সেলজুকদের পতন সম্পর্কে আলোচনা কর
সেলজুকদের পতন সম্পর্কে আলোচনা কর |
সেলজুকদের পতন সম্পর্কে আলোচনা কর
- অথবা, সেলজুক বংশের পতন সম্পর্কে আলোচনা কর।
- অথবা, সেলজুকদের রাজ্য হারানো ঘটনা উল্লেখ কর।
উত্তর : ভূমিকা : প্রাচীন আরব থেকে শুরু করে উমাইয়া, আলানীয়দের যেমন পতন হয়েছিল, তেমনি সেলজুক বংশেরও পতন ঘটেছিল।
মূলত দুর্বল উত্তরাধিকারী, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও কলহ, সেলজুকদের পঞ্চ বিভক্তি এসবের কারণে ভূমিল বেগ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সেলজুক বংশের পতন ঘটে।
সেলজুকদের পরিচয় : সেলজুকদের আদি বাসস্থ মধ্য এশিয়ায়। মূলত, তারা ছিল কিরগিজ অঞ্চলের তুর্কি গোত্রীয় মুজ (Ghur) বংশোদ্ভূত তুর্কিস্থানের উপজাতি।
১৫৬ খ্রিস্টাব্দে সেলজুক বিন বাকায়িক নামক এক সেনাপতির নেতৃত্বে তুর্কিস্থানের কিরগিজ মালভূমি থেকে তারা সাইন নদী অতিক্রম করে দক্ষিণ ট্রান্সঅক্সিয়ানার বুখারায় এসে বসতি স্থাপন করে। পরবর্তীতে ১১৫৫ খ্রিস্টাব্দে ভূমিল বেগের দ্বারা এ বংশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
সেলজুকদের পতন ১১৯৪ খ্রিস্টাব্দে খাওয়ারিজমের শাসনকর্তা পারস্যে সেলজুকদের ও ওসমানীর সুলতানগণ এশিয়ার মাইনরের সেলজুকদের পতন ঘটান। নানাবিধ কারণে সেলজুকদের পতন ঘটে। নিম্নে পতনের কারণসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. দুর্বল উত্তরাধিকারী : সেলজুকদের পরবর্তী সুলতানদের দুর্বলতা, অযোগ্যতা, অক্ষমতা, অকর্মণ্যতা তাদের পতনের অন্যতম কারণ। মালিক শাহের মৃত্যুর পর সেলজুক সাম্রাজ্যের দ্রুত ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয়।
২. অভ্যন্তরীণ কলহ : মালিক শাহের মৃত্যুর পর তার পুত্রদের মধ্যে সিংহাসনের দাবি নিয়ে গৃহযুদ্ধ সূচনা হয়। ক্ষমতা লাভের জন্য অস্ত দ্বন্দ্বের কারণে তাদের পতন হয়
৩. গুপ্তঘাতক সম্প্রদায় : মালিক শাহের রাজত্বের শেষে দিকে নিজামুল মুলকের অন্তরঙ্গ বন্ধু হাসান বিন সাবাহ কর্তৃক গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়ের উদ্ভব ছিল সেলজুকদের পতনের অন্যতম কারণ। গুপ্তঘাতক সম্প্রদায় প্রধানমন্ত্রী নিজামুলকে হত্যা করে সেলজুক বংশের অশেষ ক্ষতি সাধন করে।
৪. আমির ও সেনাপতিদের স্বাধীনতা ঘোষণা : পরবর্তী সেলজুক সুলতানদের দুর্বলতার সুযোগে সেলজুক আমির ও সেনাপতিগণ স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। ফলে সেলজুক বংশ আরো দুর্বল হয়ে পড়ে।
৫. তাকাশের অভ্যুদয় : সেলজুক বংশের পতনের একটি অন্যতম কারণ হলো তাকাশের অভ্যুদয়। সেলজুকদের দুর্বলতার সুযোগে খাওরাজিমের শাসনকর্তা তাকাশ ১১৭৪ খ্রিস্টাব্দে পারসিক ইরাকের শেষ সুলতান তুমিল বেগকে আক্রমণ করলে তাদের পতন হয়।
৬. অর্থনৈতিক অভাব : গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়ের উপদ্রব ও সীমান্তে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের ফলে সেলজুকদের অনেকাংশ অর্থনৈতিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার ফলে পরবর্তীতে সেলজুকদের পতনের পথ সম্প্রসারিত হতে থাকে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সেলভুকগণ আব্বাসীয় খিলাফতের এক যুগসন্ধিক্ষণে আবির্ভূত হয়ে আব্বাসীয় খিলাফতের এবং সুন্নি ইসলামকে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু আত্মকলহের কারণে তারা নিজেদের আর রক্ষা করতে পারেনি।