শিল্পকলায় মামলুক শাসকদের অবদান আলোচনা কর
শিল্পকলায় মামলুক শাসকদের অবদান আলোচনা কর |
শিল্পকলায় মামলুক শাসকদের অবদান আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : ইসলামের ইতিহাসে পঠন-পাঠনে যে সকল বিষয় খুবই গুরুত্বসহকারে আলোচনা করা হয় তার মধ্যে মামলুক বংশের প্রতিষ্ঠা অন্যতম।
আইয়ুবী বংশের পতন ঘটিয়ে মামলুক বংশ প্রতিষ্ঠিত হয়। মামলুকরা ১২৫০ সাল থেকে ১৫১৭ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ ২৬৭ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন।
এ সময় জ্ঞানবিজ্ঞান সাহিত্যে, ইতিহাস স্থাপত্য ও শিল্পকলায় মামলুক শাসকগণ উদার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। মামলুক শাসনামলে মিশরে স্থাপত্যশিল্প ও চারুকলার এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল।
→ শিল্পকলায় মামলুক শাসকদের অবদান : নিম্নে শিল্পকলায় মামলুক শাসকদের অবদান আলোচনা করা হলো।
চারুকলা ও স্থাপত্যশিল্প : বাহারি ও বুরজী মামলুকগণ চারুকলা ও স্থাপত্যশিল্পে যথেষ্ট অবদান রাখেন। তাদের রাজত্বকালে চারুকলা ও স্থাপত্যশিল্পের ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছিল।
মামলুক স্থাপত্যরীতি নুরিদ ও আইয়ুবীয় সুলতানদের ইমারত দ্বারা প্রভাবানন্বিত। সিরিয়া ও মেসোপটেমিয়া স্থাপত্য রীতি কৌশলে মামলুকরা পৃষ্ঠ ছিল।
সুলতান কালাউনের রাজত্বকালে মামলুক স্থাপত্যকে তিনি একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ রূপদান করেন। কালাউন কায়রোতে একটি হাসপাতালসহ বহু মাদ্রাসা ও মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন।
ছাড়া আলেপ্পা ও দামেস্ক দুর্গসমূহ সংস্কার করেন। আল নাসির স্থাপত্যকলার এক উদার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি নাসিরিয়া কলেজ, কায়রোর মসজিদসহ ৩০টি মসজিদ নির্মাণ করেন।
মামলুকরা জ্যামিতিক নকশা কুকি লিখন পদ্ধতি লতাপাতা ইত্যাদি উপাদানের সাহায্যে তাদের স্থাপত্যশিল্পে সমৃদ্ধ করেছিলেন।
কারুকলা মামলুক সুলতানগণ কারুকলার প্রতি অনুরাগী ছিলেন। এজন্য তারা সবসময় কারুকলার দিকে নজর রাখতেন। মামলুক সুলতানদের পৃষ্ঠপোষকতায় কারুশিল্পে মামলুক কারিগরগণ অসামান্য কৃতিত্ব অর্জন করেন।
কিন্তু মামলুক চিত্রাবলিতে রং ও রেখার যথেষ্ট উৎকর্ষতা ছিলনা। আল নাসিরের সময় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল ব্রোজের ঝাড়বাতি এবং নকশাকৃত ব্রোজের দরজা যা ব্রিটিশ মিউজিয়ামে আজও সংরক্ষিত আছে।
সেন্ট লুই এর খ্রিস্টাদর্শ গ্রহণ করার বিষয়ে খোদিত তামার আধারটি মামলুক আমলে নির্মিত হয়েছিল। এই তামার আধারটি প্যারিসের লুভর মিউজিয়ামে রক্ষিত আছে এছাড়াও মৃৎপাত্র, মিহরাবের মোজাইক সোনা ও রত্ন খোচিত কুরআন পাঠের জন্য ব্যবহৃত রেহেল মিনারের অতুলনীয় কাঠ খোদাই করা মামলুক কারুশিল্পের উজ্জ্বল নিদর্শন বহন করে।
অলংকরণের দিক দিয়ে মামলুক আমল বিশেষ কৃতিত্বের অধিকারী মামলুকদের কারুশিল্পের মধ্যে হস্তলিপি শিল্প, বিশেষভাবে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ছিল।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, শিল্পকলায় মামলুক শাসকদের অবদান মিশর তথা ইসলামের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে।
প্রায় অধিকাংশ মামলুক সুলতান স্থাপত্য ও শিল্পকলায় অসামান্য অবদান রাখেন। মামলুকদের দীর্ঘ ২৫০ বছরের বেশি সময় রাজত্বকালে লিপিকলার অবদান অপরিসীম।
মুসলিম বিশ্বে মামলুকরা যে অবদান রেখে গিয়েছে, এজন্য তাদের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।