সিপাহি বিদ্রোহের প্রকৃতি সম্পর্কে ঐতিহাসিক বক্তব্য ব্যাখ্যা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সিপাহি বিদ্রোহের প্রকৃতি সম্পর্কে ঐতিহাসিক বক্তব্য ব্যাখ্যা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সিপাহি বিদ্রোহের প্রকৃতি সম্পর্কে ঐতিহাসিক বক্তব্য ব্যাখ্যা কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
সিপাহি বিদ্রোহের প্রকৃতি সম্পর্কে ঐতিহাসিক বক্তব্য ব্যাখ্যা কর |
সিপাহি বিদ্রোহের প্রকৃতি সম্পর্কে ঐতিহাসিক বক্তব্য ব্যাখ্যা কর
- অথবা, সিপাহি বিদ্রোহের প্রকৃতি সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মতামত তুলে ধর।
- অথবা, সিপাহি বিদ্রোহের প্রকৃতি সম্পর্কে ঐতিহাসিক চিন্তাধারা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ভূমিকা : ইংরেজদের শাসন-শোষণের প্রতিবাদে এদেশের সিপাহি, কৃষক-শ্রমিকরা যে বিদ্রোহ গড়ে তোলে তাকে সিপাহি বিদ্রোহ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
এ বিদ্রোহ ভারতে ব্রিটিশ শাসনকে প্রায় ভাসিয়ে দিতে বসেছিল। এ বিদ্রোহ কোম্পানির ভারতীয় সেনাবাহিনীর মধ্যে সূত্রপাত হলেও অল্পদিনের মধ্যে ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এটি পরিব্যাপ্ত হয়।
প্রায় এক বছর যাবত লক্ষ লক্ষ কৃষক শ্রমিক এবং সিপাহিরা সাহসের সঙ্গে ইংরেজদের বিরুদ্ধে এ সংগ্রাম চালিয়েছিল ।
→ সিপাহি বিদ্রোহের প্রকৃতি : ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের প্রকৃতি নিয়ে ঐতিহাসিক ও পণ্ডিত মহলে বিতর্কের শেষ নেই। এ বিদ্রোহ কি শুধুমাত্র 'সিপাহিদের বিদ্রোহ না ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম।
উভয় মতের পক্ষে বিপক্ষে অসংখ্য যুক্তির অবতারণা করা হয়েছে। নিম্নে যারা এ বিদ্রোহকে জাতীয় সংগ্রাম হিসেবে দেখতে চেয়েছেন তাদের মতামত তুলে ধরা হল :
১. জে. বি. নর্টনের মত : ইংরেজ লেখক জে.বি. নর্টন তার Topics for India Statesman' গ্রন্থে প্রথম লেখেন “১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ একটি সামান্য সিপাহি বিদ্রোহ ছিল না, এ অভ্যুত্থান একটি গণবিদ্রোহে রূপ নিয়েছিল।"
তার এ মতের সাথে ডাফ, উইলিয়াম কে, ম্যালেসন প্রভৃতি লেখকও ঐকমত্য পোষণ করেছেন এবং তারা এ বিদ্রোহকে ইংরেজদের ভারতবর্ষ থেকে বিতাড়িত করার একটি সংগঠিত প্রয়াস বলে উল্লেখ করেছেন।
২. জাতীয়তাবাদীদের মত : ভারতের জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিকদের অনেকেই এই মহাবিদ্রোহকে জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম হিসেবে অভিহিত করেছেন।
৩. রজনীকান্তের মত : ঐতিহাসিক রজনীকান্ত তার সিপাহ যুদ্ধের ইতিহাস' গ্রন্থে বলেন, সিপাহিরা জাতীয়তাবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েই ইংরেজ শাসনের অবসান চেয়েছিল।
৪. বীর সাভারকার : বীর সাভারকারও ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে এবং অভ্যুত্থানকে জাতীয় যুদ্ধ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
৫. শশীভূষণের মত : ঐতিহাসিক শণীভূষণ চৌধুরী ভার 'Civil Rebellion in the Indian Mutinies' গ্রন্থে ১৮৫৭ সালের অভ্যুত্থানকে একটি সাম্রাজ্যবাদী বিরোধী জাতীয় যুদ্ধ বলেই ক্ষান্ত হননি। তিনি এটিকে গণবিদ্রোহ বলেও আখ্যায়িত করেছেন।
৬. কার্ল মার্কসের মত : এ মহাবিদ্রোহের প্রায় সম- সাময়িককালের কার্ল মার্কস New York Daily Trebune পত্রিকায় ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ সম্পর্কিত প্রবন্ধে এটিকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
এই প্রথম সিপাহি বাহিনী হত্যা করল তাদের ইউরোপীয় অফিসারদের। মুসলমান ও হিন্দুরা পারস্পরিক বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে মিলিত হয়েছে সাধারণ মনিবের বিরুদ্ধে। এটি শুধু কয়েকটি অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং এটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলে পরিব্যাপ্ত হয়েছিল।
→ অপরপক্ষের মতে : যারা এ বিদ্রোহকে সিপাহি বিদ্রোহ বলে আখ্যায়িত করেছেন তাদের মতামত ও যুক্তি তুলে ধরা হলো :
১. বিচারপতি Charles Raikes : তার 'Notes on the Revolt in Northem Westem Provice of India'-তে লিখেছেন ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ ছিল প্রকৃতপক্ষে একটি সিপাহি বিদ্রোহ। ব্রিটিশ কর্তৃত্ব শিথিল হবার ফলে ভারতের কোনো কোনো অঞ্চলে অশান্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল।
২. কিশোরীচাদ মিত্রের মত : ১৮৫৮ সালের ভারতীয় লেখক কিশোরীচাদ মিত্র বলেন, এ বিদ্রোহ ছিল অবশ্যই কেবলমাত্র সিপাহিদের অভ্যুত্থান। এক লক্ষ সিপাহি এ বিদ্রোহে অংশ নিয়েছিল। এ অভ্যুত্থানে গণ-বিদ্রোহের ছিটেফোঁটাও ছিল না।
৩. L.E.R. Resse : এ বিদ্রোহকে L.E.R. Reese ধর্মান্ধ হিন্দু ও মুসলমানদের সৃষ্ট ধর্ম বিরোধী জেহান হিসেবে দেখেছেন।
৪. সৈয়দ আহমদ খান : স্যার সৈয়দ আহমদ খান বলেন, জনৈক সামরিক কর্মচারী দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় প্রভৃতির মতেও এটি ছিল সিপাহি বিদ্রোহ।
৫. আরসি মজুমদার : অধুনা প্রকাশিত ড, আর সি মজুমদার "The Sepoy mutiny and the Revolt of 1857 এবং সুরেন্দ্রনাথ সেনের "Eighteen Fifty Seven- এ দু'খানি গ্রহে নতুন গবেষণালব্ধ তথ্যাদির পরিপ্রেক্ষিতে সমগ্র বিষয়টি পূর্ণরূপে আলোচনা করা হয়েছে।
ড. আর. সি মজুমদার এটিকে সিপাহি বিদ্রোহ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, এটি শুধু সিপাহি বিদ্রোহ ভিন্ন কিছু ছিল না।
সুরেন্দ্রনাথ সেনের মতে, ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ প্রথমে সিপাহিদের মধ্যে আরম্ভ হলেও সকল স্থানে এটি কেবল সিপাহিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। ড. সেন এ বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম জাতীয় স্যাম বলতে অস্বীকার করেছেন।
৬. জমিদারদের ইংরেজ সমর্থন : ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ ভারতব্যাপী বিস্তৃত ছিল না। ভারতের বহু শাসক এবং জমিদার শ্রেণি এই বিদ্রোহে ইংরেজকে দৃঢ় সমর্থন জানায়। সিপাহিদের মধ্যে বেঙ্গল আর্মি ছাড়া বাইরের অন্যান্য রেজিমেন্ট দেখা যায়নি ।
৭. বুদ্ধিজীবী শ্রেণির সমর্থন : এ বিদ্রোহে ইংরেজ ভারতের ইংরেজি শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী শ্রেণিও এই বিদ্রোহকে সমর্থন করেনি। শিখ ও গুর্খা সেনারা কোম্পানির প্রতি পূর্ণ আনুগত্য জানায় এবং দিল্লি ও লক্ষ্ণৌ-এর বিদ্রোহ দমনে তারা মুখ্য ভূমিকা নেয় ।
৮. জাতীয়তাবাদী আন্দোলন : ১৮৫৭ সালের বিপ্লব শুধু স্থানীয় সিপাহি বিপ্লব ছিল না। এটি শুরুতে সিপাহিদের দিয়ে শুরু হলেও পরবর্তীতে এটি জাতীয়তাবাদী স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপ লাভ করে ।
৯. জনসমর্থন : পশ্চিম বিহার থেকে পাঞ্জাবের প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত ভূখণ্ডে এই বিদ্রোহ ব্যাপক জনসমর্থন লাভ করেছিল।
শুধু সিপাহিরা নয় এ বিদ্রোহে জনসাধারণ ব্যাপক সাড়া দেয় এবং বিক্ষুব্ধ মানুষ দিনের পর দিন এই বিদ্রোহের পক্ষে সংগঠিত হয় এবং দিন দিন বিদ্রোহ তীব্র আকার ধারণ করে, যা ইংরেজদের ভিতকে নাড়া দিয়েছিল
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, নানাবিধ কারণে এ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হলেও ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাস এর গুরুত্ব ছিল এক গৌরবময় অধ্যায়।
এ বিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী নীতি ও অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে ভারতবাসীর এক প্রলয়ঙ্করী প্রতিবাদ।
ব্রিটিশ গ্রাস থেকে ভারতকে উদ্ধার করার জন্য ভারতীয় জনগণের মুক্তি সংগ্রাম, উপমহাদেশে স্বাধীনতা লাভের এ প্রচেষ্টা ৯০ বছর পরে বাস্তব রূপ লাভ করে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সিপাহি বিদ্রোহের প্রকৃতি সম্পর্কে ঐতিহাসিক বক্তব্য ব্যাখ্যা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সিপাহি বিদ্রোহের প্রকৃতি সম্পর্কে ঐতিহাসিক বক্তব্য ব্যাখ্যা কর। যদি তোমাদের আজকের সিপাহি বিদ্রোহের প্রকৃতি সম্পর্কে ঐতিহাসিক বক্তব্য ব্যাখ্যা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।