সুলতান বারকুক কে ছিলেন? তাঁর পরিচয় দাও
সুলতান বারকুক কে ছিলেন তাঁর পরিচয় দাও |
সুলতান বারকুক কে ছিলেন? তাঁর পরিচয় দাও
- অথবা, সুলতান বারকুক কে? তাঁর পরিচয় উল্লেখ কর।
উত্তর : ভূমিকা : মিশরে মামলুক বংশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ একজন শাসক ছিলেন সুলতান বারকুক। যিনি সামান্য ক্রীতদাস থেকে নিজ সাহসিকতা, মেধা ও উচ্চাভিলাসের ফলে বুরুজি মামলুক বংশের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন।
মিশরে মামলুক শাসনের ইতিহাসে বাহারি মামলুকদের শাসনের অবসান ঘটিয়ে বুরুজি মামলুক শাসনে বারকুক এক অবিস্মরণীয় নাম।
সুলতান বারকুকের পরিচয় : নিম্নে সুলতান বারকুকের পরিচয় সম্পর্কে তুলে ধরা হলো।
১. প্রাথমিক পরিচয় : সুলতান বারবুক ছিলেন প্রথম জীবনে একজন সামান্য ক্রীতদাস। তিনি ১৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে অনুগ্রহণ করেন। ১৩৬৭ সালে বাহারি মামলুক সুলতান আশ শাবান বারকুককে তাঁর দেহরক্ষী বাহিনীতে নিয়োগদান করেন।
বারকুক ব্যক্তি জীবনে ছিলেন প্রচণ্ড উচ্চাভিলাষী ও দুঃসাহসী। তাই অল্পদিনেই তিনি সৈন্যবাহিনীতে উচ্চপস লাভ করেন।
২. সিংহাসনে আরোহণ : সুলতান সাইফুদ্দীন বারকুক তাঁর যোগ্যতাবলে বাহারি মামলুক সাম্রাজ্যের প্রধান আমির ও সেনাপতির পদলাভ করেন।
এভাবে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে এসে বারকুক ১৩৮২ সালে সর্বশেষ বাহারি মামলুক সুলতান আস সালিহ হাজীকে সিংহাসনচ্যুত করে মসনদে বসেন।
তিনি দুই ধাপে মিশরের শাসন ক্ষমতায় ছিলেন, অর্থাৎ তিনি ১৩৮২- ১৩৮৯ এবং ১৩৯০-১৩৯৯ সাল পর্যন্ত সুলতান ছিলেন।
৩. খলিফার সাথে সম্পর্ক : সাইফুদ্দীন বারকুক সিংহাসনে বসলে আব্বাসীয় খলিফা আল মুতাওয়াকিল তাকে সমর্থন জানান। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং খলিফা সৈন্যবাহিনীর সহায়তায় তাকে সিংহাসনচ্যুত করার ষড়যন্ত্র করলে, বারকুক খলিফাকে হত্যা করার নির্দেশ জারি করেন। কিন্তু কাজীগণ একমত না হওয়ায় আব্বাসীয় খলিফা এ যাত্রায় বেঁচে যান।
৪. বারকুকের বন্দিজীবন : এ সময় আলেপ্পো ও সালতাই এর শাসনকর্তা যৌথভাবে আক্রমণ চালিয়ে মিশর আক্রমণ করে কায়রোও দখল করে নেন। সুলতান বারকুককে সিংহাসনচ্যুত করে অবশ্য এলবুঘা মিশর থেকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
৫. ক্ষমতালাভ : ভাগ্য বারকুকের পক্ষে কাজ করে। ফলে মিনড্যাশ যখন এলবুঘা খানকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করে, তখন বারকুক পুনরায় আক্রমণ চালিয়ে কায়রো দখল করে মিনত্যাশকে বন্দি করেন। এর ফলে বারকুক মহাসমারোহে দ্বিতীয় বারের মতো সিংহাসন লাভ করেন।
৬. তৈমুরের সাথে সম্পর্ক : মোঙ্গল আর তৈমুর লং পরপর দুটি পর নিয়ে বারকুককে তাঁর বশ্যতা স্বীকারের আহ্বান জানান। কিন্তু বারকুক ছিলেন কৌশলী, তাই তিনি কৌশল অবলম্বন করে তৈমুরের কোনো পত্রেরই উত্তর দেননি।
উপরন্তু তিনি তাঁর শক্তি বৃদ্ধির জন্য আহম্মদ ও ইলতুৎমিশকে তাঁর রাজদরবারে আশ্রয় দিয়ে নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেন। ফলে তৈমুর লং এ সময় মিশর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অন্যদিকে অভিযান চালান ।
৭. স্থাপত্যশিল্পের পৃষ্ঠপোষক : সুলতান সাইফুদ্দীন বারকুক ছিলেন স্থাপত্য শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা তিনি তাঁর সমাধির উপর একটি সুন্দর সৌধ এবং জর্ডান নদীর উপর একটি বৃহৎ সেতু নির্মাণ করেন। এছাড়া তাঁর রাজদরবারে বিভিন্ন অঞ্চলের স্থাপত্যবিদদের মিলনমেলা বসত ।
৮. জনহিতকর কার্যাবলি : বারকুক তাঁর প্রজাসাধারণের কল্যাণের জন্য রাজ্যে প্রচুর রাস্তাঘাট ও সেতু তৈরি করেন। পথচারীদের সুবিধার জন্য রাস্তার দু'ধারে অসংখ্য বৃক্ষরোপণ করেন। এছাড়া পর্যটকদের জন্য প্রতি দু'মাইল অন্তর অন্তর নির্মাণ করেন মুসাফিরখানা ।
৯. কৃষির উন্নয়ন : সুলতান বারকুক তাঁর সাম্রাজ্যের কৃষির উন্নয়নের জন্য বারকুককে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তাই তিনি চাষাবাদের সেচ সমস্যার সমাধানের জন্য বেশ কিছু খাল নতুনভাবে খনন ও ভরাট খালগুলো পুনঃখননের ব্যবস্থা করেন। তাঁর শাসনামলে কৃষির ব্যাপক উন্নতি হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মিশরে মামলুক বংশের দ্বিতীয় শাখা আল বুরুজি মামলুক বংশের গোড়াপত্তন করেছিলেন । | যা (১৩৮২-১৫১৭) সাল পর্যন্ত মিশরে ক্ষমতায় ছিল ।