সেলিমের মিশর বিজয়ের ফলাফল আলোচনা কর
সেলিমের মিশর বিজয়ের ফলাফল আলোচনা কর |
সেলিমের মিশর বিজয়ের ফলাফল আলোচনা কর
- অথবা, সেলিমের মিশর বিজয়ের গুরুত্ব উল্লেখ কর।
উত্তর : ভূমিকা : প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি মিশর যুগে যুগে বিভিন্ন রাজবংশ দ্বারা শাসিত হয়ে এসেছে। বুরুজি সুলতান আল কাইভবের মৃত্যুর পর বুরুজি মামলুক বংশের শাসক দুর্বল হয়ে পড়ে।
তাদের উত্তরাধিকার দ্বন্দ্ব, দুর্বলতা, বিলাসিতা ও আত্মকলহের ফলে অটোমান সুলতান প্রথম সেলিম দুর্বল মামলুক সালতানাত তথা মিশর বিজয় করেন।
→ সেলিমের মিশর বিজয়ের ফলাফল : অটোমান সুলতান সেলিম ১৫১৬ সালের ২৪ আগস্ট মিশর আক্রমণ করে মামলুক সুলতান কানসু আল ঘুরিকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে মিশর বিজয় সম্পন্ন করেন।
তাঁর এই মিশর অভিযানের ফলাফল ছিল ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী। নিম্নে সুলতান সেলিমের মিশর বিজয়ের ফলাফলসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. মামলুক বংশের পতন : প্রথম সেলিমের মিশর বিজয়ের ফলে সিরিয়া, মিশর, প্যালেস্টাইন, লেবানন, জর্ডান ও আরব উপদ্বীপে অটোমান আধিপত্য সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। আর এর মধ্য দিয়ে মিশরে মামলুক বংশের পতন ঘটে !
২. খিলাফতের পরিবর্তন : অটোমান সুলতান প্রথম সেলিম সিংহাসনে আরোহণ করে মিশরের আব্বাসীয় খলিফা আল মুতাওয়াক্কিলকে বন্দি করে কনস্টান্টিনোপলে নিয়ে আসেন।
তিনি দুর্বল আব্বাসীয় খলিফার কাছ থেকে খিলাফতের সম্পদ ও পদবি দুটোই জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছিলেন। ফলে মিশরে আব্বাসীয় খিলাফতের অবসান ঘটে এবং অটোমান সালতানাতের অভ্যুদয় ঘটে।
৩. মক্কা-মদিনায় প্রোধান্য লাভ : ১৫১৩ সালে অটোমান সুলতান প্রথম সেলিম সিংহাসনে আরোহণের পর মক্কায় হজ পালনে গমন করেন। সেখানে সারা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে মক্কা-মদিনার মর্যাদা দেখে তিনি মুগ্ধ হন।
তাই তিনি মক্কা ও মদিনার ওপর অটোমান আধিপত্য প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে মুসলিম বিশ্বে অটোমানদের মর্যাদা বৃদ্ধির চেষ্টা করেন।
৪. কায়রোর মর্যাদা হ্রাস : ফাতেমীয় শাসনকাল থেকেই কায়রো মুসলিম বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প সাহিত্যের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়। ফলে সুলতান প্রথম সেলিম কায়রোর এই মর্যাদা বিলুপ্ত করে কনস্টান্টিনোপলের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য মিশর বিজয় করেন।
তাঁর মিশর বিজয়ের ফলে মিশর অটোমান সালতানাতের একটি উপনিবেশে পরিণত হয় এবং কায়রো তাঁর প্রভাব হারিয়ে একটি ক্ষুদ্র শহরে পরিণত হয়।
৫. অটোমানদের মর্যাদা বৃদ্ধি : এতদিন মুসলিম বিশ্বে একদিকে তুরস্কে অটোমান সালতানাত আর মিশরে ফাতেমীয় সালতানাত ক্ষমতায় ছিল এবং এই দুটি খিলাফতের মধ্যে একটি অঘোষিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিরাজমান ছিল।
কিন্তু ১৫১৬ সালের ২৪ আগস্ট সুলতান প্রথম সেলিমের নেতৃত্বে অটোমানদের বিজয়ের ফলে মুসলিম বিশ্বে ফাতেমীয় খিলাফতের মর্যাদা হ্রাস পায় আর অটোমানদের আধিপত্য ও প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায় ।
৬. সেলিমের মর্যাদা বৃদ্ধি : এতদিন অটোমান সুলতানদের দুর্বলতার সুযোগে এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন রাজশক্তি অটোমান সালতানাতে আক্রমণ চালাতো।
কিন্তু ১৫১২ সালে সুলতান প্রথম সেলিম সিংহাসনে আরোহণ করে এবং যুদ্ধের ময়দানে হয়ে ওঠেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও অপরাজেয়।
আর ১৫১৬ সালের এই যুদ্ধে সেলিমের বিজয়ের ফলে পার্শ্ববর্তী অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্য তাঁর আধিপত্য স্বীকার করে নিয়েছিল।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বিশ্বসভ্যতার ইতিহাসে জাতি বা রাষ্ট্রের ভাগ্য নির্ধারণকারী যতগুলো যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল ১৫১৬ সালের ঐতিহাসিক মারজ-ই-দাবিকের যুদ্ধ তন্মধ্যে অন্যতম।
এই যুদ্ধের ফলে মিশরে মামলুক শাসনের বিলুপ্তি ঘটে এবং আব্বাসীয় খিলাফতেরও অবসান ঘটে। আর মিশরে নতুন শক্তি হিসেবে অটোমান সালতানাতের আবির্ভাব ঘটে ।