তৎকালীন সমাজ প্রেক্ষাপটে ক্রুসেডের ফলাফল বা অবদান লিখ
তৎকালীন সমাজ প্রেক্ষাপটে ক্রুসেডের ফলাফল বা অবদান লিখ |
তৎকালীন সমাজ প্রেক্ষাপটে ক্রুসেডের ফলাফল বা অবদান লিখ
উত্তর : ভূমিকা : ইউরোপের মধ্যযুগের রাষ্ট্রদর্শনে বেশ কিছু পরিবর্তন এবং আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনার সূত্রপাত ঘটতে দেখা গিয়েছিল ।
ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ ছিল তৎকালীন ইউরোপের সমাজব্যবস্থার অন্যতম আলোচ্য বিষয়। ক্রুসেডের ফলাফল ছিল তখনকার সমগ্র ইউরোপে যুগান্তর সৃষ্টিকারী একটি অন্যতম ঘটনা ।
→ তৎকালীন সমাজব্যবস্থা : নিম্নে তৎকালীন সমাজব্যবস্থা ও ক্রুসেডের ফলাফল আলোচনা করা হলো-
১. সামন্তবাদ বিলোপ : ইউরোপে ক্রুসেড সৃষ্টির পূর্ব সময় পর্যন্ত সামন্তবাদ বা ভূমিপতীদের জয়জয়কার পরিস্থিতি লক্ষণীয় ছিল ।
তখন সমাজব্যবস্থায় যাবতীয় কিছু বিদ্যমান বা পরিচালিত হতো সামন্তশ্রেণির প্রভুদের মাধ্যমে। ক্রুসেডের ফলে সেখান থেকে সামন্ত প্রথার বিলোপসাধন ঘটে।
২. কর আরোপ : সমাজব্যবস্থায় রাজস্ব এবং রাজ্যের ব্যয়ভার পরিচালনার জন্যে রাজা নিযুক্ত হতেন। ফলে রাজ্যের রাজারা নিজেদের খেয়ালখুশি মতো কর আরোপ করতেন। আয় এই কর - আরোপের ফলে সমাজে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতো কৃষক সমাজ ।
৩. শহরের সৃষ্টি : ক্রুসেড পরবর্তী সময়ে দেখা যায়, বহু মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরমুখী হতে শুরু করছে। যার ফলে মানুষ একত্রে বাস ভেঙে জড়ো হওয়ানা মাধ্যমে শহরের সৃষ্টি করে তোলতে সমর্থ হয়।
৪. কৃষির অবদান : ক্রুসেড পরবর্তী সময়ে লক্ষ করা যায় ইউরোপ জুড়ে কৃষির উৎপাদনমুখী সম্ভাবনা। ক্রুসেডের মাধ্যমে এশিয়ার বিভিন্ন কৃষি উৎপাদনের কলাকৌশল বিশেষ করে ধান চাষ, যব, গম, কলা, আনারস প্রভৃতি চাষ করার উপায় ইউরোপীগণ আয়ও করতে সমর্থ হয়। এভাবে ইউরোপে কৃষির সম্প্রসারণমূলক দিকটি উঠে আসে।
৫. ব্যবসা-বাণিজ্য : ক্রুসেডের সামাজিক ফলাফলের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখতে পাওয়া যায় সমগ্র ইউরোপ জুড়ে ব্যবসা- বাণিজ্যের উন্নতি।
মধ্য-ভূমধ্যসাগর এলাকা থেকে মুসলমানদের একক আধিপত্য বিলোপসাধন করার মাধ্যমে সেখানে ইউরোপীয় বণিক শ্রেণিরা ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনাকে আরো জাগিয়ে তুলে।
৬. জাতিগত চেতনা : ক্রুসেডের ফলে জাতিগত চেতনা জাত হয়। অর্থাৎ এর পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন দেশভিত্তিক জাতিগত ঐক্য ও সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করে।
ফলে জাতিগত চেতনার উন্মেষ ঘটার মাধ্যমে সমগ্র ইউরোপে পারস্পরিক সৌহার্দোবোধের জন্ম নেয়।
৭. মধ্যবিত্তের বিকাশ : সমাজব্যবস্থা থেকে সামন্তপ্রভুদের অবসান ঘটার মাধ্যমে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষেরা সুবিধা করার সুযোগ পায়।
মধ্যবিত্ত শ্রেণিরা সমাজে সামন্তপ্রভুদের পুরনো শাসন ও নীতিমালার বিদায় জানিয়ে নিজেদের কর্তৃত্বকে প্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট হয়ে উঠে।
৮. ভূমিদাসদের যুক্তি : সমাজ থেকে যখন সামন্ত প্রথার অবসান ঘটে তখন সে সাথে সমাজে ভূমিদাস প্রথার এ তাদের উন্নতি ঘটতে শুরু করে।
ভূমিদাস প্রথার বিলোপ এবং উন্নতির ফলে ইউরোপে পরবর্তী সমাজব্যবস্থায় সমগ্র জুড়ে উন্নয়নের ছোঁয়া পরিলক্ষিত হতে দেখা যায়।
৯. নারীর মর্যাদা : ক্রুসেডের ফলে সমাজে নারীর মর্যাদা পরিলক্ষিত হয়ে উঠে। দেখা যায়, অনেক সামন্তপ্রভু শ্রেণির পুরুষ | তাদের স্ত্রীর সম্পত্তি স্ত্রীদের নিকট রেখে যায়।
ফলে তাদের অনেকের মৃত্যুর মাধ্যমে পরবর্তীতে নারীরা সে সম্পত্তি ভোগ দখলের সুযোগ পায় এবং তারাই সে সম্পত্তির মালিক হয়ে উঠে।
১০. জীবনধারায় পরিবর্তন : ইউরোপের তৎকালীন পরবর্তী সময়ে সমাজব্যবস্থায় মানুষের সামাজিক জীবনব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়।
মানুষ পাশ্চাত্যের উগ্র ও অশিষ্ট জীবন বাদ নিয়ে ইউরোপের জীবনধারা, ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করে। যাবতীয় দিক থেকে পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইউরোপের ইতিহাসে সামাজিক অবস্থার বা সামাজিক চিত্র পরিবর্তন ও উন্নয়নে ক্রুসেড অনবদ্য ভূমিকা রেখেছিল।
যার প্রতিক্রিয়া বা ফলাফল মধ্যযুগ পেরিয়ে বর্তমান আধুনিক যুগ পর্যন্ত বিশেষভাবে লক্ষণীয় এবং অনুকরণীয় হয়ে উঠেছিল বলা যায়।