সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর চরিত্র কেমন ছিল
সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর চরিত্র কেমন ছিল |
সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর চরিত্র কেমন ছিল
- অথবা, সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর চরিত্র সম্পর্কে যা জান লিখ।
উত্তর : ভূমিকা : একজন প্রজাবৎসল শাসক, ধর্মভীরু, সহজ-সরল অনাড়ম্বর জীবন যাপন ছিল সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ক্রুসেডারদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি মুসলমানদের গৌরব ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন।
→ সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর পরিচয় : সালাউদ্দিন আইয়ুবী ১১৩৮ খ্রিস্টাব্দে টাইগ্রিস নদীর তীরে অবস্থিত তিকরিত নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তার মূলনাম সালাউদ্দিন ইউসুফ।
তার পিতার নাম ছিল নাজিমুদ্দিন আইয়ুব। সালাউদ্দিন একজন কুর্দি ছিলেন। ১১৬৯ সালাউদ্দিন আইয়ুবী মিশরের প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব লাভ করেন।
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে ফাতেমীয় খলিফা আল আদিদ মৃত্যুবরণ করলে আইয়ুবী বংশ প্রতিষ্ঠা করেন। ১১৭১ খ্রিস্টাব্দে নুরুদ্দিন মৃত্যুবরণ করলে সালাহউদ্দিন নিজেকে স্বাধীন সুলতান হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি ১১৯৩ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়ার দামেস্কে মৃত্যুবরণ করেন।
সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর চরিত্র : নিয়ে সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর চরিত্র তুলে ধরা হলো :
১. ধর্মপরায়ণতা : সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী ছিলেন অত্যন্ত আল্লাহভীরু একজন শাসক। তিনি যুদ্ধের ময়দান উটের পিঠে উপবিষ্ট অবস্থায় নামায আদায় করতেন এবং প্রজাদেরকে এ ব্যাপারে উৎসাহিত করতেন।
২. স্বাভাবিক জীবন : সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী অত্যন্ত নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলতেন। প্রচুর ধন-সম্পদ থাকা সত্ত্বেও গরিবদের মতো জীবন যাপন করতেন।
৩. জ্ঞান-বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতা : সালাহউদ্দিন আইয়ুবী জ্ঞান-বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। তিনি ধার্মিক ও জ্ঞানী | লোকদের শ্রদ্ধা করতেন। তার রাজদরবারে পণ্ডিত ব্যক্তিদের আলাদা মর্যাদা ছিল।
৪. উজ্জ্বল মন্ত্রীসভা : সালাহউদ্দিন তার মন্ত্রীসভাকে উজ্জ্বল নক্ষত্রদের সমন্বয়ে সুসজ্জিত করেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- আল কাতিব, ইমামুদ্দিন, আলকাজ আল ইস্পাহানি প্রমুখ।
৫. প্রজাবৎসল শাসক : সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী তার প্রজাদের খুব ভালোবাসতেন। তাদের বিপদে বা যে-কোনো ডাকে তিনি সহজেই সাড়া দিতেন।
প্রজাদের নিপীড়ন নয়, প্রজাদের পালনই ছিল তার শাসনের মূলনীতি। সালাহউদ্দিন আইয়ুবী ছিলেন দরিদ্রদের বন্ধু। কেউ প্রয়োজনে আর্তনাদ করলে তাতে সাড়া দিতেন।
৬. দরিদ্রের বন্ধু : সালাহউদ্দিন আইয়ুবী ছিলেন দরিদ্রদের বন্ধু । প্রজাদের যে কোনো প্রয়োজনে তিনি সহজেই সাড়া দিতেন।
৭. মহানুভবতা : সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী ছিলেন মহানুভব, বদান্যতা, উদারতা মানবতা ছিল তার চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
৮. মানবতা বোধ : গাজী সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর মানবতাবোধের কাছে ইউরোপের ইতিহাস লজ্জিত হয়ে পড়ে। ইউরোপ যখন প্রথম মুসলমানদের কাছ থেকে জেরুজালেম দখল করে তখন মুসলমানদের রক্তের বন্যা বয়ে গেছে।
অথচ সালাহউদ্দিন সুশৃঙ্খলভাবে শান্তিপূর্ণ যুদ্ধের মাধ্যমে জেরুজালেম দখল করেন। এ সময় শুধু বিশ্বাসঘাতক নেতৃবৃন্দকে হত্যা করা হয়।
৯. মানবকল্যাণ : সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী মানবকল্যাণের জনহিতকর অনেক কার্যাবলি পরিচালনা করেছেন। যা তার মানবতাবোধের প্রমাণ বহন করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী নিজের একক নিরলস প্রচেষ্টার কারণে একটি বৃহৎ রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন এবং নিজ যোগ্যতা ও কৌশলের কারণে মিশরের ক্ষমতা নিজের আয়ত্তে আনতে সক্ষম হন। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে বিশ্বের ইতিহাসে তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন।