্ন প্রেক্ষাপটে স্থাপিত হয়।
প্রাচীন বাংলার সাথে উপমহাদেশের বাইরের দেশগুলোর সম্পর্ক দেখা যায় কখনো যুদ্ধ অভিযানগত কারণে কখনো ধর্মগত কারণে বা ব্যংশ বাণিজ্যিক কারণে প্রাচীন বাংলার সাথে উপমহাদেশের বাইরের সেগুলোর সম্পর্ক স্থাপিত।
প্রাচীন বাংলার সাথে উপমহাদেশের বাইরের দেশগুলোর সম্পর্কের প্রকৃতি : সময়ে সময়ে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে প্রাচীন বাংলার সাথে উপমহাদেশের বাইরের দেশগুলোর সম্পর্ক স্থাপিত হয় নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. সামরিক দিক : প্রাচীন বাংলার মানুষ বা বাংলার জনগণ, শুধুমাত্র নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত থাকত না। সময় সময় তারা ভিন্ন বিজয় অভিযান প্রেরণ করতো।
সিংহল দেশীয় গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে বাঙালি রাজকুমার বিজয় ও তার সতিবাণ সিংহল দেশীয় দেশ জয় করেছিল। যেহেতু সিংহল দেশ জয় করেছিল তাহলে অবশ্যই বাইরের দেশের সাথে বিজয়াভিযান প্রেরণ করতে হয়েছে।
তাছাড়াও বীর আলেকজান্ডার যখন বাংলা বিজয়ের জন্য 'অগ্রসর হন তখন বাংলার রাজাদের সামরিক প্রস্তুতির খবর তিনি জানতে পারেন এবং বিপাশা নদীর তীর থেকেই তিনি ফিরে যান।
তাহলে বুঝা যাচ্ছে আলেকজান্ডার যেহেতু সামরিক শক্তি আচ করতে পেরেছিল, তাহলে নিঃসন্দেহে তাদের অনেক সামরিক শক্তি ছিল। যার জন্য উপমহাদেশের বাইরের দেশগুলোর সাথে প্রাচীন বাংলার সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
২. ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ : মহাবীর আলেকজান্ডার যেখানেই অভিযানে যেতেন সেখানেই অনেক লেখক কৰি পণ্ডিতদের সাথে নিয়ে যেতেন আর ভারতবর্ষ অভিযানে তার ব্যতিক্রম হয়নি।
এসব জ্ঞানী পণ্ডিত, কবিরা যেসব বর্ণনা দিয়েছে বা প্রাচীন বাংলা সম্পর্কে যেসব বর্ণনা দিয়েছে তাতে বহিঃবিশ্বের মানুষ প্রাচীন বাংলা সম্পর্কে জানতে পারে।
বাংলা ঐতিহ্য সম্ভাবনা সামরিক শক্তি এসব বিষয় দেখে বহির্বিশ্ব বাংলাকে আলাদা মূল্যায়ন করতে থাকে এবং সু-সম্পর্কও স্থাপিত হয়।
৩. বাণিজ্যিক সম্পর্ক : প্রাচীন বাংলায় অনেক কৃষিপণ্য | উৎপাদিত হতো। এসব পণ্য শুধু প্রাচীন বাংলা নয় বহির্বিশ্বে পরিচিতি ছিল। প্রাচীন বাংলার জনগণ বাণিজ্য করতো।
তারা শুধুমাত্র দেশীয় বাণিজ্য করতো না চীন, তিব্বত, আরবদেশ, নেপাল, ভুটান, সুমাত্রা, জাভা, প্রভৃতি দেশের সাথে তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল।
আর উৎপাদিত পণ্য দেশের বাইরে রপ্তানি করতো আবার প্রয়োজনীয় পণ্য তারা আমদানিও করতো। যার দরুন প্রাচীন বাংলার সাথে দেশের বাইরের সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
৪. ধর্মীয় সম্পর্ক : ধর্মীয় কারণে প্রাচীন বাংলার সাথে দেশের বাইরে সু-সম্পর্ক স্থাপিত হয়। প্রাচীন বাংলায় বৌদ্ধ ধর্ম বেশি প্রভাব বিস্তার করেছিল। বৌদ্ধাচার্য ও পণ্ডিতগণ শুধু দেশেই তাদের ধর্মীয় প্রচারণা চালাতেন না।
দেশের বাইরে যেম। তিব্বত, সিংহল প্রভৃতি দেশেও তারা বৌদ্ধধর্মের প্রচার প্রসারে কাজ করেন। পাল আমলে ধর্মীয় সম্পর্ক আরো ভালো হয় বলে জানা যায়।
৫. পরিব্রাজকদের আগমন : বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপূরূপ দৃশ্য শুধুমাত্র বাংলার মানুষ কে নয় পুরো পৃথিবীকে মুগ্ধ করেছে। শ্যামল সবুজ বাংলায় সময় সময় অনেক পর্যটক এসেছে।
তারা তাদের লেখনিতে বাংলার অপরূপ সৌন্দর্যের বিবরণ দিয়েছে যা দেখার জন্য উপমহাদেশের বাইরের লোকেরা এ দেশে এসেছে এবং এক ধরনের সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে।
যেমন ইৎসিং এদেশে এসে গুপ্ত যুগের সমসাময়িক ইতিহাস তুলে ধরেছে। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং সমসাময়িককালে বাংলার বর্ণনা প্রদান করেছে। যা মুগ্ধ হয়ে দেশের বাইরে থেকে এদেশে পর্যটকরা থাকে এবং তাদের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপিত হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাচীন বাংলার সাথে উপমহাদেশের বাইরের সুসম্পর্ক ছিল। তবে ভিন্ন সময় ভিন্ন কারণে এ সম্পর্ক কখনো অনেক মধুর হয়েছিল মাঝে মাঝে তিক্ত হয়েছিল।
তবে যখন সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে তখন বাংলা রাজনৈতিকভাবে অস্থির হতে থাকে তখন থেকে আস্তে আস্তে সম্পর্ক খারাপের দিকে যায়।
নিঃসন্দেহে বলা যায় উপমহাদেশের বাইরের দেশগুলোর সাথে প্রাচীন বাংলার সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত নিবিড়।