শাসক হিসেবে নবাব সিরাজ উদ দৌলার কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর
শাসক হিসেবে নবাব সিরাজ উদ দৌলার কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর |
শাসক হিসেবে নবাব সিরাজ উদ দৌলার কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর
- অথবা, নবাব সিরাজের কৃতিত্বসমূহ বিচার কর।
উত্তর : ভূমিকা : বাংলার ইতিহাসে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার স্বল্প সময়ের রাজত্বকাল একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে সিরাজ-উদ-দৌলা মাত্র তেইশ বছর বয়স্ক বাংলার মসনদে আরোহণ করেন।
মাতামহ আলীবর্দী খানের অত্যধিক স্নেহে লালিত পালিত হওয়ায় সিরাজ রাজনৈতিক জ্ঞান বা রাজনৈতিক কার্যকলাপের জটিলতার অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারেনি।
সুতরাং মাতামহের মৃত্যুর পর যখন শাসনকার্যের সমগ্র দায়িত্ব তার উপর ন্যস্ত হয় তখন স্বভাবতই প্রয়োজনীয় সতর্কতা ও দক্ষতা অবলম্বনে তিনি অসমর্থ হন।
তথাপি সিরাজ যথাসাধ্য চেষ্টা করেন প্রাকৃতিক সমস্যা মোকাবিলা করে শাসন ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা আনতে।
প্রথমদিকে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা শাসনকার্যে কৃতিত্ব দেখাতে সমর্থ হলেও অচিরেই তার দুর্বলতা প্রকাশিত হতে থাকে যার চূড়ান্ত পরিণতি তার পতন। মোটকথা তিনি প্রাথমিকভাবে সাফল্য লাভ করলেও শেষ রক্ষা করতে ব্যর্থ হন ।
নবাব সিরাজের কৃতিত্ব : প্রকৃতপক্ষে নবাব সিরাজ-উদ- দৌলা ছিলেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব। তার রাজত্বকাল তিনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সফলতা দেখিয়েছেন আবার কিছু ক্ষেত্রে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।
নিম্নে নবাব সিরাজের কৃতিত্ব বর্ণনা করা হলো :
১. সিংহাসনে আরোহণ : মাতামহ আলীবর্দী খান বিহারের শাসনকর্তার পদ লাভের ঠিক আগে ১৭৩৩ খ্রিষ্টাব্দে সিরাজের জন্ম হয়। সিরাজ-উদ-দৌলার পিতার নাম ছিল জৈনুদ্দিন আহম্মদ খান।
তার মা ছিলেন আলীবর্দী খানের কনিষ্ঠা কন্যা আমেনা বেগম। নবাব সিরাজ ছিলেন মাতামহ আলীবর্দী খানের অত্যধিক স্নেহের পাত্র। আলীবর্দী খান সিরাজকে খুব পছন্দ করতেন।
এ কারণে তার মৃত্যুর পর মসনদের ভাবী উত্তরাধিকারী হিসেবে তিনি নবাব সিরাজকে মনোনীত করেন। নবাব আলীবর্দী খানের কোনো পুত্র সন্তান ছিল না, সুতরাং মৃত্যুর পূর্বেই তিনি তার কনিষ্ঠ কন্যার পুত্র সিরাজকে বাংলার পরবর্তী শাসক বলে ঘোষণা দিয়ে যান।
সেসূত্রে ১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দে ১০ই এপ্রিল নবাব আলীবর্দী খানের মৃত্যু হলে তার দৌহিত্র সিরাজ- উদ-দৌলা বাংলার মসনদে আরোহণ করেন।
২. ঘষেটি বেগমের ষড়যন্ত্র দমন : নবাব আলীবর্দী খান তার প্রিয় দৌহিত্র সিরাজ-উদ-দৌলার জন্য মসনদের সাথে সাথে অনেক সমস্যাও রেখে যান। তার নিজের পরিবারেই ছিল অনৈক্য।
তাদের মধ্যে ছিল সিরাজের বিরুদ্ধে ক্ষোভ। সিরাজের অন্যতম শত্রু ছিলেন তার বড় খালা ঘষেটি বেগম। সিরাজের ছোট ভাই ইকরামউদ্দৌলাকে তিনি লালন-পালন করেন।
তার ইচ্ছা ছিল নবাব আলীবর্দীর মৃত্যুর পর ইকরামউদ্দৌলাকে মসনদে বসাবেন। কিন্তু আলীবর্দীর মৃত্যুর পূর্বেই ১৭৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ইকরামউদ্দৌলার মৃত্যু হয়।
নিঃসন্তান কন্যা ঘষেটি বেগমকে আলীবর্দী অত্যাধিক স্নেহ করতেন। এই সুবাদে পিতার উপর প্রভাব বিস্তার করে ঘষেটি বেগম প্রচুর ধন সম্পদের মালিক হন।
ঘষেটি বেগম নিঃসন্তান হয়েও রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন এবং সিরাজের অন্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না পেয়ে শওকত বাঙ্গের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে পড়েন।
তিনি শওকত জঙ্গকে সিরাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আমন্ত্রণ জানান। এছাড়া সিরাজের শত্রু যে যেখানে ছিল সকলেই ঘষেটি বেগমের আশীর্বাদ লাভ করে।
নবাব সিরাজ এমনি পরিস্থিতিতে তার শত্রুদের মোকাবিলা করার | সিদ্ধান্ত নেন এবং প্রথমেই ঘষেটি বেগমের দিকে মনোনিবেশ করেন।
ঘষেটি বেগমের অর্থ সম্পদের দিকে সিরাজের লোভও ছিল। তিনি ঘষেটি বেগমের মতিঝিল প্রাসাদ অধিকার করার জন্য একদল সৈন্য পাঠান।
ঘষেটি বেগমও বাধা দেওয়ার জন্য বেশকিছু লোকজন জড়ো করেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সকলেই ঘষেটি বেগমকে পরিত্যাগ করে।
সিরাজ কোনোপ্রকার রক্তপাত ছাড়াই ঘষেটি বেগমের প্রাসাদ অধিকার করে এবং তার অর্থ সম্পদ নিজের হস্তগত করেন। এভাবে সিরাজ বিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রধান উদ্যোক্তাকে সিরাজ সমন করে কৃতিত্বের পরিচয় দেন।
৩. শওকত জঙ্গকে দমন : সিরাজ মসনদে আরোহণ করেই দেখতে পান চারিদিকে চক্রান্তের জাল পাতা রয়েছে। সামরিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যেও সিরাজের শত্রুর অভাব ছিল না।
তার প্রধান শত্রু ছিল তারই খালাতো ভাই পূর্ণিয়ার নবাব শওকত জঙ্গ। সিরাজ মসনদে আরোহণের পর শওকত জঙ্গ তাকে অভিনন্দন বাণী পাঠাননি।
এতে পরিষ্কার বুঝা যায় যে, শওকত জঙ্গ সিরাজের অনুগত ছিল না। তাই শওকত জলকে দমন করার উদ্দেশ্যে নবাব ১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ মে সিরাজ মুর্শিদাবাদ থেকে সসৈন্যে পূর্ণিয়ার দিকে অগ্রসর হন এবং ২০ মে তিনি রাজমহলে পৌঁছান।
কিন্তু পরবর্তীতে যাত্রা স্বগিত করার সিদ্ধান্ত নেন। সে যাত্রায় শওকত জঙ্গ রক্ষা পান। ইতোমধ্যে শওকত জঙ্গ বাদশাহের উজিরকে এক কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে সুধানারির ফরমান এবং সিরাজকে বিতাড়িত করার জন্য বাদশাহের অনুমতি পেয়েছিলেন।
সুতরাং তিনি সিরাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করলেন। নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা কলকাতা জয় সমাপ্ত করে। মানিক চাদের উপর কলকাতার ভার অর্পণ করে মুর্শিদাবাদে ফিরে আসেন।
এরপর তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী শওকত জঙ্গকে দমনের জন্য ১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে সসৈন্যে পূর্ণিয়া অভিমুখে অগ্রসর হন।
১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ অক্টোবর নবাবগঞ্জের মনিহারী গ্রামে দুপক্ষে যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে শওকত জঙ্গ পরাজিত ও নিহত হন।
৪. কলকাতা জয় : আলীবর্দী খানের মৃত্যু আসন্ন এই সংবাদ পাওয়া মাত্র বাংলার ইংরেজ ও ফরাসি বণিকগণ ইউরোপে সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধের প্রস্তুতির সূত্র ধরে বাংলায় অবস্থিত তাদের ঘাঁটিগুলিতে দুর্গ নির্মাণ শুরু করে।
আলীবর্দী খানের মৃত্যুতে নতুন নবাবের মসনদ আরোহণের আনুষ্ঠানিক ব্যস্ততার সুযোগ গ্রহণ করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।
সিরাজ-উদ-দৌলার প্রতি ইংরেজগণ প্রথম থেকেই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও অবহেলা প্রদর্শন শুরু করে। আলীবর্দী খানের মৃত্যুর কিছুকাল পরে সিরাজা সংবাদ পান যে ইংরেজগণ আলীবর্দীর মৃত্যুর পর ঘষেটি বেগমকে সিরাজের বিরুদ্ধে সাহায্য দানে প্রতিজ্ঞত হয়েছে।
তাছাড়া সিরাজ যখন মসনদে আরোহণ করেন তখন ইংরেজগণ নতুন নবাব হিসাবে তাকে উপঢৌকন প্রেরণের চিরাচরিত রীতি অমান্য করে।
উপরন্তু ইংরেজগণ রাজবল্লভের পুত্র কৃষ্ণদাসকে আশ্রয় প্রদান করে। এমতাবস্থায় ইউরোপে সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধের অজুহাতে ইংরেজ ও ফরাসিগণ বাংলায় দুর্গ নির্মাণ শুরু করে।
সিরাজ তাদেরকে নিরস্ত হতে আদেশ দেন। ফরাসি বণিকগণ সিরাজের আদেশ অনুযায়ী দুর্গ নির্মাণ বন্ধ করে। কিন্তু ঔদ্ধত্য ইংরেজ বণিকগণ সিরাজের আদেশ উপেক্ষা করে চলে।
তদুপরি তারা নবাবের দূতকে অপমান করতেও দ্বিধা করেনি। নবাব কৃষ্ণদাসের সমর্পণ দাবি করলেও ইংরেজগণ তা অমান্য করে।
এমতাবস্থায় ইংরেজ গভর্নর ড্রেক প্রদত্ত পত্র সিরাজের হস্তগত হয়। এই পরে ট্রেক ইংরেজদের সদিচ্ছার কথা অতি নম্র ভাষায় সিরাজ-উদ-দৌলাকে জানালেও দুর্গ নির্মাণ বন্ধ করবে কিনা সে বিষয়ে কোনো উল্লেখ করেননি।
এতে ক্রুদ্ধ হয়ে নবাব সিরাজ- উদ-দৌলা কলকাতার ইংরেজদের শাস্তিদানের পরিকল্পনা করেন এবং সসৈন্যে যাত্রা শুরু করেন।
পথিমধ্যে তিনি কাসিমবাজারের ইংরেজ কুঠি দখল করে নিয়ে কলকাতার দিকে অগ্রসর হন। ১৬- জুন সিরাজ কলকাতার উপকণ্ঠে পৌঁছান।
কলকাতা দুর্গের সৈন্য সংখ্যা তখন খুবই অল্প ছিল। কার্যক্রম ইউরোপীয় সৈন্যের সংখ্যা তিনশ'রও কম ছিল এবং ১৫০ জন আর্মেনিয়ান ও ইউরেশিয়ান সৈন্য ছিল।
কলকাতাস্থ ইংরেজ ঘাঁটি ফোর্ট উইলিয়াম দখল করতে সিরাজকে বেগ পেতে হয়নি। গভর্নর ড্রেক ও অপরাপর ইংরেজগণ ফোর্ট উইলিয়াম ত্যাগ করে জলপথে ফলতা নামক স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করেন।
২০ জুন কলকাতার নতুন গভর্নর হলওয়েল আত্মসমর্পণ করেন এবং বিজয়ী সিরাজ কলকাতার দুর্গে প্রবেশ করেন। এভাবে সিরাজ ইংরেজদের দমন করে কলকাতা করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন।
৫. আলীনগরের সন্ধি স্থাপন : কলকাতা জয় করলেও নবাব একে রক্ষার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এই সুযোগে ইংরেজ কোম্পানি মাদ্রাজ থেকে রবার্ট ক্লাইভের অধীনে একদল সৈন্য ও ওয়াটসনের অধীনে এক নৌবহর কলকাতা পুনরুদ্ধারের জন্য পাঠান।
১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ ডিসেম্বর ইংরেজ সৈন্য ও নৌবহর কলকাতার দিকে যাত্রা করে। পথিমধ্যে মানিকর্তাদের সঙ্গে খণ্ড যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে মানিকটাল পলায়ন করে।
ইংরেজরা বান্ধবরা দুর্গ ধ্বংস করে এবং বিনা যুদ্ধে কলকাতা অধিকার করে। এরপর তারা ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ সংরক্ষিত করে।
কলকাতা অধিকার করেই ইংরেজরা নবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। অপর দিকে নবাব সিরাজও কলকাতা অধিকারের সংবাদ পেয়ে যুদ্ধযাত্রা করেন।
ক্লাইভ ১০ জানুয়ারি হুগলি অধিকার করে শহরটি পৃষ্ঠন করেন এবং পার্শ্ববর্তী বহু গ্রাম পুড়িয়ে দেন। ১৯ জানুয়ারি নবাব হুগলী পৌঁছালে ইংরেজরা কলকাতায় প্রস্থান করেন।
১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩ ফেব্রুয়ারি নবাব কলকাতার শহরতলীতে আমীর চাদের বাগানে শিবির স্থাপন করে। ৫ ফেব্রুয়ারি ইংরেজরা নবাবের শিবির আক্রমণ করে, ফলে নবাবের ১৩০০ লোক হত হয়।
কিন্তু নবাবের সৈন্য সুসজ্জিত হয়ে পাল্টা আক্রমণ করলে ক্লাইভ প্রস্থান করেন। কলকাতা জয় করার মত যথেষ্ট সৈন্য থাকার পরও নবাব আহমদ শাহ আবদালীর আগমনে ভীত হয়ে পড়েন এবং ইংরেজদের সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করেন।
১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ৯ ফেব্রুয়ারি নবাব ও ইংরেজদের মধ্যে আলীনগরের সন্ধি স্থাপিত হয়। সন্ধির শর্তানুসারে
(১) নবাব ইংরেজপণের শিল্পির সম্রাটের নিকট থেকে প্রাপ্ত সকল বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা স্বীকার করে নেন।
(২) কলকাতা আক্রমণের ক্ষতিপূরণ প্রদানে নবাব স্বীকৃত হন।
(৩) নবাব কোম্পানিকে দুর্গ নির্মাণ ও নিজস্ব মুদ্রা প্রবর্তন করার অধিকার দেয়। এই সন্ধির ফলে নবাবের প্রতিপত্তি অনেক হ্রাস পায় এবং ইংরেজ শক্তি, প্রতিপত্তি ও ঔদ্ধত্য অনেক বেড়ে যায়।
৬. পলাশির যুদ্ধে পরাজয় : আলীনগরের সন্ধি স্থাপন করেও নবাব ইংরেজদের সঙ্গে চূড়ান্ত যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেননি। ষড়যন্ত্রকারীগণ যখন সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত তখন রবার্ট ক্লাইভ অতিসামান্য অজুহাতে সিরাজের বিরুদ্ধে সসৈন্যে অগ্রসর হন।
নবাবও ষড়যন্ত্রের কথা জ্ঞাত হয়ে পূর্বেই প্রস্তুত ছিলেন। সুতরাং তিনিও সসৈন্যে ইংরেজদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন সকালে ভাগীরথী নদীর তীরে পলাশির প্রান্তরে উভয় পক্ষে যুদ্ধ হয়।
যুদ্ধে নবাবের সৈন্যবাহিনী বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করে। মोडসন, মোহনলাল ও সিনফ্রের প্রচেষ্টায় নবাব প্রায় জয়ের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হয়।
কিন্তু এমতাবস্থায় নবাব মীরজাফরের | চক্রান্তে যুদ্ধ বন্ধ করার এক মস্ত বড় সিদ্ধান্ত দেন। ফলে ইংরেজরা পূর্ণ উদ্যমে সুসজ্জিত হয়ে অতর্কিতভাবে নবাবের বাহিনীকে আক্রমণ করে সৈন্যবাহিনীকে ছত্রভঙ্গ করে ফেলে।
নবাব নিরুপায় হয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে থেকে পলায়ন করেন। ফলে ইংরেজরা যুদ্ধে জয়লাভ করে। নবাব চেষ্টা করেছিলেন সৈন্য সপ্তাহ করে পুনরায় যুদ্ধে অবতীর্ণ হবার। কিন্তু তার আগেই তাকে হত্যা করা হয়।
৭. মূল্যায়ন : নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা ছিলেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব। কিন্তু নবাব হিসেবে তার যে ধরনের রাজনীতিক ও কূটনৈতিক আন থাকা প্রয়োজন ছিল তা তার ছিল না।
শাসক হিসেবে তিনি বিরূপ পরিবেশে কঠোরতায় আশ্রয় গ্রহণ করতে পারেননি। তিনি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেও অসমর্থ ছিলেন।
তিনি প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের কথা জেনেও নিশ্চুপ ছিলেন। তিনি মীর জাফরের বিষয়ে অবগত হয়েও তার বিরুদ্ধে কোনোরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
ফলে পরিণামে তার পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে। এদিক বিবেচনা করলে শাসক হিসেবে তিনি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।
কিন্তু বৃহত্তর পরিস্থিতিতে দেখা যায়, সিরাজ শওকত জঙ্গের মত শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে সফলতা দেখিয়েছেন।
তিনি তাকে পরাজিত ও নিহত করে মসনদে নিজেকে নিষ্কন্টক করেছিলেন। ইংরেজদের সাথেও প্রথমে শান্তিপূর্ণ আপোস মীমাংসা চেষ্টা করেছেন।
পরে অবশ্য একদিকে অস্ত্রধারণ ও অপরদিকে কূটনীতির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছেন। এতকিছু সত্ত্বেও তিনি শেষ রক্ষা করতে পারেননি। এর জন্য দায়ী শুধু তিনি নন তার নিকটস্থ অমাত্যবর্গ ও চক্রান্তকারীগণ ।
উপসংহার : আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, তার যত দোষই থাকুক না কেন, তিনি তার প্রভু ও দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। বেদনাময় নাটকের প্রধান অভিনেতাদের মধ্যে একমাত্র তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম, যিনি প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করেননি।
ব্যক্তিগত স্বার্থের খাতিরে নিজেদের দেশ বিদেশিদের কাছে বিক্রয়ের নীচতা তিনি উপলব্ধি করেছিলেন। তাই শাসক হিসেবে তার কৃতিত্ব পরিণামে ব্যর্থ হলেও মানব হিসেবে তার কৃতিত্ব ছিল অপরিসীম। তিনি ছিলেন সত্যিকার দেশপ্রেমিক এবং বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের প্রতীক ।