প্রাচীন বাংলার পুণ্ড্র জনপদের অবস্থান ও সীমারেখা লিখ
প্রাচীন বাংলার পুণ্ড্র জনপদের অবস্থান ও সীমারেখা লিখ |
প্রাচীন বাংলার পুণ্ড্র জনপদের অবস্থান ও সীমারেখা লিখ
- অথবা, প্রাচীন বাংলার পুণ্ড্র জনপদের ভৌগোলিক অবস্থার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।
উত্তর : ভূমিকা : প্রাচীন বাংলায় খণ্ড খণ্ড ভূখণ্ড নিয়ে গঠিত হতো এক একটি জনপদ। বর্তমানের মতো বাংলা নামে একক কোনো দেশ ছিল না।
আলাদা আলাদা ভাগে বিভক্ত ছিল সমগ্র বাংলা। প্রত্যেক বিভক্ত অংশকে বলা হত জনপদ। এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জনপদ ছিলো পুণ্ড্র জনপদ ।
→ পুণ্ড্র জনপদ : গঙ্গা নদীর পূর্বভাগে পুণ্ড্রবর্ধন নামে একটি জনপদ ছিল। এর রাজধানীর নাম পুণ্ড্রনগর। বর্তমানে এই স্থানটি মহাস্থানগড় নামে খ্যাত।
এই জনপদের দক্ষিণে পদ্মা, পূর্বে করতোয়া (মতান্তরে যমুনা) এবং পশ্চিমে গঙ্গা নদী ছিল। এই বিচারে পুণ্ড্রবর্ধনের ভিতরে প্রায় সমগ্র উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ অঞ্চলই পুণ্ড্রবর্ধনের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এই বিচারে রাজশাহী, প্রেসিডেন্সি, ঢাকা ও চট্টগ্রাম- বাংলার ভূতপূর্ব এই চারটি বিভাগ কোনো না কোনো সময়ে পুণ্ড্রবর্ধন রাজ্যের অন্তর্গত ছিল।
রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতো পুণ্ড্র একটি প্রাচীন জাতিমূলক নাম। এরা উত্তরবঙ্গে বাস করতো। এই কারণে এ অঞ্চল পুণ্ড্রদেশ ও পুণ্ড্রবর্ধন নামে খ্যাত ছিল।
ঐতরেয় ব্রাহ্মণ মতে পুণ্ড্ররা আরব্যভূমির প্রাচ্য-প্রত্যন্ত দেশে বসবাস করতো। বৌধায়ন ধর্মসূত্রে উল্লেখ আছে, পুণ্ড্ররা বঙ্গ এবং কলিঙ্গ দেশের প্রতিবেশী ছিল।
ঐতিহাসিক নীহারঞ্জন রায় মন্তব্য করেছেন, পুণ্ড্রদের আবাসভূমি ছিল মুঙ্গেরের পূর্বদিকে এবং কাশীতীর সংলগ্ন।
খ্রিষ্টপূর্ব ৩১০ অব্দের দিকে এই অঞ্চল নন্দরাজের শাসনাধীন ছিল। পরে নন্দরাজকে পরাজিত করে চন্দ্রগুপ্ত পাটলীপুত্রের রাজা হন। এই সময় পুণ্ড্রবর্ধন চন্দ্রগুপ্ত-এর শাসনাধীনে আসে।
গুপ্তবংশের রাজত্বকালে পুণ্ড্রবর্ধন একটি প্রদেশে পরিণত হয়। প্রশাসনিক সুবিধার জন্য পুরো পুণ্ড্রবর্ধনকে কয়েকটি বিভাগ (জেলা) ভাগ করা হয়।
প্রতিটি বিভাগ আবার বীথি ও মণ্ডল নাম প্রশাসনিক অঞ্চল ভাগ করা হয়। এই সময় পুণ্ড্রবর্ধন শাসিত হতো প্রাদেশিক শাসনকর্তার দ্বারা।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পুণ্ড্রবর্ধন জনপদটি সুপ্রাচীন এক জনপদ। এ জনপদের সীমানা নিয়ে বিতর্ক ছিল এবং আছে। তারপরও জনপদ থেকে আমরা ইতিহাস রচনার জন্য অনেক তত্ত্ব জানতে পারি।