সালাহউদ্দিন আইয়ূবীর উত্তরাধিকারী ক্রুসেডারদের সংঘর্ষের একটি বর্ণনা দাও
সালাহউদ্দিন আইয়ূবীর উত্তরাধিকারী ক্রুসেডারদের সংঘর্ষের একটি বর্ণনা দাও |
সালাহউদ্দিন আইয়ূবীর উত্তরাধিকারী ক্রুসেডারদের সংঘর্ষের একটি বর্ণনা দাও
- অথবা, সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর উত্তরাধিকারী ও ক্রুসেডারদের সংঘর্ষের একটি চিত্র তুলে ধর।
উভর : ভূমিকা : ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের মধ্যে সংঘটিত যে-কোনো যুদ্ধ অপেক্ষা ক্রুসেড ছিল সুদূরপ্রসারী ঘটনা।
দ্বাদশ শতাব্দী ও ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ক্রুসেডারদের আঘাতে ইসলাম যখন | রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে, তখন সালাহউদ্দিন ও তার উত্তরাধিকারীগণ এগিয়ে এসে তা প্রতিহত করে ইসলামের গৌরব ঐতিহ্যকে সমুন্নত রেখেছেন।
সালাহউদ্দিন আইয়ুবী ও তার উত্তরাধিকারীগণ প্রতিভা, বুদ্ধিমত্তা ও সামরিক শক্তির সাহায্যে কঠোরভাবে ক্রুসেডারদের দমন করেছিলেন। সালাহউদ্দিন উত্তরাধিকারীগণ ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করে সফলতা লাভ করেছেন।
→ সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর উত্তরাধিকারী ও ক্রুসেডারদের মধ্যে সংঘর্ষের বিবরণ : সালাহউদ্দিন আইয়ুবী মৃত্যুর পূর্বে কোনো উত্তরাধিকারী ঘোষণা করে যাননি যে কারণে তার তিন পুত্র রাজ্যের শাসনকর্তা হন তারা হলেন-
(ক) আল মালেক উল আফজল রাজধানী দামেস্কসহ সিরিয়া ও প্যালেস্টাইন,
(খ) আল মালিক উল আজিজ এবং
(গ) আল মালিক উজ জহির আলেপ্পো প্রদেশের অধিপতি হন। সালাহউদ্দিনের ভাই আল মালেক উল আদিল এবং চাচা শিরকুহের পুত্রগণ ও বিভিন্ন স্থানে জায়গির লাভ করেন।
কিন্তু সালাহউদ্দিনের পুত্রগণ ও অন্যান্য আত্মীয়দের মাঝে সুসম্পর্ক না থাকায় নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধে।
নিম্নে আইয়ূবী বংশের সাথে- ক্রুসেডারদের বিবরণ দেওয়া হলো-
১. চতুর্থ ক্রুসেড : সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী মারা যাওয়ার পর পোপ তৃতীয় সেলেস্টাইন ১৯৯৫ সালে চতুর্থ ক্রুসেড ঘোষণা করেন। তিনি প্যালেস্টাইনসহ সমগ্র ইউরোপ আন্দোলন চালান।
তারা জলপথে এসে বৈরুত অবরোধ করেন। অবশেষে সালাহউদ্দিন আইয়ুবী ভাই মালেক আল আদিলের হাতে পরাজিত হন এবং একটি সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ধ হন।
২. পঞ্চম ক্রুসেড : তিন বছর পর ১২০০ খ্রিস্টাব্দে অর্থ লালসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পোপ তৃতীয় ইনোসেন্ট পঞ্চম জুসেড পরিচালনা করেন।
তারা আক্রমণ করে অসংখ্য নর-নারী ও নিরীহ মানুষকে হত্যা করে, ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। আটদিন যাবত ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে ব্যাপক ধনসম্পদ লুট করে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে।
৩. ষষ্ঠ ক্রুসেড : ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে প্রায় দুই লক্ষ সৈন্যবাহিনী নিয়ে পোপ তৃতীয় ইন্নোসেন্ট ক্রুসেড ঘোষণা করেন। সৈন্যবাহিনী প্রথমে সিরিয়া যায়।
পরে সেখান মিশর ও ডালমেটিয়া যায়। সেখানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে প্রায় ৭০,০০০ অধিবাসীকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। এ সময় আইয়ুবীদের সাথে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষ হয়।
পাঁচ বছরের মাথার টিকতে না পেরে বিপর্যন্ত অবস্থায় ১২২১ খ্রিস্টাব্দে মুসলমানদের সাথে ক্রুসেডাররা সন্ধি করে চলে যেতে বাধ্য হয়।
৪. সপ্তম ক্রুসেড : ষষ্ঠ ক্রুসেডের আট বছর জার্মানি সম্রাট নবম গ্রেগরী পুনরায় ক্রুসেডের প্রস্তুতি নেয়। এটি সপ্তম ক্রুসেড নামে পরিচিত। তিনি ১২২৯ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়ায় উপস্থিত হন।
কিন্তু আক্রমণের সাহস করতে না পেরে ১০ বছর ১০ মাস ১০ দিনের জন্য একটি সন্ধি চুক্তি করে। কিন্তু মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই ১২৩৮ সালে মিশরের কর্তা কামিল মারা গেলে তার পুত্র আবু বকর মালেক উল আদিল সিংহাসনে বসেন।
কিন্তু তার বিচক্ষতার অভাবে তার ভাই মালিক উল সালেহ ১২৪০ সালে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে সিংহাসনে বসেন। একই বছর হাররানের অধিপতি আবু নসর দাউদ জেরুজালেম পুনরাধিকার করেন ।
৫. অষ্টম ক্রুসেড : ১২৪৪ খ্রিস্টাব্দে লুইয়ের নেতৃত্বে অষ্টম ক্রুসেড সংঘটিত হয়। তার নেতৃত্বে খ্রিস্টানরা মিশর আক্রমণ করে কিন্তু আইয়ুবের পুত্র তুরান শাহের নিকট পরাজিত হন।
মুসলমানগণ প্রকাশ্য আক্রমণের মাধ্যমে খ্রিস্টানদের অধিকৃত বিভিন্ন অঞ্চলগুলো আইয়ুবী বংশের নেতৃত্বে মুসলমানরা ১২৯১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পুনরুদ্ধার করেন। এভাবে অষ্টম ক্রুসেড শেষ হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুসলমানদের নিকট ক্রুসেডারদের সাথে যুদ্ধ করা ছিল যুগান্তকারী ঘটনা। সালাহউদ্দিন ও তার উত্তরাধিকারীগণ কূটনৈতিক যোগ্যতাবলে ক্রুসেডারদের বারবার পরাজিত করেন।
ক্রুসেডারদের বারবার আক্রমণ প্রতিহত করতে সালাহউদ্দিন ও তার উত্তরাধিকারীগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ইউরোপের খ্রিস্টানদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে আইয়ুবীরা ইসলামের গৌরব ঐতিহ্যকে সমুন্নত রেখেছেন।
গাজী সালাহউদ্দিন ও তার উত্তরাধিকারীরা মুসলিম গৌরব উদ্ধারে যে ভূমিকা পালন করেন ইসলামের ইতিহাসে তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে ।