ত্রয়োদশ শতকের শেষার্ধে মামলুক ও মোঙ্গল সম্পর্ক আলোচনা কর
ত্রয়োদশ শতকের শেষার্ধে মামলুক ও মোঙ্গল সম্পর্ক আলোচনা কর |
ত্রয়োদশ শতকের শেষার্ধে মামলুক ও মোঙ্গল সম্পর্ক আলোচনা কর
- অথবা, মামলুক ও মোঙ্গল সম্পর্ক আলোচনা কর ।
উত্তর : ভূমিকা : মিশরে মামলুক শাসনামলে মোঙ্গলদের আগমন এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। চরিত্রগত দিক দিয়ে মামলুক ও মোঙ্গলগণ ছিল আলাদা চরিত্রের অধিকারী। মামলুকরা ছিল দাস বংশ আর মোঙ্গলগণ ছিল বর্বর ও বিজেতা জাতি।
মামলুক ও মোঙ্গলদের সম্পর্ক মাঝে মাঝে ভালো থাকলেও অধিকাংশ সময়ই উভয়ের সম্পর্ক ছিল আক্রমণাত্মক ও বিপরীতমুখী। ফলে দেখা যায় যে, মিশরের মামলুকদের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ও শত্রু ছিল মোঙ্গলগণ
মামলুক ও মোঙ্গল সম্পর্ক। ত্রয়োদশ শতকের শেষার্ধে মামলুক ও মোঙ্গল সম্পর্ক নিয়ে আলোকপাত করা হলো।
১. লাজারের সাথে মোঙ্গলদের সম্পর্ক : মামলুক বংশের প্রতিষ্ঠাতা শাজার-উদ-দার ১৯৫০ সালে সিংহাসনে আরোহণের পর প্রায় ৩ মাস যোগ্যতার সাথে রাজ্য পরিচালনা করেন। তাঁর শাসনামলে মোঙ্গলগণ এশিয়া মাইনরে ব্যস্ত থাকায় এ সময় মামলুকদের সাথে কোনো সংঘর্ষ হয়নি।
২. ইজ্জাতদিন আইবেকের সাথে সম্পর্ক : ১২৫০ সালে সিংহাসনে বসে সুলতান আইবেক তাঁর অধিকাংশ সময় সিরিয়া, প্যালেস্টাইন ও মিশরের বনাঞ্চলেই কাটিয়েছিলেন। ফলে তাঁর শাসনামলেও মামলুক মোঙ্গলদের কোনো সংঘর্ষ হয়নি।
৩. আল মনসুরের সাথে সম্পর্ক : ইজ্জাতদিন আইবেক নিহত হলে তাঁর শিশু পুত্র আল মানসুর আলীকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল। কিন্তু ১২৫৯ সালে তাকে অপসারণ করে সেনাপ্রধান সাইফুদ্দীন কুতুজ সিংহাসনে আরোহণ করেন।
তাঁর সময়েই প্রথম মামলুকদের সাথে মোঙ্গলদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় মোঙ্গল অধিপতি হালাকু খান তাঁর আনুগত্য মেনে নেয়ার জন্য কুভুজের কাছে দূত প্রেরণ করেন। কিন্তু কুভুজ উক্ত দূতকে হত্যা করে। ফলে ১২৬০ সালে মোগলপণ মিশর আক্রমণ করেন।
৪. বাইবার্স মোগল সম্পর্ক : ১২৬০ সালে আইন জালুতের যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে রুকনুদ্দিন বাইবার্স কায়রো এসে সাইফুদ্দীন কুতুজকে পদচ্যুত করে মামলুক সিংহাসনে আরোহণ করেন।
আইন-ই-জালুতের যুদ্ধে মোঙ্গলদের সাথে তাঁর যুদ্ধ হলেও তাঁর ক্ষমতাসীন হওয়ার পর মোঙ্গল এবং ইউরোপীয় সম্রাটদের সাথে তাঁর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়।
তাছাড়া বাইবার্স সিংহাসনে | বসে বলগা উপত্যকার কিপচাক মোঙ্গলদের সাথে মৈত্রী সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
৫. কালাউন ও মোঙ্গল সম্পর্ক : সুলতান সাইফুদ্দীন কালাউন ১২৭৭ খ্রিস্টাব্দে ক্ষমতার আসেন। তার শাসনামলে মামলুক মোঙ্গল সম্পর্ক আবারও জটিল হয়ে ওঠে।
সুলতান সাইফুদ্দীন কালাউন ও মোঙ্গল নেতা আবাগা খানের মধ্যে ১২৮০ সালে হিমসের প্রান্তরে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
এই যুদ্ধে মামলুক নৃপতি সাঈফুদ্দীন কালাউনের দৃঢ়তায় ও রূপ নিপুণতায় মামলুকগণ বিশাল বিজয় অর্জন করেন।
৬. আল নাসির মাহমুদের সাথে মোগলদের সম্পর্ক : আল নাসিরের সময় মোঙ্গলগণ আবার মিশর আক্রমণ শুরু করেন। ১২৯৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর মোঙ্গলদের আক্রমণে মিশরীয়রা হিমসের পূর্বদিকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ১৩০০ সালে মোঙ্গলগণ সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক দখল করে নেয়।
৭. গাজান খানের সময় : মারজ-উস-সাফারের যুদ্ধে মামলুক বাহিনীর হাতে মোঙ্গল নেতা গাজান খান পরাজয়বরণ করেন। এরপর গাজান মাহমুদ খানের পরবর্তী কোনো বংশধর মামলুকদের আক্রমণ করেননি।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মিশরের ইতিহাসে ত্রয়োদশ শতকের মামলুক ও মোঙ্গল সম্পর্ক ইতিহাসের এক আলোচিত অধ্যায়।
এ সময় কিছু কিছু মামলুক সুলতানদের সাথে মোঙ্গলদের যেমন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল তেমনি আবার কিছু কিছু মামলুক সুলতানদের সাথে তাদের শত্রুতাপূর্ণ সম্পর্কও বিরাজমান ছিল ।