সিপাহী বিদ্রোহের ফলাফল কি ছিল
সিপাহী বিদ্রোহের ফলাফল কি ছিল |
সিপাহী বিদ্রোহের ফলাফল কি ছিল
- অথবা, সিপাহি বিদ্রোহের ফলাফল সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : ইংরেজ কোম্পানি সরকারের বৈষম্যমূলক ব্যবহার দেশীয় সৈন্যদের মনকে যখন বিষাক্ত করে তোলে ঠিক সে সময় কয়েকটি সামরিক সংস্থা সিপাহিদের ভিতে প্রচণ্ড আঘাত হানে।
পরাধীনতার ১০০ বছর পর সিপাহিরা তাদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হয় এবং তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে, যা সিপাহি বিদ্রোহ নামে পরিচিত।
→ সিপাহি বিদ্রোহের ফলাফল : সিপাহি বিদ্রোহের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো :
১. জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের পথ সুগম : ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের গ্রাস থেকে ভারতকে মুক্ত করার জন্য ভারতীয় জনগণের এটাই ছিল প্রথম মুক্তি সংগ্রাম। এই বিদ্রোহ আধুনিক জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের পথ পরিষ্কার করে দিয়েছিল।
২. মুক্তি সংগ্রামের অনুপ্রেরণা : সিপাহি বিদ্রোহের আদর্শ ও পরিকল্পনা পরবর্তীকালে মুক্তি সংগ্রামে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল।
৩. কোম্পানি শাসনের অবসান : সিপাহি বিদ্রোহের ফলে ব্রিটিশ সরকার বুঝতে পারে যে, ভারতের মতো একটি বিশাল দেশের ভার একটি কোম্পানির হাতে রাখা নিরাপদ নয় । এ কারণে ১৮৫৮ সালে ভারত শাসন আইন প্রণয়ন করে ভারতে কোম্পানি শাসনের অবসান ঘটানো হয়।
৪. রানির ঘোষণা পত্র : ১৮৫৮ সালে ১ নভেম্বর ইংল্যান্ডের রানি এক ঘোষণাপত্র জারি করেন। এটি নিম্নরূপ
(ক) স্বত্ব বিলোপনীতি পরিত্যক্ত
(খ) দেশীয় রাজন্যবর্গের দত্তকপুত্র গ্রহণের অনুমতি এবং তাদের সাথে কোম্পানির সকল চুক্তি রক্ষার নিশ্চয়তা;
(গ) ব্রিটিশ সরকারের রাজ্যবিস্তার নীতি ত্যাগ;
(ঘ) ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা ও
(ঙ) বিদ্রোহীদের ক্ষমা ঘোষণা।
৫. ভারতীয় সভ্যদের অন্তর্ভুক্ত : ১৮৫১ সালে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় আইন পরিষদ গঠন করে এবং এতে ভারতীয় সভ্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
৬. মাদ্রাজ ও বোম্বাই প্রেসিডেন্সির আইনের ক্ষমতা : ১৮৩৩ সালে গভর্নর জেনারেল ও পরিষদের হাতে মাদ্রাজ ও বোম্বাই প্রেসিডেন্সির আইন প্রণয়নের ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয়, কিন্তু ১৮৬১ সালে তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
৭. সামরিক বাহিনীতে পরিবর্তন : সিপাহি বিদ্রোহের পর ভারতীয় সামরিক বাহিনীতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধন করা হয়। সিপাহি নিয়োগনীতি প্রণয়ন এবং ভারতীয় সিপাহিদের নিম্নমানের সামরিক অস্ত্রদান করা হয়।
৮. সেনাবাহিনীর সংখ্যা বৃদ্ধি : সিপাহি বিদ্রোহের পর সেনাবাহিনীতে পরিবর্তন সাধিত হয়। ইউরোপীয় সেনার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। গোলন্দাজ বাহিনীতে ভারতীয় সৈন্যদের নিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয় এবং ইংরেজ সেনাবাহিনীর হাতে উন্নত মারণাস্ত্র তুলে দেওয়া হয় । -
৯. দেশীয় রাজ্যের সাথে বন্ধুত্ব : বিদ্রোহের পর ভারতে ব্রিটিশদের একচ্ছত্র আধিপত্য বন্ধ করে দেশীয় রাজ্যগুলোর সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপনে ব্রিটিশ সরকার অধিকতর গুরুত্ব দেন।
১০. মুঘল সাম্রাজ্যের অবসান : ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের প্রত্যক্ষ ফল ছিল মুঘল সাম্রাজ্যের অবসান। এরপর ইংরেজ সরকার বাহাদুর শাহকে বন্দি করেন।
মুঘল বাদশাহদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেন। বাহাদুর শাহকে মায়ানমারে নির্বাসন দেন। ১৮৬২ সালে রেঙ্গুনে তার মৃত্যুর সাথে সাথে ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে।
১১. ব্রিটিশ সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন : সিপাহি বিদ্রোহের পর ভারতীয়দের ব্রিটিশদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়। বিদ্রোহের পর সরকার সতর্কতা অবলম্বন করে এবং প্রতিক্রিয়াশীল নীতির আশ্রয় গ্রহণ করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, এ বিদ্রোহের পর ভারতে সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। হিন্দুরা পাশ্চাত্য শিক্ষায় ক্রমেই এগিয়ে যায়। অন্যদিকে মুসলমানরা সরকারের প্রতি বিদ্বেষ ও পাশ্চাত্য সভ্যতা ও শিক্ষা বর্জন করে ক্রমেই পিছিয়ে পড়তে থাকে।