শশাঙ্কের শাসন ব্যবস্থা সংক্ষেপে লিখ। শশাঙ্কের শাসন পদ্ধতিগুলো কী কী
শশাঙ্কের শাসন ব্যবস্থা সংক্ষেপে লিখ। শশাঙ্কের শাসন পদ্ধতিগুলো কী কী |
শশাঙ্কের শাসন ব্যবস্থা সংক্ষেপে লিখ। শশাঙ্কের শাসন পদ্ধতিগুলো কী কী
- অথবা, প্রাচীন বাংলার শশাঙ্কের শাসন পদ্ধতিগুলো নাম লিখ ।
উত্তর : ভূমিকা : একজন পরাক্রমশালী শাসক হিসেবে রাজ্যবিস্তার স্বীয় সাম্রাজ্যকে শত্রুমুক্ত করা ইত্যাদি উদ্দেশ্য নিয়ে শশাঙ্ক তার রাজ্য ব্যবস্থায় কঠোর শাসননীতি গ্রহণ করেছিলেন।
সমাজের শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং সর্বপরি নিজেকে বহিঃশত্রুর হাত থেকে মুক্ত রাখার প্রেক্ষাপটে শশাঙ্ক তার শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন ।
শশাঙ্কের শাসন পদ্ধতি : নিচে শশাঙ্কের শাসন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. রাজার ক্ষমতা : শশাঙ্কের শাসনব্যবস্থায় রাজা ছিলেন। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। রাষ্ট্রে তার ক্ষমতা ছিল অপরিসীম। এ রাজামহাধিরাজ উপাধি গ্রহণ করতেন।
শশাঙ্কের শাসনামলে একাধিক শিলালিপিতে গৌড় কর্ণসুবর্ণরাজ শশাঙ্ক মহারাজাধিরাজ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন।
২. রাজার দায়িত্ব : শশাঙ্কের শাসনব্যবস্থায় রাজাই ছিলেন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। সুতরাং রাজার অনেক দায়িত্ব ছিল। রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণ। আইন প্রণয়ন, যুদ্ধ পরিচালনা ইত্যাদি ছিল। রাজার দায়িত্ব ।
৩. প্রশাসনিক বিভাগসমূহ : শশাঙ্কের শিলালিপি থেকে জানা যায় প্রশাসনিক বিভাগগুলো গুপ্ত যুগের মতোই ছিল। শশাঙ্ক শাসনকার্যের সুবিধার জন্য বর্তমানকালের মতো শাসন বিভাগকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেন। প্রত্যেকটি বিভাগের অধীনে কয়েকটি জেলা ছিল ।
৪. বিভিন্ন কর্মচারীবৃন্দ : শশাঙ্কের সময় মহারাজাধিরাজ এর অধীনে অনেক কর্মচারী থাকতো। এদের মধ্যে মহাপ্রতীহার মহাপিলুপতি, পঞ্চাধিকারনোপরিক 'পূরকালোপরিক' পাটু পরিস্ক, ছিল উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বিভিন্ন বেসামরিক লোকও কর্মচারী প্রশাসনিক কার্যের সুবিধার জন্য নিযুক্ত থাকতেন।
৫. মন্ত্রিপরিষদ : রাজাকে শাসনসংক্রান্ত কাজে সহযোগিতা করার জন্য মন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ ছিল। গুপ্ত শাসনব্যবস্থার মতো শশাঙ্কের শাসনব্যবস্থায়ও কয়েকজন মন্ত্রীর উল্লেখ পাওয়া যায় ।
যেমন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী, রাজস্বমন্ত্রী, বিচারমন্ত্রী ইত্যাদি। প্রধানমন্ত্রী ছিলেন সর্বোচ্চ কর্মচারী, এছাড়া উচ্চ পদস্থ কর্মচারী ও সামন্ত দের নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ গঠিত ছিল।
৬. শশাঙ্কের প্রজাহিতৈষণা : শশাঙ্ক শুধু একজন দক্ষ শাসকই নন তিনি সাথে সাথে ছিলেন একজন প্রজাহিতৈষণা শাসক।
তিনি রাজধানী কর্ণসুবর্ণকে সম্পদে পরিপূর্ণ নগরীতে রূপান্তরিত করেছিলেন জনগণের জীবনকে সহজ ও সরল করার জন্য । প্রজাহিতৈষণা তার শাসনব্যবস্থার অন্যতম দিক।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, শশাঙ্কের শাসনব্যবস্থা ছিল গুপ্ত শাসনের অনুরূপ। এখানে তেমন কোনো পরিবর্তন সাধিত হয় নাই।
তবে শশাঙ্কের শাসনামল থেকে পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে সামন্ততন্ত্রের সূত্রপাত হয় এবং এ সামন্ততন্ত্রের পূর্ণরূপ দেখা যায় পাল আমলে। সর্বোপরি শশাঙ্কের শাসনব্যবস্থায় আধুনিক যুগের শাসন বিভাগের মধ্যে মিল দেখতে পাওয়া যায় ।