তুগ্রিল বেগের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর
তুগ্রিল বেগের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর |
তুগ্রিল বেগের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর
- অথবা, সেলজুক আমীর তুগ্রিল বেগের কৃতিত্ব আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : আব্বাসীয় শাসনামলে কয়েকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজবংশের উত্থান হয়েছিল। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো সেলজুক বংশ।
আর সেলজুক বংশের গোড়াপত্তন হয়েছিল সেলজুক সুলতান তুঘিল বেগের হাত ধরে। তুঘিল সেলজুক বংশ প্রতিষ্ঠা করে ইতিহাসের পাতায় তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।
তুগ্রিল বেগের কৃতিত্ব নিম্নে তুলে ধরা হলো :
১. সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী জাতি গঠন : একটি শক্তিশালী জাতি গঠনে তুষিল বেগের কৃতিত্ব ছিল অনস্বীকার্য। কেননা, তুমিলের অধীনেই সেলজুকরা এশিয়ায় সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী জাতিতে পরিণত হয়েছিল।
২. শিক্ষা ও সংস্কৃতি পৃষ্ঠপোষকতা : সেলজুক সুলতান ভূগ্রিল বেগ একজন বিদ্যোৎসাহী শাসক ছিলেন। তিনি নিজেও একজন জ্ঞান-বিজ্ঞানের ভাপস ব্যক্তি ছিলেন।
তার শাসনামলে বলখ, হামাদান, ইস্পাহান এ ইসলামি শিক্ষা প্রচারের লক্ষ্যে মাদরাসা ও মক্তব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
পরবর্তীকালে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ইসলাম প্রচার ও দ্বীন শিক্ষায় যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল।
৩. সুশৃঙ্খল সৈন্যবাহিনী গঠন : উমাইয়া আমল থেকে শুরু হয় সৈন্যবাহিনীর মাধ্যমে রাজ্য জয় প্রথা। আর একই ধারাবাহিকতাই একটি শক্তিশালী ও সুশৃঙ্খল সৈন্যবাহিনী গঠন করেন।
এ সৈন্যবাহিনী একদিকে যেমন আব্বাসীয় খিলাফতের শক্তির যোগান দেয় তেমনি সেলজুক রাজবংশকে দায়িত্ব প্রদান করার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৪. রাজস্ব সংস্কার : সেলভুকগণ ক্ষমতায় আরোহণ করলে তাদের কার্যাবলি মধ্যে অন্যতম ছিল রাজস্ব সংস্কার। আর তুমিল বেগ রাজস্ব সংস্কার করে আব্বাসীয় খিলাফতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে সচেষ্ট ছিলেন।
৫. প্রশাসনিক ক্ষমতা কুক্ষিগত : সেলজুকদের উত্থানের সাথে সাথে আব্বাসীয়দের ক্ষমতা বহুলাংশে কমে যায়। তাদের ক্ষমতার দিন দিন হ্রাস পেতে থাকে।
খলিফাদেরকে হাতের ক্রীড়ানকে পরিণত করে। ক্ষমতা কুক্ষিগত করে তৃক্ষিক নিজের লোককে আব্বাসীয় প্রশাসনে বসায়।
৬. সুন্নি ধর্মমত প্রতিষ্ঠা : ভূমিল বেগের সর্বশ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব হলো বুয়াইয়া শিয়াদের বিতাড়িত করে আব্বাসীয় শাসনামলে সুন্নি ধর্মমত প্রতিষ্ঠা করা।
(ক) ধৈর্যশীল শাসক : পৃথিবীর অন্যান্য শ্রেষ্ঠ শাসকদের মধ্যে ভূমিল ছিলেন অন্যতম একজন ধৈর্যশীল শাসক। ধৈর্য্যের মধ্যে দিয়ে ভূমিল সেলযুক বংশ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
(খ) ধার্মিক ও খোদাভীরু : পরধর্ম সহিষ্ণু ধার্মিক এবং খোদাভীরু ছিলেন ভূমিল বেগ। রোজা, নামাজ, যাকাত, যথাযথভাবে পালন করতেন। একজন আল্লাহ ভীরু হিসেবে তার পরিচিত ছিল।
(গ) অনাড়ম্বর জীবনযাপন : নিজ প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোন কিছু তিনি ব্যবহার করতেন না। সাধারণদের ন্যায় তিনি একজন অনাড়ম্বরপূর্ণ শাসক হিসেবে ইতিহাসে পরিচিত হয়ে আছেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সেলজুক বংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ইসলামের ইতিহাসে তুম্রিল বেগ বিশেষ স্থান দখল করে আছেন।
তিনি তার প্রতিষ্ঠিত সেলজুক বংশকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য শাসন ক্ষমতায় থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ফলে তার প্রতিষ্ঠিত সাম্রাজ্য ১০৩৭-১১৯৪ খ্রিস্টাব্দ | পর্যন্ত শাসন ক্ষমতায় ছিল।