সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে সংঘর্ষের বিবরণ দাও
সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে সংঘর্ষের বিবরণ দাও |
সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে সংঘর্ষের বিবরণ দাও
- অথবা, সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে সংঘর্ষগুলো তুলে ধর।
উত্তর : ভূমিকা : দ্বাদশ শতাব্দীতে ক্রুসেডারদের আঘাতে পশ্চিম এশিয়া হতে ইসলাম যখন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিশ্চিহ্ন হওয়ায় পথে, তখন ইসলামের গৌরব ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী।
তার শাসনামলে ক্রুসেডারদের সাথে বিভিন্ন সংঘর্ষ হয়েছে এবং তিনি বীরবেশে তাদের পরাজিত করে মুসলমানদের গৌরব ঐতিহ্যকে সমুন্নত রেখেছেন তার অসাধারণ প্রতিভা, বুদ্ধিমত্তা সামরিক শক্তির সাহায্যে ইসলামের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক শক্তিকে সমুন্নত ও সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার বংশধররাও ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযান করে সফলতা লাভ করেছেন।
→ সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর পরিচয় : সালাউদ্দিন আইয়ুবী ১১৩৮ খ্রিস্টাব্দে টাইগ্রিস নদীর তীরে অবস্থিত তিকরিত নামক স্থানে অনুরাহণ করেন। তার মূলনাম সালাউদ্দিন ইউসুফ।
তার পিতার নাম ছিল নাজিমুদ্দিন আইয়ুব। সালাউদ্দিন একজন কুর্দি ছিলেন। ১১৬৯ সালাউদ্দিন আইয়ুবী মিশরের প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব লাভ করেন।
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে ফাতেমীয় খলিফা আল আমিন মৃত্যুবরণ করলে আইয়ুবী नংশ প্রতিষ্ঠা করেন। ১১৭১ খ্রিস্টাব্দে নুরুদ্দিন মৃত্যুবরণ করলে সালাহউদ্দিন নিজেকে স্বাধীন সুলতান হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি ১১৯৩ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়ার দামেস্তে মৃত্যুবরণ করেন।
গাজী সালাহউদ্দিন ও ক্রুসেড : ১১৭১ খ্রিস্টাব্দে শুরু তৃতীয় ক্রুসেডের সময় সালাহউদ্দিন মুসলমানদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ অবতীর্ণ হন। তিনি ১১৮১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১১৯২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ক্রুসেডারদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হন।
১১৮৭ খ্রিস্টাব্দে ২০ হাজার ফ্রাঙ্ক সৈন্য সহ ফ্রান্স নেতা রেজিন্যান্ডকে শোচনীভাবে পরাজিত করেন। তিনি রেজিন্যান্ডকে বন্দি ও প্রাণদণ্ড দেন।
১১৯২ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় ক্রুসেডে ক্রুসেডারদেরকে কঠোর হস্তে দমন করেন। পরে তারা শান্তি চুক্তিতে আবদ্ধ হন। জেরুজালেমের রাজা গীদ্য লুসিনান্দি ও হিস্তিনের যুদ্ধে সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর নিকট বন্দি হয়েছিলেন।
যার প্রেক্ষিতে তৃতীয় ক্রুসেডে জেরুজালেম পতনের ফলে ইউরোপের খ্রিস্টানদের মাঝে উন্মাদনা সৃষ্টি হয়। ইংল্যান্ডের রাজা রিচার্ড জার্মানির রাজা ফ্রেডারিক বারবারোসো এবং ফ্রান্সের রাজা ফিলিপ অগাস্টাস তৃতীয় ক্রুসেড পরিচালনা করেন।
ফ্রেডারিক সিলিসিয়ান নদীতে ডুবে মারা যান। পরে অগাস্টাস যোদ্ধাদের একত্রিত করে আক্রার দিকে অগ্রসর হন এবং রিচার্ড জেরুজালেম অবরোধ করেন।
কিন্তু সালাহউদ্দিনের দৃঢ়তার কাছে তারা হেরে যায় এবং সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ধ হন। তৃতীয় ক্রুসেড সমাপ্ত হয় ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে। এর পরের বছর ১১৯৩ খ্রিস্টাব্দে সালাহউদ্দিন আইয়ুবী মৃত্যুবরণ করেন ।
→ সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর অবদান : সালাহউদ্দিন আইয়ুবী ইতিহাসের একজন বিখ্যাত বীর এবং মুসলমানদের অস্তিত্ব রক্ষায় একজন অগ্রণী সৈনিক। ক্রুসেডার তথা খ্রিস্টানদের থেকে তিনি জেরুজালেম নগরী উদ্ধার করেন।
তার দুঃসাহসী পদক্ষেপে খ্রিস্টানরা পরাজিত হয়। ঐতিহাসিকগণ মনে করেন ইতিহাসের মোড় পরিবর্তনকারী ক্রুসেড ছিল মুসলমানদের অস্তিত্বের লড়াই।
মোট ৮টি ক্রুসেড সংঘটিত হয়। প্রত্যেকটি ক্রুসেড ছিল একটির সাথে অন্যটির পরিপূরক। সালাউদ্দিন আইয়ুবী ৩য় ক্রুসেডের সময় যে বীরত্ব ও দক্ষতা দেখিয়েছেন যা কখনই ভুলার না। তৃতীয় ক্রুসেডে সালাহউদ্দিন আইয়ুবী ছিলেন একমাত্র মূলনায়ক। তার প্রচেষ্টাই খ্রিস্টানরা পরাজিত হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সালাহউদ্দিন আইয়ুবী ইসলামের ইতিহাসের এক বিশেষ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তার নিরলস প্রচেষ্টা ও কূটনৈতিক কলাকৌশলের মাধ্যমে ক্রুসেডারদের জেরুজালেম পুনরুদ্ধার ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
তিনি ইউরোপের বৃহৎ শক্তিবর্গের বিরোধিতায় নিজ সাম্রাজ্যেকে বৃহৎ রাজ্যে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি যোগ্যতা কৌশলে একটি বৃহৎ রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
ক্রুসেডারদের বারবার আক্রমণের প্রতি রোধে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ইউরোপের খ্রিস্টানদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে তিনি ইসলামের গৌরব ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন । তার অবদান ইসলামে অবিস্মরণীয় ।