সিপাহী বিদ্রোহের রাজনৈতিক কারণ কি ছিল
সিপাহী বিদ্রোহের রাজনৈতিক কারণ কি ছিল |
সিপাহী বিদ্রোহের রাজনৈতিক কারণ কি ছিল
- অথবা, সিপাহি বিদ্রোহের রাজনৈতিক কারণ বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। ব্রিটিশ অধীনস্থ কোম্পানির সরকার কর্তৃক এদেশের কৃষক শ্রমিক থেকে দরিদ্র জনগোষ্ঠী যখন চরম নির্যাতনের সম্মুখীন তখন সিপাহিগণ প্রথম এ বিদ্রোহের সূচনা ঘটান। পরবর্তীতে অন্যান্য জনগণ এতে অংশ নেন । রাজনৈতিক ও অন্যান্য কারণে এ বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।
→ সিপাহি বিদ্রোহের রাজনৈতিক কারণ : ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের অন্যতম কারণ ভারতীয় শাসকবর্গের তীব্র ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব, ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধের পর থেকে এদেশের কোম্পানি একের পর এক ভারতীয় ভূখণ্ড দখল করে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। এর ফলে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে তীব্র ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব সৃষ্টি হয়।
১. লর্ড ডালহৌসি কর্তৃক স্বত্ব বিলোপনীতি : ডালহৌসী কর্তৃক অনুসৃত স্বত্ববিলোপ নীতির ফলে দেশীয় রাজন্যবর্গের মনে ভীতির ও ব্রিটিশদের প্রতি ঘৃণার উদ্রেক হয়।
এ নীতির প্রয়োগ করে ডালহৌসির সাতারা, ঝাঁসি, নাগপুর, সম্বলপুর প্রভৃতি রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। ১৮৫৪ সালে কর্নাটের নবাব পদ বিলোপ করা হয়।
পেশবা দ্বিতীয় বাজিরাও এর দত্তক পুত্র নানা সাহেবের ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৮৫৬ সালে ডালহৌসি অপশাসনের অভিযোগে অযোধ্যা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।
২. অযোধ্যার কোষাগার লুণ্ঠন : বহুপূর্ব হতেই অযোধ্যার নবাবগণ ব্রিটিশদের প্রতি অনুগত ছিলেন এবং কোনোরূপ বিরুদ্ধাচরণ করেননি।
কিন্তু ইহা সত্ত্বেও ডালহৌসীর পররাজ্য গ্রাসনীতির হাত থেকে অযোধ্যা রক্ষা পায়নি। শুধু রাজ্য গ্রাস করেই ডালহৌসী ক্ষান্ত হননি। অযোধ্যার কোষাগার নির্লজ্জভাবে লুণ্ঠন করে।
৩. নবাবকে নির্বাসন : অযোধ্যার কোষাগার লুণ্ঠনের পর নবাবকে কলকাতা নির্বাসন দেওয়া হয়। অকস্মাৎ নবাবের রাজ্যচ্যুতির ফলে নবাবের বহু পোষ্য পরিবার একেবারে দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
এছাড়া অযোধ্যায় কোম্পানি সরকার অত্যন্ত কঠোর এক ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন, যা সিপাহি তথা সাধারণ মানুষের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা বিশেষভাবে ক্ষুণ্ণ করেছিল।
এসব কারণে দেশীয় রাজা, দেশীয় সিপাহি ও জনসাধারণ ব্রিটিশ রাজত্ব সম্পর্কে তাদের মনে বিদ্বেষ, বিতৃষ্ণা ও বিক্ষোভ বাড়তে থাকে।
দেখা যায়, ক্ষমতাচ্যুত 'দেশীয় রাজন্যবর্গের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী বিদ্রোহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইংরেজদের পক্ষ থেকে কার্তুজে শূকর ও গরুর চর্বির বিষয়টিকে ভ্রান্ত প্রমাণ করতে চাইলেও উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করে।
১৮৫৭ সালের ২৯ মার্চ ব্যারাকপুর সেনানিবাসের মঙ্গলপাত্তে নামে জনৈক সিপাহি জ্বলে উঠে। এছাড়া রাজনৈতিক ও বিভিন্ন কারণ এ বিদ্রোহের মূলে নিহিত ছিল।