প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে তাম্রলিপির ভূমিকা মূল্যায়ন কর
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে তাম্রলিপির ভূমিকা মূল্যায়ন কর |
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে তাম্রলিপির ভূমিকা মূল্যায়ন কর
- অথবা, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে তাম্রলিপির গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
- অথবা, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে তাম্রলিপির তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।
- অথবা, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে তাম্রলিপির ভূমিকা মূল্যায়ন কর।
উত্তর : ভূমিকা : ইতিহাস রচনার উৎস দুই ধরনের। লিখিত উৎস ও অলিখিত উৎস। তাম্রলিপি হলো অলিখিত উৎসের মধ্যে অন্যতম।
প্রাচীন রাজবংশ সম্পর্কে ভিন্ন তথ্য, জীবনযাত্রা রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ বিবরণ, আইন, বিচার, জীবনযাপনসহ সকল দিক জানার জন্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে, মৃৎপাত্র, লৌহ, বল্লম, তৈজসপত্র, ব্যবহার্য জিনিসপত্র, অলংকার নামক ফলক মুদ্রা, রাক্তির ঠিকানা অঙ্কনের মাধ্যমে তাম্রলিপি সম্পর্কে জানা যায়। এসব তাম্রলিপির মাধ্যমে আমরা প্রাচীন বাংলার ইতিহাস পুনর্গঠন করতে পারি ।
• তাম্রলিপির গুরুত্ব : প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের উত্তা হিসেবে তাম্রলিপির গুরুত্ব অনিস্বীকার্য। এসব তাম্রলিপির মাধ্যমে আমরা প্রাচীন বাংলার ইতিহাস সম্পর্কে জেনে ইতিহাস রচনা করতে পারি।
নিম্নে তা বিশদ আলোচনা করা হলো :
১. জীবনযাত্রা : কোনো এলাকায় কোনো তাম্রলিপি পাওয়া - গেলে সেখানে যেসব তথ্য উপাত্ত পাওয়া যায় তা থেকে সহজেই বুঝা যায় ওই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান কেমন ছিল।
যেমন ওয়ারী বটেশ্বর আবিষ্কারের পর বুঝা যায় এই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত ছিল।
২. ফল-ফসল উৎপাদন : ভিন্ন ব্যবহার্য জিনিস, তাম্রলিপি হতে একথা নিশ্চিত যে ওয়ারী বটেশ্বর আবিষ্কারের পর মানুষ জানতে পারে প্রাচীন বাংলার ওয়ারী বটেশ্বর এলাকার প্রচুর পরিমাণে ফসল উৎপাদন হতো। কারণ ওই এলাকার মাটি ছিল উর্বর। এ কথা আমরা তাম্রলিপির মাধ্যমে জানতে পারি।
৩. দানপত্র : প্রাচীনকালে শাসক যা কাজ করতো তা অংকিত করে রাখতো। এসব দানের বিবরণ ছাছে বা ফলকে অংকন করে রাখতো ওয়ারী বটেশ্বর আবিষ্কারের পর প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে রাজার দানের বিবরণ প্রেক্ষাপট ও পরিমাণ জানা যায়। এসব দান যাতে মুছে না যায় যুগ যুগ ধরে যাতে মানুষ তাকে মনে রাখতে পারে তার জন্য এ অয়োজন
৪. ব্যবসা বাণিজ্য : বর্ধমান জেলার পাণ্ডু রাজার ডিবি আবিষ্কারের পর দেখা যায় সেখানে যেসব প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিস পাওয়া গিয়াছে তাতে স্পষ্ট যে বর্ধমানের সাথে প্রাচীন বাংলার বাণিজ্য হতো।
যেখানে বন্দরের নাম উল্লেখ আছে। যদি এ প্রত্নবন্ধ না পাওয়া যেত তবে বর্ধমানের সাথে যে প্রাচীন বাংলার বাণিজ্য হতো তা জানা যেত না। এসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে প্রাচীন বাংলার ব্যবসা-বাণিজ্যের তথ্য পাওয়া যায়।
৫. রাজা সম্পর্কে ধারণা : প্রাচীন বাংলায় যেসব তাম্রলিপি পাওয়া গেছে সেসব তাম্রলিপি হতে রাজা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। রাজার রাজত্বকাল সম্পর্কে জানা যায়।
বর্ধমান জেলার প্রাপ্ত ভদ্রেশাসন থেকে জানা যায়। এখানে স্বাধীন বঙ্গরাজ্যের উৎপত্তি ছিল। সে সময় বঙ্গরাজ্যের তিনজন রাজার নাম পাওয়া যায় তারা হলো- গোপচন্দ্র, ধর্মাদিত্য ও সমাচার দেব।
৬. রাজার নাম সম্পর্কে জানা : তাম্রলিপি থেকে রাজার নাম সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় কোন রাজা কোন সময় কোন নাম ধারণ করে রাজ্য পরিচালনা করতো এবং রাজার সম্পূর্ণ নাম কি ছিল এসব কিছু তামলিপি হতে আমরা জানতে পারি।
৭. রাজ্য জয় : তাম্রলিপি হতে আমরা জানতে পারি যে, রাজা কোন কোন এলাকা জয় করে তার রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন সে এলাকার নাম সে এলাকার রাজার নাম এবং রাজার কর্মকাণ্ডও আমরা তাম্রলিপি হতে জানতে পারি। তাছাড়াও রাজার কোন কোন অঞ্চলের সাথে চুক্তি হয়েছে চুক্তির বিষয়ও আমরা জানতে পারি।
৮. রাজার উপাধি : একেক রাজা একেক সময় একেক উপাধি ধারণ করে রাজ্য পরিচালনা করত। নিজেদের দেয়া উপাধি হতে পারে প্রাপ্ত উপাধি।
তাম্রলিপি হতে জানা যায় বল্লাল সেন গোরেশ্বর উপাধি, সেন রাজারা অশ্বপতি, নরপতি উপাধি ধারণ করে রাজ্য শাসন করত।
৯. রাজধানী বালপুর : তাম্রশাসন ও ওয়ারী বটেশ্বরে প্রাপ্ত তাম্রশাসন হতে জানা যায় রাজারা যেখান থেকে রাজকাজ পরিচালনা করত তা খুদাই করা থাকত।
যেখান থেকে রাজকাজ পরিচালনা করত তাকে বলা হয় রাজধানী। রাজধানী হলো রাজ্যের কেন্দ্র। বিভিন্ন তাম্রশাসন হতে জানা যায় যে লক্ষণাবর্তী ছিল লক্ষণ সেনের রাজধানী ও রামাবতী ছিল রামপালের রাজধানী।
১০. ভূমিবিষয়ক তথ্য : প্রাপ্ত তাম্রলিপি হতে জানা যায় যে, রাজারা ভূমিবিষয়ক যাবতীয় তথ্য উপাত্ত ধরে রাখতো, কোন অঞ্চলে কি হবে, চাষের জমি কতটুকু থাকবে, মাঠ থাকবে কতটুকু, রাজপ্রাসাদ কতটুকু জমির উপর হবে।
কর আদায় কিভাবে হবে। জমির ব্যবহার এসব উল্লেখ থাকত। এসব আমরা তাম্রলিপির মাধ্যমে জানতে পারি।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, তৎকালীন সময়ে রাজা ও রাজ্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা আমরা তাম্রলিপি হতে পেয়ে থাকি। এসব তাম্রলিপির গুরুত্ব অনেক।
বাংলার ইতিহাস পুনর্গঠন ও ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করার জন্য তাম্রলিপির ভূমিকা অনেক। এজন্য দিন যতই যাচ্ছে ইতিহাস জানার উৎস হিসেবে তাম্রলিপির গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে ।