রবার্ট ক্লাইভ প্রবর্তিত দ্বৈত শাসনব্যবস্থা এবং ফলাফল আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো রবার্ট ক্লাইভ প্রবর্তিত দ্বৈত শাসনব্যবস্থা এবং ফলাফল আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের রবার্ট ক্লাইভ প্রবর্তিত দ্বৈত শাসনব্যবস্থা এবং ফলাফল আলোচনা কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
রবার্ট ক্লাইভ প্রবর্তিত দ্বৈত শাসনব্যবস্থা এবং ফলাফল আলোচনা কর |
রবার্ট ক্লাইভ প্রবর্তিত দ্বৈত শাসনব্যবস্থা এবং ফলাফল আলোচনা কর
- অথবা, রবার্ট ফ্লাইড প্রবর্তিত দ্বৈত শাসনব্যবস্থা এবং দ্বৈত শাসনব্যবস্থার ফলাফল বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে দন্ত ক্লাইড এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। তার একক নেতৃত্ব ও কর্মকুশলতায় ব্রিটিশরা ১৭৫৭ সালে পলাশির প্রান্তরে নবাবের বাহিনীকে পরাজিত করে বাংলার শাসন ক্ষমতার প্রভাব বিস্তারের সূচনা করেন এবং ১৭৬৪ সালের বক্সার যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে তারা ক্ষমতার মূল নিয়ন্ত্রক হয়ে পড়ে।
১৭৬৫ সালে লর্ড ক্লাইভ দ্বিতীয়বারের মতো বাংলার গভর্নর হয়ে এসে শাসন কাঠামোর কিছু সংস্কার সাধন করেন। তিনি কূটকৌশলে বাংলার দেওয়ানি আদায়ের অধিকার লাভ করেন। যার ফলে তার পক্ষে দ্বৈত শাসন প্রবর্তনের একটি সুযোগ আসে।
দ্বৈত শাসনব্যবস্থা : দ্বৈত শাসন অর্থ হল দুজনের শাসন। দ্বৈত শাসন লর্ড ক্লাইভ প্রবর্তিত এক অদ্ভুত শাসনব্যবস্থা। এ ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য ছিল কোম্পানির বাণিজ্যিক মুনাফা বৃদ্ধি।
এ ব্যবস্থায় মূলত নবাব ও কোম্পানির মাঝে ক্ষমতা ভাগ করে নেয়া হয়। এখানে নিয়ামত বা বাংলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ফৌজদারি ও দৈনন্দিন প্রশাসন পরিচালনা ইত্যাদির তার ছিল বাংলার নবাবের হাতে।
আর বাংলার দেওয়ানি তথা রাজস্ব আদায় দেওয়ানি ও জমিজমা সংক্রান্ত বিচারের ভার অর্পণ করা হয়েছিল। কোম্পানির উপর। ফলে দৃশ্যত বাংলার শাসন কাঠামো দুটো আলাদা আলাদা সংস্থার হাতে চলে যায়।
কিন্তু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখতে পাওয়া যায় দ্বৈত শাসন ছিল মূলত রবার্ট ক্লাইভের একটি রাজনৈতিক কূটচাল, এটা ছিল কোম্পানির একটি সাংবিধানিক মুখোশ মাত্র।
এর অন্তরালে প্রকৃত ক্ষমতা চলে যায় মূলত ইংরেজদের হাতে। কেননা কোম্পানির হাতে রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব ন্যস্ত থাকলেও তারা কৌশলগত কারণে রেজা খান ও সিতাব রায়ের মাধ্যমে এই রাজস্ব আদায় করতো।
এর মাধ্যমে তারা দেশি-বিদেশি বণিকদের সমালোচনা থেকে মুক্তি লাভ করে। অন্যদিকে কাগজে কলমে নিযামতের দায়িত্ব নবাবের হাতে থাকলেও তা চলে যায় কোম্পানির দাসানুদাস রেজা খানের হাতে।
আর যেহেতু তারা কোম্পানির আদেশ- নিষেধ ছাড়া কোনো কাজ করতো না। ফলে মূল ক্ষমতা চলে যায় সেই ইংরেজদেরই হাতে।
প্রখ্যাত ঐতিহাসিক পার্সিভাল স্পিয়ার এজন্য দ্বৈত শাসনব্যবস্থাকে Indirect System বলেও অভিহিত করেছেন। এই ব্যবস্থার ফলে নবাব হয়ে পড়েন কোম্পানির পোষণভুক্ত এবং চূড়ান্তভাবে ক্ষমতাহীন
দ্বৈত শাসনের ফলাফল : রবার্ট ক্লাইভ প্রবর্তিত এই ব্যবস্থা সফল হয়নি। কারণ এ ব্যবস্থায় বাংলার নবাব পান ক্ষমতাহীন দায়িত্ব আর কোম্পানি ভোগ করেছিল দায়িত্বহীন ক্ষমতা।
নিম্নে এর ফলাফল বর্ণনা করা হলো :
(ক) প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি : বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার অর্থনৈতিক দায়-দায়িত্ব কোম্পানির হাতে ন্যস্ত হওয়ায় কোম্পানির ডাইরেক্টর ও বণিকরা রাতারাতি প্রশাসকে পরিণত হন।
কিন্তু ভারতীয় রাজস্বনীতি সম্পর্কে কোনো অভিজ্ঞতা না থাকায় তারা ইংল্যান্ডের নীতি এখানে প্রয়োগের চেষ্টা করে। ফলে সৃষ্টি হয় প্রশাসনিক জটিলতা।
(খ) ক্ষমতায় ভারসাম্যহীনতা : দ্বৈত শাসনব্যবস্থায় নবাবের হাতে ক্ষমতা নেই কিন্তু তার উপর প্রচুর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। অন্যদিকে কোম্পানির কর্মচারীরা ভোগ করে দায়িত্বহীন ক্ষমতা। ফলে ক্ষমতার এই ভারসাম্য হীনতার ফলে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় ।
(গ) শাসনের নামে কুশাসন : দ্বৈত শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে কোম্পানির কর্মচারীরা অবাধ লুটপাটে মত্ত হয়ে পড়ে। সারা বাংলার শাসনের নামে শুরু হয় অবাধ শোষণ ।
(ঘ) দুর্নীতির ব্যাপকতা : দ্বৈত শাসনব্যবস্থার প্রবর্তনের ফলে দুর্নীতির বিস্তার ঘটে। কোম্পানির কর্মচারীরা সরকারি দত্তকের অপরাহার করে ব্যক্তিগত বাণিজ্য শুরু করে ফলে দুর্নীতি মাত্রা ছাড়িয়ে যায় ।
(ঙ) জনজীবনে অরাজকতা : নবাবের পক্ষে রেজা খান নিযামতের দায়িত্ব পেলেও কোম্পানির নির্দেশ ছাড়া তিনি কোনো কাজ করতেন না।
তিনি রাজস্ব আদায়ের ব্যাপারে তৎপরতা দেখালেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ব্যাপারে তেমন গুরুত্ব দিতেন না। ফলে সারা দেশে চুরি-ডাকাতি রাহাজানির মাত্রা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায় ।
(চ) রেশম ও তাঁত শিল্পের ধ্বংস : ইংল্যান্ডের বেশি দামের রেশম বস্ত্র শিল্পকে বাংলায় প্রতিযোগিতা থেকে রক্ষা করার জন্য ব্রিটিশ সরকার বাংলার কেনা সস্তা দামের মুর্শিদাবাদী রেশমের কাপড় ইংল্যান্ডে আমদানি নিষিদ্ধ করেন।
এর ফলে রেশমের উৎপাদন হ্রাস পেয়ে তার মূল্য বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া কোম্পানির কর্মচারীদের অত্যাচারের ফলে বাংলার তাঁতি শিল্পীরা তাদের বস্ত্র অর্ধেক দামে বিক্রি করতে বাধা হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, কোম্পানির স্বার্থে প্রবর্তিত দ্বৈত শাসন বাংলার সমাজ ও অর্থনীতির জন্য কোনো সুফল বয়ে আনেনি।
এ ব্যবস্থায় কিছু কিছু অঞ্চলের উন্নতি হলেও বেশিরভাগ অঞ্চল শোষণে নিঃশেষ হয়ে যায়। ফলে অরাজকতা দেখা দিলে ১৭৭২ সালে দ্বৈত শাসনের বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয় ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ রবার্ট ক্লাইভ প্রবর্তিত দ্বৈত শাসনব্যবস্থা এবং ফলাফল আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম রবার্ট ক্লাইভ প্রবর্তিত দ্বৈত শাসনব্যবস্থা এবং ফলাফল আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের রবার্ট ক্লাইভ প্রবর্তিত দ্বৈত শাসনব্যবস্থা এবং ফলাফল আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।