সালাহউদ্দিন আইয়ূবীর কার্যাবলি আলোচনা কর
সালাহউদ্দিন আইয়ূবীর কার্যাবলি আলোচনা কর |
সালাহউদ্দিন আইয়ূবীর কার্যাবলি আলোচনা কর
- অথবা, সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর কর্মকাণ্ডসমূহ তুলে ধর।
উত্তর : ভূমিকা : সালাহউদ্দিন আইয়ুবী ইসলামের ইতিহাসের এক অন্যতম নাম। আইয়ুবী বংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি ইসলামের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অধিষ্ঠিত রয়েছেন।
দ্বাদশ শতাব্দীতে বিভিন্ন অভিযান প্রেরণ করে ক্রুসেডারদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি মুসলমানদের গৌরব ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন।
সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর কার্যাবলি : সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর কার্যাবলি নিয়ে তুলে ধরা হলো। তার কার্যাবলিকে তিনভাগে ভাগ করা যায়।
১. মিশরীয় যুগ : এ যুগ ১১৬৯ থেকে ১১৭৪ খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। এ সময়ের তিনি বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেন। সেগুলো হলো :
১. আসরীর নেতৃত্বে স্থলপথে ক্রুসেডারদের আক্রমণ প্রতিহত করেন।
২. আফ্রিকার কাফরি সৈন্যদের বিদ্রোহ দমনে তাদেরকে আফ্রিকা হতে নির্বাসন করা হয়।
৩. ১১৭৪ খ্রিস্টাব্দে সিসিল হতে ক্রুসেডারদের বিতাড়িত করা হয়।
২. সিরীয় যুগ : ১১৭৪ থেকে ১১৮৬ খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত সময়কাল ছিল সিরীয় যুগ। ১১৭৪ খ্রিস্টাব্দে সুলতান সালাহউদ্দিন প্রভু নুরুদ্দিন জঙ্গী মারা গেলে তিনি নিজেকে স্বাধীন বলে ঘোষণা দেন।
৩. স্থাপত্যশিল্পের পৃষ্ঠপোষক : সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী স্থাপত্যশিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। তিনি অসংখ্য স্থাপনা নির্মাণ করেন। জ্ঞানীগুণীদের প্রতি তার ছিল অগাধ ভক্তি। তিনি বিদ্বানের সমাদর করতেন, ধার্মিকদের শ্রদ্ধা করতেন এবং প্রজাসাধারণের মঙ্গল চিন্তায় ব্যস্ত থাকতেন।
৪. স্বাধীনতা ঘোষণা : ১১৭৪ সালে খ্রিস্টাব্দে নুরুদ্দনি জঙ্গি মৃত্যুবরণ করলে তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং কায়রোতে রাজধানী স্থাপন করেন।
→ আইয়ুবী বংশ প্রতিষ্ঠা : ফাতেমীয় খলিফা আল-আজিজ মৃত্যুবরণ করলে ফাতেমীয়দের পতন ঘটে এবং আইয়ুবী বংশ প্রতিষ্ঠা করেন।
১. হিট্রিনের যুদ্ধ : সালাহউদ্দিন সামরিক ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখেন ১১৮৭ খ্রিস্টাব্দে ৩ জুলাই শুক্রবার হিট্রিনের যুদ্ধে সালাহউদ্দিন ক্রুসেডদের শোচনীভাবে পরাজিত করেন।
২. তৃতীয় ক্রুসেড ও তার কৃতিত্ব : জেরুজালেম পতনের পর ইংল্যান্ডের রাজা রিচার্ড, জার্মানির রাজা ফ্রেডারিক বারকরোসা এবং ফ্রান্সের রাজা ফিলিপ অগাস্টাস তৃতীয় ক্রুসেড ঘোষণা করেন।
ফ্রিডারিক স্থলপথে একটি সিলিসিয়ান নদী অতিক্রম কালে মারা যান। রিচার্ড ও অগাস্টান প্রাণপণ চেষ্টা করেও জেরুজালেম উদ্ধার করতে না পেরে ১১৯২ সালে সালাহউদ্দিনের সাথে একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হন।
৩. বীরযোদ্ধা : সালাহউদ্দিন ক্রুসেডদের বিরুদ্ধে প্রাণপণ লড়াই সংগ্রাম করে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করেন। শ্রেষ্ঠ বীরের মর্যাদা লাভ করা তাকে গাজী উপাধি দেওয়া হয়।
৪. জ্ঞান বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক : সালাহউদ্দিন আইয়ুবী জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব দেন, তিনি অসংখ্য স্কুল, মাদরাসা, এতিমখানা স্থাপন করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সালাহউদ্দিন আইয়ুবী নিজের একক নিরলস প্রচেষ্টার কারণে একটি বৃহৎ রাজ্য বংশ প্রতিষ্ঠা করেন, সুকৌশলে ও বিচক্ষণতার মাধ্যমে মিশরের ক্ষমতা নিজের আয়ত্তে আনেন ।