শাসক হিসাবে ওবায়দুল্লাহ আল মাহদীর কৃতিত্ব আলোচনা কর

শাসক হিসাবে ওবায়দুল্লাহ আল মাহদীর কৃতিত্ব আলোচনা কর
শাসক হিসাবে ওবায়দুল্লাহ আল মাহদীর কৃতিত্ব আলোচনা কর

শাসক হিসাবে ওবায়দুল্লাহ আল মাহদীর কৃতিত্ব আলোচনা কর

  • অথবা, শাসক হিসাবে ওবায়দুল্লাহ আল মাহদীর অবদানসমূহ তুলে ধর।

উত্তর : ভূমিকা : ইসলামের ইতিহাস পঠন-পাঠনে যে সকল বিষয় খুবই গুরুত্বসহকারে আলোচনা করা হয়। তার মধ্যে উত্তর আফ্রিকায় ফাতেমীয় খিলাফতের প্রতিষ্ঠা অন্যতম। 

এটি এমন একটি রাজনৈতিক প্রত্যক্ষ যা বিশ্বজনীন এক ঘটনা। আর এ বংশের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন ওবায়দুল্লাহ আল মাহদী। 

ওবায়দুল্লাহ আল মাহদী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ফাতেমীয় খিলাফত প্রায় ২৫০ বছরের অধিক সময় শাসনকার্য পরিচালিত করেন। আর তাই ফাতেমীয় বংশ বা খিলাফতের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ওবায়দুল্লাহ আল মাহদীর ভূমিকা অনস্বীকার্য।

→ ওবাদুল্লাহ আল মাহদীর পরিচয় : ওবায়দুল্লাহ আল মাহমুদ ৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়ার সালামীয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম আল হুসাইন। তার মূল নাম সাঈদ ইবনে হুসাইন কিন্তু ইতিহাসে তিনি ওবায়দুল্লাহ আল মাহদী নামে পরিচিত। 

৯০৯ খ্রিস্টাব্দে ওবায়দুল্লাহ আল মাহদী ফাতেমীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠা করেন এবং ৯৩৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ফাতেমীয় খলিফার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৩৪ খ্রিস্টাব্দে মাহদিয়াতে মৃত্যুবরণ করেন।

শাসক হিসাবে ওবায়দুল্লাহ আল-মাহদীর কৃতিত্ব :  নিয়ো শাসক হিসাবে ওবায়দুল্লাহ আল-মাহদীর কৃতিত্ব আলোচনা করা হলো :

১. শিয়া ও সুন্নি : ইসলামের মধ্যে সমন্বয় সাধন মূলত ওবায়দুল্লাহ আল মাহদী শিয়া মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। আর এ অঞ্চলে তখন সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি মতাদর্শীরা তার শিয়া মতবাদের শাসন মেনে নিতে চাইলেন না। তাই তিনি বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে শিয়া ও সুন্নী মুসলমানদের মধ্যে সমন্বয়সাধন করেন।

২. খারেজী বিদ্রোহ দমন : যখন ফাতেমীয় খিলাফত অস্বীকার করে মুহাম্মদ ইবনে খাজাকে আমির হিসেবে ঘোষণা করা হয় তখন ওবায়দুল্লাহ আল মাহদী। 

সেনাপতি আরুব ইবনে ইউসুফকে প্রেরণ করেন তিনদিন অবরোধ করে এবং আট হাজার অধিবাসীকে হত্যা করে খারেজী বিদ্রোহ দমন করা হয়।

৩. কাতামা বিদ্রোহ দমন ; একটা প্রভাবশালী গোত্রের নাম হলো কাতামা গোত্র। ওবায়দুল্লাহ আল মাহাদীর রাজ্যশাসনের শুরুতে এ গোত্র প্রাধান্য লাভ করলে আরবদের সাথে তাদের শত্রুতা বাধে। 

যার ফলে কায়রোয়ানে দাঙ্গা বাধে। উক্ত দাঙ্গায় কাতামা গোত্রের প্রায় ১০০০ লোকেরা মৃত্যু হলে এ গোত্র বিক্ষুব্ধ হয়। অবশেষে মাহদী এবং তার ছেলে আবুল কাশেম কর্তৃক বহু কষ্টে কাতামা বিদ্রোহ দমন সম্ভবপর।

৪. ত্রিপোলীয় বিদ্রোহ দমন : ত্রিপোলীতে বার্বার এবং আরবদের মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। যার প্রেক্ষিতে ওবায়দুল্লাহ আল মাহদী নিজ পুত্র সমর্থনপুষ্ট নৌবহরের সাহায্য তাদের দমন করে ত্রিপোলীকে সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।

৫. ইদ্রিসীয়দের সাথে সংঘর্ষ : একসময়ে ফাতেমার (রাঃ)-এর বংশধর আব্বাসীয়দের বিতাড়িত করে মরক্কোর পশ্চিম প্রান্তে ইদ্রিসীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। ওবায়দুল্লাহ আল মাহদীর আদেশে আরুব ইদ্রিসীয় সাম্রাজ্য দখল করে ফাতেমীয় সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।

৬. স্পেনের উমাইয়াদের সাথে সংঘর্ষ : ওবায়দুল্লাহ আল মাহদীর সেনাপতি ওমান দখল করে উমাইয়া বিরোধী উমর বীন হারুসুনের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে। 

এই সুযোগে সেখানে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করা হয়। ফলে একসময় উমাইয়াদের সাথে ফাতেমীয় খলিফা ওবায়দুল্লাহ আল মাহদীর সংঘর্ষ হয়।

৭. সিসিলির বিদ্রোহ : সিসিলিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সেখানে একজন গভর্নর নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু জনগণ তাকে অমান্য করে প্রাক্তন শাসনকর্তার ছেলেকে আমন্ত্রণ জানান এবং তিনি শাসনভার গ্রহণ করে ফাতেমীয় খিলাফত থেকে বের হয়ে যান।

৮. মিশর ও ইয়েমেনে অভিযান : আবুল কাসেম এবং সেনাপতি বুসরার নেতৃত্বে স্থলবাহিনী আলেকজান্দ্রিয়া জয় করে। উক্তর আফ্রিকাতে ফাতেমীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে ইবনে হাওসাবের প্রভাবে ইয়েমেনে মাহদীর আনুগত্য প্রকাশ করে।

৯. কারমাতীয়ান ও হাজরে আসওয়াদ : কারমাতীয়ানরা হাজরে আসওয়াদ পাথরটি তাদের রাজধানীতে নিয়ে যায়। অতঃপর ওবায়দুল্লাহ আল মাহদী পাথরটি যথাস্থানে বসানোর জন্য কারামাতিয়ানদের নিকট পত্র প্রেরণ করেছিলেন এবং পত্র পেয়ে পাথরটি যথাস্থানে স্থাপন করা হয়।

১০. সামরিক সংস্কার ও নৌবাহিনী গঠন : ওবায়দুল্লাহ আল মাহদী তিনি বিভিন্ন আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সামরিক বাহিনী গঠন করেছিল এবং নৌবাহিনীর ব্যাপক সংস্কার করেছিল ।

১১. স্থাপত্য কীর্তি : আল মাহদী দুটি শহর নির্মাণ করে তার কীর্তি দেখিয়ে দিয়েছেন। রাজকীয় আরাম আয়েসের জন্য বিভিন্ন রাজকীয় অট্টালিকা গঠন করা হয়েছিল।

১২. রাজধানী নির্মাণ : ওবায়দুল্লাহ আল মাহদীর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ছিল ফাতেমীয়দের জন্য মাহদী রাজধানী নির্মাণ। বার্বার সেনাবাহিনী থেকে রক্ষার জন্য রাজধানী স্থানান্তর করা হয়েছিল ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, উত্তর আফ্রিকায় ফাতেমীয় বংশের প্রতিষ্ঠা করে মুসলিম বিশ্বের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন। 

তিনি শুধু এ বংশের প্রতীকৃতি ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন একজন যোগ্য, দক্ষ ও মহানুভব শাসক। ফাতেমীয় সিংহাসনে বসার পর তিনি কৃতিত্বপূর্ণ কার্যাবলী সম্পাদন করে বিশ্বের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ