শশাঙ্কের ধর্মমত কি ছিল । শশাঙ্কের ধর্মমত আলোচনা কর
শশাঙ্কের ধর্মমত কি ছিল । শশাঙ্কের ধর্মমত আলোচনা কর |
শশাঙ্কের ধর্মমত কি ছিল । শশাঙ্কের ধর্মমত আলোচনা কর
- অথবা, শশাঙ্ক কেমন ধর্মীয় পৃষ্ঠপোষক ছিলেন?
উত্তর : ভূমিকা : ভারতে শশাঙ্ক ছিলেন বংশপরিচয়হীন অজ্ঞাত ব্যক্তি। কিন্তু শশাঙ্ক নিজ কর্মদক্ষতার দ্বারা ইতিহাসের পাদ প্রদীপের সামনে দাঁড়ান।
ভারতের মহাবীর কর্নের ন্যায় তিনি প্রমাণ করেন যে, জন্ম দেবের অধীন হলেও পৌরুষ নিজের অধীন। তিনি গৌড়ের স্বাধীন সার্বভৌম রাজা হন এবং পরধর্মের প্রতি শশাঙ্ক সহানুভূতিশীল ছিলেন।
→ শশাঙ্কের ধর্মীয় পৃষ্ঠপোষকতা : শশাঙ্কের মুদ্রায় মহেশ্বর বা শিবের মূর্তি খোদিত ছিল তাই তিনি শৈব ধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন একথা বলা যায়।
অন্যদিকে বৌদ্ধ গ্রন্থগুলোতে তাঁর বৌদ্ধ, বিষ্যে সম্পর্কে জানা যায়। হিউয়েন সাং এর মতে শশাঙ্ক যে বৌদ্ধ বিদ্বেষী ছিলেন তার প্রমাণ কার্যকলাপে পাওয়া যায়। যথা-
১. শশাঙ্ক কুশনগরের বৌদ্ধ বিহার থেকে বৌদ্ধগণকে তাড়িয়ে দিয়ে বৌদ্ধ ধর্ম সমূলে ধ্বংস করতে চান।
২. পাটলীপুত্রে বুদ্ধের পদচিহ্ন অঙ্কিত একটি পাথর গঙ্গাজলে ভাসিয়ে দেন।
৩. বুদ্ধগয়ার বোধিবৃক্ষ ছেদ করে এর ডালপালা পানিতে ভাসিয়ে দেন।
৪. একটি বৌদ্ধ মূর্তি ধ্বংস করেন।
এর ফলে শশাঙ্কের ক্ষয়রোগ হয় মাংস পচে যায় শেষে মারা যান। তবে এ বর্ণনা পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ হিউয়েন সাং নিজেই আবার বলেছেন যে, ভারতবর্ষে আগমনকালে শশাঙ্কের রাজধানীসহ সর্বত্রই বৌদ্ধধর্মের প্রসারের কথা।
এছাড়া ইৎসিং ও তার বর্ণনায় এ ধরনের কোন উক্তি করেননি। তাই বলা যায় যে, শশাঙ্ক নিজে শৈবধর্মের পৃষ্ঠপোষক হলেও অন্যান্য ধর্মের প্রতি তিনি সহানুভূতিশীল ছিলেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, শশাঙ্কের ধর্মীয় জীবন নিয়ে যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে। বহু লেখকই শশাঙ্ককে বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি বিদ্বেষী বলে অভিহিত করেছেন।
কিন্তু তাদের এ মতামতগুলো কতটুকু সত্য তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। উল্লেখ্য যে বানভট্ট ও হিউয়েন সাং হলেন শশাঙ্কের ধর্মীয় মতাদর্শ সম্পকে জানার অন্যতম প্রধান উৎস।
তবে এ দুজন ব্যক্তিই ছিলেন শশাঙ্কের চিরশত্রু হর্ষবর্ধনের রাজকবি ও গুণগ্রাহী। সুতরাং এ জটিল ধারণার জন্যই শশাঙ্কের ধর্মমত সম্পর্কে রহস্য রয়েছে। তাই শশাঙ্কের ধর্মীয় জীবন সম্পর্কে জানা কঠিন হয়ে পড়ে।