সুলতান কালাউনের রাজত্বকাল আলোচনা কর
সুলতান কালাউনের রাজত্বকাল আলোচনা কর |
সুলতান কালাউনের রাজত্বকাল আলোচনা কর
- অথবা, সুলতান কালাউনের শাসনকাল সম্পর্কে বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : মধ্যযুগে মিশরের ইতিহাসে মামলুক বংশের আবির্ভাব ও শাসনকাল ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এবং গৌরবোজ্জল অধ্যায়।
আর সুলতান কালাউনের রাজত্বকাল মামলুকদের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তিনি ছিলেন মামলুক বংশের ২য় শ্রেষ্ঠ সুলতান।
তিনি সাম্রাজ্যে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা দূর করে বৈদেশিক আক্রমণ দমন করেন। অভ্যান্তরীণ ও বৈদেশিক বিদ্রোহ দমন, আন- -বিজ্ঞানের প্রসার, কৃষি শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নেও তার অবদান রয়েছে।
মামলুক বংশের শাসক হিসেবে তিনি যে কৃতিত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন, এ জন্য ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় হয়ে আছেন।
সুলতান কালাউনের রাজত্বকাল : নিম্নে সুলতান কালাউনের রাজত্বকাল বর্ণনা করা হলো :
১. অভ্যন্তরীণ শত্রু সমন : সুলতান কালাউন সিংহাসনে আরোহণ করার পর অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ ও বহিঃশত্রুর আক্রমণের মুখোমুখী হন। এ সময় সিরিয়ার প্রাদেশিক শাসনকর্তা কারা সুনকুর 'আল কামিল' উপাধি ধারণ করে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
কারা সুনকুর বাইবার্সের অনেক দাস মরুবাসী বেদুঈন ও হামাহর আইয়ুবী শাহজাদার সাহায্যে ও সহযোগিতা লাভ করেন।
কালভিন জেসুরার যুদ্ধে কারা সুনকুরকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন। এভাবে তিনি দূর হস্তে সকল সমস্যার সমাধান করে সাম্রাজ্য শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেন ।
২. বহিঃশত্রু দমন : মামলুক সুলতান কালাউন অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ দমন করে সাম্রাজ্যে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেন। বহিঃশত্রু দমনে অগ্রসর হন। কালাউন নানা রকম অভিযান পরিচালনা করেন।
তিন নুরিয়ার ফাইক ও প্যালেস্টাইনের বেদুঈনদের বিরুদ্ধেও সফলতম অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি আলেপ্পোর কার্লবেক ও দামেস্কের দুর্গগুলো দখল করেন।
৩. মোঙ্গল আক্রমন দমন : মোঙ্গলদের একটি শাখা ইলবানী শাসক আবাগা খান এবং ইউরোপীয় শক্তির সাথে হাত মিলিয়ে সিরিয়া থেকে মামলুকদের আধিপত্য দমনের চেষ্টা করেন।
সুলতান কালাউন ১২৮০ সালে হিমসের যুদ্ধে ৫০,০০০ হাজার সৈন্য নিয়ে মোঙ্গলদের ৮০,০০০ হাজার সৈন্যবাহিনীকে অত্যন্ত শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন।
৪. ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে অভিযান : মোঙ্গলদের আক্রমণ প্রতিহত করে কালাউন ১২৮৫ সালে খ্রিস্টান ধর্মযোদ্ধা বা ক্রসেডারদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন।
তিনি দীর্ঘ ৩৮ দিন ক্রুসেডারদেরকে অবরোধ করে রাখার পর তাদের শক্তিশালী ঘাঁটি আলমারাকা দখল করেন।
৫. কূটনৈতিক সম্পর্ক : তার কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল অসাধারণ। বন্ধুর সাথে বন্ধুর সম্পর্ক এবং শত্রুকে সমুচিত শিক্ষায় তিনি ছিলেন অসাধারণ।
তিনি গোল্ডের হোল্ডের খ্যাত মোঙ্গল, কনস্ট্যানটাইন সম্রাট, সিসিলিয়া রাজ্যবর্গ ও হাফর্সবার্গ, সিংহল প্রজাতন্ত্র প্রভৃতির দেশের সাথে ভালো সম্পর্ক তিনি বজায় রাখেন ।
৬. জনহিতকর কাজ : সুলতান কালাউন দেশের জনহিতকর কাজে অসামান্য পারদর্শি ছিলেন। তিনি কায়রোর “আল মারিস্তান আল মানসুরী নামক হাসপাতাল তৈরি করেন।
এর সাথে সমাধি, মাদ্রাসা ও মসজিদ নির্মাণ করেন। উক্ত হাসপাতালে জ্বর, চক্ষুরোগ, আমাশয় প্রভৃতি রোগীদের পৃথক করে রাখার জন্য আলাদা থেকে ওয়ার্ড তৈরি করেন।
৭. যোগাযোগ : তাঁর আমলে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় অনেক উন্নতি লক্ষ করা যায়। তিনি জনসাধারণের সুবিধার্থে সাম্রাজ্যের রাস্তাঘাট নির্মাণ করেন এবং রাস্তার দুই পাশে দুই মাইল অন্তর অন্তর সরাইখানা ও বিশ্রামাগার নির্মাণ করেন।
৮. মানুষ ও শাসক হিসেবে কালাউন : মানুষ ও শাসক হিসেবে কালাউনের চরিত্র নানারকম দোষগুণের সংমিশ্রণ ঘটেছিল । তিনি রক্তপাত পছন্দ করতেন না।
ঐতিহাসিকগণ তার চরিত্রের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। এদিকে কালাউন যেমন ছিলেন ক্ষমতালোভী, বিশ্বাসঘাতক, আবার অন্যদিকে তিনি ছিলেন মহান ও উদারনীতির অধিকারী।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, কালাউন মামলুক বংশের অন্যতম শ্রেষ্ঠশাসক ছিলেন। তিনি সাম্রাজ্যের সকল বিদ্রোহ দমন করে মামলুক বংশকে অত্যন্ত সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করেন।
কালাউন ১১ বছর মামলুক সাম্রাজ্য কৃতিত্বের সাথে শাসন করেন। তার অসামান্য অবদানের জন্য মামলুক তথা মিশরের ইতিহাসে তিনি স্বরণীয় হয়ে আছেন।