প্রাচীন বাংলার প্রধান প্রত্নতাত্ত্বিক উৎস সমূহ কি কি

প্রাচীন বাংলার প্রধান প্রত্নতাত্ত্বিক উৎস সমূহ কি কি
প্রাচীন বাংলার প্রধান প্রত্নতাত্ত্বিক উৎস সমূহ কি কি

প্রাচীন বাংলার প্রধান প্রত্নতাত্ত্বিক উৎস সমূহ কি কি

  • অথবা, বাংলার প্রাচীনকালের উৎসগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

উত্তর : ভূমিকা : বাংলার ভূমিতে বহু প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন জাতি, গোষ্ঠী, ধর্মের মানুষের শাসন ক্ষমতা পরিচালিত হয়েছে এবং বিভিন্ন ধরনের মানুষের বসবাস ছিল। 

এ সকল বসবাস ও রাজত্বকালের সভ্যতা-সংস্কৃতি এক ও অভিন্ন ছিল না। বিভিন্ন সময়ের সভ্যতার নিদর্শনকে বর্তমান সময়ে প্রত্নতত্ত্ব হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। 

এ সকল ঐতিহাসিক নিদর্শন ও ধ্বংসাবশেষ হলো বর্তমান বাংলার প্রত্নতাত্ত্বিক উৎস। এ সকল প্রত্নতাত্ত্বিক উৎসের মধ্যে ভিন্নতা ও প্রকার রয়েছে যেগুলো বাংলার প্রাচীন ইতিহাসের সঠিক ঘটনাকে উন্মোচন করে ।

[] প্রাচীন বাংলার প্রধান প্রত্নতাত্ত্বিক উৎস : প্রাচীন বাংলার প্রত্নতাত্ত্বিক উৎসের মধ্যে রয়েছে প্রাচীন লিপি, মুদ্রা, স্থাপত্য ভাস্কর্য-এর নিদর্শন ও ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষ ইত্যাদি। 

নিম্নে এগুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো : প্রাচীন বাংলার প্রত্নতাত্ত্বিক উৎসসমূহকে কয়েকভাগে ভাগ করা যায়। যথা :

১. লিপি, 

২. মুদ্রা

৩. স্থাপত্য ও ভাস্কর্য বা প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ।

১. লিপি : পাথর, তামা, লোহা, ব্রোঞ্জ ও পোড়ামাটির উপর খোদাই করা লিপি থেকে তৎকালীন রাজনৈতিক আর্থসামাজিক এবং ধর্মীয় জীবনযাত্রার পরিচয় পাওয়া যায়। 

সেজন্য লিপিকে ইতিহাসের জীবন্ত দলিল বলে অভিহিত করা হয়। এটি বাংলার প্রধান একটি প্রত্নতাত্ত্বিক উৎস। 

সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সাহিত্যের ভাষা ও বক্তব্যের পরিবর্তন ঘটলেও লিপি সবসময় অপরিবর্তিত থাকে বা তথ্য বিকৃতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। 

লিপিকেও দুইভাগে ভাগ করা যায়- 

(ক) দেশীয় লিপি ও 

(খ) বিদেশি লিপি।

(ক) দেশীয় লিপি : গ্রান্থি, খরোষ্ঠী, তামিল, পালি, সংস্কৃত, প্রাকৃত প্রভৃতি বহু ভাষায় লেখা প্রাচীন বাংলার লিপিগুলোর প্রধান বিষয়বস্তু ছিল প্রাচীন রাজাদের রাজাজ্য, রাজপ্রশস্তি, ভূমিদান, শাসন, ধর্ম, রাজনৈতিক ঘটনা, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভৃতি।

(খ) বিদেশি লিপি : এশিয়া মাইনর, কম্বোডিয়া, চম্পা, যবদ্বীপ, গ্রিস ও পারস্য প্রভৃতি বৈদেশিক অঞ্চলগুলো থেকে পাওয়া লিপিগুলো থেকে এইসব অঞ্চলের সঙ্গে প্রাচীন বাংলার সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের ইতিহাস পাওয়া যায়।

২. মুদ্রা : প্রাচীন বাংলার প্রত্নতাত্ত্বিক উৎসের মধ্যে মুদ্রা একটি প্রধান উৎস। মুদ্রা থেকে রাজার নাম ও সাল-তারিখ জানা যায়। মুদ্রার মাধ্যমে জানা যায় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও ধাতুবিদ্যার উৎকর্ষতা, মুদ্রার অঙ্কিত চিত্রের মাধ্যমে সেই সময়ের রাজার গুণাবলি সম্পর্কে ধারণা করা যায়। 

যেমন- সমুদ্রগুপ্তের মুদ্রায় বীনাবাদনরত মূর্তি থেকে তার সঙ্গীতানুরাগের পরিচয় পাওয়া যায়। ব্যাকন্দ্রীয়, গ্রিক, শাক, কুমান রাজাদের কাহিনি মুদ্রা থেকেই পাওয়া যায়। 

সাতবাহন সাম্রাজ্যের ইতিহাসের অন্যতম প্রধান উপাদান হলো মুদ্রা। তবে গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর থেকে ঐতিহাসিক উৎস হিসেবে মুদ্রার গুরুত্ব কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।

৩. স্থাপত্য ও ভাস্কর্য বা প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ : প্রাচীন নগরের ধ্বংসাবশেষ, স্মৃতিসৌধ, মন্দির, স্থাপত্য, ভাস্কর্য ইত্যাদি বাংলার অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক উৎস। 

বাংলার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপত্যশিল্পের মধ্যে রয়েছে মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার, ময়নামতি, লালবাগ দুর্গ, আহসান মঞ্জিল, বড় কাটরা, ছোট কাটরা, সোনারগাঁ, কান্তজীর মন্দির, ষাট গম্বুজ মসজিদ, বিভিন্ন অলি-আউলিয়াদের মাজার।

অন্যান্য উৎসসমূহ : বাংলার প্রত্নতাত্ত্বিক উৎসসমূহের মধ্যে বিভিন্ন ঐতিহাসিক যুদ্ধের ঘটনাস্থল, রাজা, বাদশাহদের বসবাসের গৃহ, বিভিন্ন প্রাচীন পণ্ডিতের গবেষণাস্থল বা আশ্রম ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলার প্রত্নতত্ত্বের উৎসের কোনো অন্তঃ নেই তবে প্রধান প্রধানগুলো উল্লিখিত হয়েছে। এ সকল উৎস থেকে প্রাচীনকালে বাংলার আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া যায়। 

সে সময়ে শাসক ও জনগণের অবস্থা জনসাধারণের জীবন প্রণালি, শিক্ষা-দীক্ষার অবস্থা এ সকল উৎস বাংলাকে পরিপূর্ণভাবে উপলব্ধি ও ইতিহাসের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করার নির্ভরযোগ্যতা লাভ করা যায়। 

Next Post Previous Post
1 Comments
  • Anonymous
    Anonymous 12 November

    বই কিনিনাই তাই প্রশ্নটা পরে উপকৃত হলাম। ধন্যবাদ আপনাকে।

Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ